১৭৩০ সালে কাউন্টেস দারিয়া সাল্টিকোভা মস্কোর ধর্ণাঢ্য এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মীয় বিভিন্ন কাজে নিয়মিত মন্দিরে গিয়ে পূজা অর্চনা দেয়ার মধ্য দিয়েই তার ছোটবেলা কেটেছে। এরপর পারিবারিকভাবে গ্রেব সাল্টিকোভের সঙ্গে তার বিয়ে হয় অল্প বয়সেই।
তার স্বামী ছিলেন রাজপরিবারের ছোট ছেলে। তখন পুরো রাজ্যই সামলাচ্ছিলেন গ্রেব। সাল্টিকোভার যখন ২৬ বছর অর্থাৎ ১৭৫৫ সালে তার স্বামী মারা যান। পুরো রাজ্য ভার চলে আসে তার উপর। ৬০০ জন ক্রিতদাস-দাসী ছিল তার দেখাশুনার জন্য। পাশাপাশি এত বড় রাজ্যের রানী তিনি। এত সব পেয়ে তিনি তখন খুশিতে উন্মাদ প্রায়। হঠাৎই তার আচরণে পরিবর্তন আসে।
১৮ শতকের দিকে রাশিয়ায় ক্রিতদাসদের উপর অত্যাচারের প্রথা ছিল সাধারণ বিষয়। তবে যে নারী সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি এই বিষয়টি স্রেফ আনন্দ উপভোগের জন্য করতেন।
কারণে কিংবা অকারণে ক্রিতাদাসদের উপর নির্যাতন করা শুরু করলেন তিনি। তার ভয়ে তটস্থ থাকত সবাই। এই বুঝি কারো প্রাণ গেল!
তিনি যুবকদের ফুটন্ত পানিতে ফেলে হত্যা করতেন। এমনকি বাদ যেত না গর্ভবতীরাও। তাদের পেটে লাথি মেরে এবং চাবুকাঘাত করে হত্যা করতেন অত্যাচারী এক নারী। তিনি তার ক্ষমতা মাকড়সার জালের মতো চারদিকে ছড়িয়ে রেখেছিলেন। যুবক-যুবতী থেকে বিধবা বা বৃদ্ধ কেউই তার হাত থেকে রক্ষা পেত না।
বিভৎস এসব দৃশ্য দেখে তিনি হাসতেন। তার মধ্যে দয়া মায়ার বালাই ছিল না। গর্ভবতী নারীদেরও ছাড়তেন না তিনি। তাদের পেটে লাথি মারতে মারতে হত্যা করতেন মা ও শিশুকে। এভাবে প্রায় ১৩৮ ক্রিতদাস-দাসীকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করেছেন তিনি। একজন উচ্চ শ্রেণির সিরিয়াল কিলার ছিলেন সাল্টিকোভা।
একদিন তার এক ক্রিতদাস আরেক গর্ভবতী দাসীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। অতঃপর রেগে গিয়ে অত্যাচারী এই নারী চাবুকের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় গর্ভবতী নারীকে। যন্ত্রণায় যখন ওই নারী কাতরাচ্ছেন তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা দিতে সাল্টিকোভার নির্দেশে আরেকজন পেটের উপর উঠে নাচতে শুরু করে।
এছাড়াও নবজাতক বাচ্চাদের আগুনে পুড়িয়ে মারা ছিল তার নেশা। এমনকি ঠাণ্ডার মধ্যে নগ্ন অবস্থায় অনেক মানুষকেই রাখা হত। যতক্ষণ না তারা মৃত্যুবরণ করতেন। নির্যাতনের এসব নমুনা দেখে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তেন। তিনি এসব দেখে নিজের আত্মাকে শান্তি দিতেন। কারণ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মোটেই সুখী ছিলেন না।
এরই মাঝে তার এই অনাচার অত্যাচার সহ্যের সীমার বাঁধ ভেঙে গেলে কিছু দাস ও দাসী কাউন্টেস দারিয়া সাল্টিকোভার অত্যাচারের কথা পুলিশ কে জানায়। আর দারিয়া সাল্টিকোভা সেই পুলিশদের ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন, এবং যারা অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলো তাদের হত্যা করেন।
এপ্রিল ১৭৬২
দারিয়া সাল্টিকোভার দুই কর্মচারী সাখভেলি মার্টিনভ এবং এরমোলে ইলিন, দারিয়ার অত্যাচারের কথা রাশিয়ার জারের রাণী দ্বিতীয় ক্যাথরিনকে জানাতে সেন্ট পিটার্সবার্গের রাজপ্রসাদে যান। সেই দুই কর্মচারী দারিয়ার সকল নির্যাতন ও অনাচারের কথা ও তাদের দুর্দশার কথা খুলে বলেন। সেসব শুনে সম্রাজ্ঞী এই ব্যাপারে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
১৩৮ টি মানুষ হত্যার তদন্ত
স্টেপান ভলকভ তখন প্রধান তদন্তকারী অফিসার তিনি কাউন্টেস দ্বারা হত্যার তদন্ত করতে উঠেপড়ে লাগেন। ১৩৮ জন নিখোঁজ মানুষের দেহাবশেষ তিনি খুজে পাননি। সব মিলিয়ে তিনি ৩৮ খুনের অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ১৭৬২ সালে তাকে তাকে গ্রেপ্তার করার আদেশ দেন। সালটিকোভা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন কিন্তু তিনি তার কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়েছে তা বলে স্বীকার করেন নি।
অবশেষে, ১৭৬৮ সালের অক্টোবরের ২ তারিখ দারিয়া সাল্টিকোভাকে মস্কের ইভানভস্কি ক্লোস্টারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
দারিয়া সাল্টিকোভা কে একটি ভূগর্ভস্থ অন্ধকূপে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তার কক্ষে মাঝেমধ্যে ২/১ টা মোমবাতি দেয়া হতো অন্ধকার দূর করার জন্য। বাহিরের আলো-বাতাস সেখানে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ ছিলো না। আর ছোট এক খুপরি দিয়ে তাকে তার কক্ষে খাবার দেয়া হতো। আর তার সাথে কাউকে যোগাযোগেরও অনুমতিও দেওয়া হয়নি।
১৭৭৯ সালে দীর্ঘ ১১ বছর অন্ধকার কূপে থাকার ফলে তার চোখ অন্ধ হয়ে যায় এবং তাকে একটি আলাদা সেলে স্থানান্তর করা হয়। আর ৭১ বছর বয়সে দারিয়া সাল্টিকোভা সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে মারা যান।
তথ্যসূত্র:
https://russiapedia.rt.com/prominent-russians/history-and-mythology/darya-saltykova/
https://murderpedia.org/female.S/s/saltykova-darya.htm
https://www.ancient-origins.net/history-famous-people/darya-saltykova-0014028