যুগে যুগে সংস্কৃতির বিকাশ বা পরিবর্তন হয়; এটি একটি অনস্বীকার্য সত্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এমনই কিছু প্রথা বা সংস্কৃতি প্রচলিত ছিলো যা ছিল উদ্ভট, বেদনাদায়ক ও বিপজ্জনক।
তেমনই ইতিহাসের ৫ টি অদ্ভুত প্রথা নিয়ে আজকের এই নিবন্ধন
স্ত্রী কে কুস্তি লড়াইয়ে হারাতে পারলে তবেই বিয়ে করতে পারবেন
চেঙ্গিস খানের বংশধরদের মধ্যে একটি প্রথা প্রচলিত ছিলো। একজন পুরুষ যে নারীকে বিয়ে করতে চাইবে, বিয়ে করার আগে সেই নারীর সাথে কুস্তি লড়ে সেই নারীকে হারাতে হবে।
মধ্যযুগে খুতুলুন নামের একজন মঙ্গোলীয় নারী ছিলেন। তাকে বিয়ে করতে এসে নাকি অনেক পুরুষ লড়াইয়ে হেরে বিদায় নিয়েছে। কথিত আছে যে খুতুলুন ১০০০ হাজারের অধিক পুরুষ কে কুস্তি খেলায় হারিয়েছেন।
নারীকে চুম্বন করে দেখা হতো মদ খেয়েছে কিনা!
“ius osculi” বাংলায় যার অর্থ “চুম্বনের অধিকার”, প্রাচীন রোমে আইন দ্বারা এই প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল।
এই আইনের তথ্যমতে একজন মহিলাকে প্রতিদিন তার স্বামী, বাবা এবং ভাইকে চুমু খাওয়ার কথা ছিল।
এই চুমু খাওয়াটা আপাতদৃষ্টিতে দেখে স্নেহপূর্ণ ও ভালোবাসা মনে হলেও তা নয়! চুমু খাওয়া নারী মদ পান করেছেন কিনা তা দেখার জন্যই এই চুমু খাওয়া হতো।
প্রাচীন রোমের আইনে মহিলাদের মদ পান কে ব্যভিচারের দৃষ্টিতে দেখা হতো। আর তখন এই অপরাধের জন্য শাস্তি মৃত্যুদন্ডযোগ্য ছিলো।
মদ পান করা সেই নারীকে সেই সময়ের রোমান পুরুষরা তাদের নিকটতম আত্মীয়দের সম্মতিতে হত্যা ও করতে পারতো।
এই নিষেধাজ্ঞা আইন কেবল শুধুমাত্র সৎ নারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু কুখ্যাত প্রব্রোসদের জন্য প্রযোজ্য ছিলো না। যেমনঃ অভিনেত্রী, নর্তকী, সরাইখানায় কাজ করা মহিল।
সেই সময়ে এই অদ্ভুত আইনের কারণ হিসেবে ধরা হয়, মদ পান ও মাতালতা নারীর গর্ভনিরোধক ও গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট করে।
খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস নামের একজন ইতিহাসবিদ লিখেছিলেন,
❝যে নারী মদের প্রতি অত্যাধিক লোভী, সে পূণ্যের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়, এবং পাপের দরজা খুলে দেয়।❞
জার্মানির মধ্যযুগের বিচার ব্যাবস্থা
জার্মানিতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝামেলা বাধলে সেটা আইনগতভাবেই মারামারি করে সমাধানের উপায় ছিল! এ জন্য অবশ্য কিছু নিয়ম কানুন ছিল। যেমন- প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষেরা নারীদের থেকে বেশি শক্তিশালী। তাই এমন অবস্থায় মারামারিতে ছেড়ে দিলে স্বামীদের জেতার সম্ভাবনাই যে অনেক বেড়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই সমস্যা দূরীকরণে স্বামীকে একটি গর্তে আবদ্ধ রাখার পাশাপাশি তার একটি হাতও পেছনের দিকে বেধে রাখা হতো। ফলে তাকে লড়তে হতো একহাতে, একস্থানে থেকেই। ওদিকে স্ত্রী থাকতো মুক্ত। দুজনের হাতেই দেয়া হতো দুটো মুগুর।
হাই হিলের জুতা পুরুষদের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল!
হাই হিলের জুতা পুরুষদের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং সেগুলি হাঁটার জন্য তৈরি করা হয়নি।
হাই হিল জুতা ঠিক কবে আবিষ্কৃত হয়েছিলো তার সঠিক ইতিহাস কারো জানা নেই। তবে প্রাচীন গ্রীকের অভিনেতারা এই হাই হিলের জুতা পরিধান করতেন। বলা হয়ে থাকে যে এই জুতাগুলোর উচ্চতা মঞ্চে চিত্রিত বিভিন্ন চরিত্রের সামাজিক শ্রেণী এবং গুরুত্বকে আলাদা করতে সাহায্য করেছিল।
তবে এটা ঠিক কতোটা সত্যি তা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে।
তবে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ইতিহাস হচ্ছে, ১৫ শতকে পারস্যের সৈন্যরা প্রথম এর ব্যবহার শুরু করে। উঁচু হিলের জুতা একজন সৈনিককে ঘোড়ার রেকাবে পা যথাযথভাবে আটকে রাখতে সহায়তা করতো। ফলে সৈন্যরা তাদের লক্ষ্যের দিকে আরো কার্যকরভাবে তীর ছুঁড়তে পারতেন। আর তাছাড়া তখন একজন দক্ষ সৈনিককে অস্ত্রের পাশাপাশি অশ্বচালনাতেও দক্ষ হওয়া লাগতো।
হাই হিলের পরবর্তী রূপ দেখতে পাওয়া যায় মধ্যযুগের ইউরোপে। এই সময়ে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই এক ধরণের পাদুকা/ জুতা পরতেন যা প্যাটেন নামে পরিচিত।
মধ্যযুগের ইউরোপের শহরের রাস্তাগুলো থাকতো খুবই নোংরা। এই জুতাগুলো সে সময়ে বেশ ব্যায়বহুল ছিলো, তবুও সে সময়ে মানুষ এই জুতা পরিধান করতো যাতে এই জুতা পড়লে রাস্তায় হাটার সময় কাপড় রাস্তার নোংরা কে স্পর্শ করতে না পারে।
ধারণা করা হয় এভাবেই হাই হিল জুতো ধীরে ধীরে নারীদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা নিয়ে সন্দেহ নেই যে হাই হিল জুতার ব্যবহার সর্বপ্রথম পুরুষেরাই করতেন।
হাতির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড
অতীতে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে হাতির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার প্রচলন ছিল, এর ব্যবহার যুদ্ধেও হতো।
শাস্তির এই পদ্ধতি ব্যবহারের ঘটনা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতেও হতো তার বেশ কিছু উদাহারণ প্রাচীন সূত্রে পাওয়া গেছে। তবে এই পদ্ধতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতে বেশি ব্যবহৃত হত।
মৃত্যুদণ্ডের এই রূপটি গুঙ্গা রাও নামেও পরিচিত ছিলো এবং ১৯ শতক পর্যন্ত এর ব্যবহার অব্যাহত ছিল।
ভারতে ব্রিটিশদের শাসন এবং ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও সচেতনতার ফলে এই নৃশংস পদ্ধতির শাস্তি প্রথা হ্রাস পায়।