You are currently viewing আলুর ইতিহাস: আলুকে মনে করা হতো শয়তানের আপেল

আলুর ইতিহাস: আলুকে মনে করা হতো শয়তানের আপেল

আজকের দিনে আলু ছাড়া জীবন অসহায়। যে কোনো খাবারের আলুর মিশ্রণ থাকবেই। তবে শুনে হয়তো অবাক হবেন ইউরোপীয়রা একটা দীর্ঘ সময় আলু খেতে ভয় পেতো। আপনার মন কি এ ব্যাপারে জানতে খচমচ করছে? চলুন একটু ইতিহাসের পাতায় ডুব দেই…

ইতিহাসের পাতা উল্টােলে দেখায় যায় আলুর উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১০ হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে।

১৬ শতকে স্প্যানিশরা এই আলুকে সর্বপ্রথম ইউরোপে নিয়ে আসে। তবে আলু খাওয়া শিখতে ইউরোপীয়দের লেগে গেছে ২ শতাব্দী! ১৮ শতকে আলু ইউরোপে প্রচুর জনপ্রিয় হয়ে উঠে, সাথে এই গ্রহের প্রধান খাদ্যর একটি।

শুরুতে, আলু জনপ্রিয় ছিল না। মানুষজনের আলুকে এড়িয়ে যাওয়ার অনেক কারণ ছিল।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় স্প্যানিশরা বিশ্বাস করত যে আলু তাদের জন্য অযোগ্য এবং শুধুমাত্র নেটিভ আমেরিকানদের খাওয়া উচিত।

অনেকে আবার বিশ্বাস করতো আলুগুলো খ্রিস্টান নয়। এগুলো খেলে পাপ হবে।
হাসি পাচ্ছে এসব শুনে?
তাহলে আরো শুনুন, রাশিয়ানরা এই আলুকে বলতো শয়তানের আপেল! চমকে যাচ্ছেন? চমকে যাবার মতোই তথ্য বটে।
যেহেতু আলু মাটির নিচে জন্মাতো তাই রাশিয়ানদের মনে এমন উদ্ভট চিন্তা ভর করেছিল, শয়তানের আপেল খাওয়া মানে শয়তান কে সঙ্গ দেওয়াই তাই রাশিয়ানরা আলু থেকে সবসময় দূরেই রেখেছে।

ফ্রান্সে ১৭৪৮ সাল থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত আলু অবৈধ ছিল। ফরাসিরা বিশ্বাস করতো আলু মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে কুষ্ঠ রোগ!

ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেণ্ট ভ্যানগগ এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম আলু খাদক। Photo credit: Wikimedia Commons

ইউরোপে দীর্ঘ একটা সময় আলু কেবল পশু প্রাণীদের খাদ্য ছিলো। খাদ্য হিসেবে প্রাণীদের এটা বেশ পছন্দের ছিল।
অল্প জায়গায় অধিক ফলনের ফলে বিশেষ করে ১৮ ও ১৯ শতকে কোটি মানুষকে ক্ষুধা থেকে মুক্তি দিয়েছে আলু। আর সময় বাড়ার সাথে সাথে আলু হয়ে উঠেছে মানুষের রন্ধনপ্রণালীর একটি প্রধান উপাদান।

আলু প্রতি একরে ১৪ মিলিয়ন ক্যালরি দেয় যেখানে গম দেয় ৪ মিলিয়ন ক্যালোরি। ক্যালোরি ছাড়াও, তাদের প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার এবং এমনকি ভিটামিন সি রয়েছে।

দেহকে শক্তিশালী করতে বিশেষ করে প্লীহা আর পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে আলু বিশেষ কার্যকর। এছাড়াও বৃক্কের কার্যক্ষমতায় ঘাটতির সমস্যায় এই উদ্ভিদ কাজে লাগে। রাতকানা রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রাণীর, বিশেষ করে খাসির কলিজার সাথে মিষ্টি আলু খাওয়াতে হয়। গ্রামে, এমন কি শহরেও আগুনে পুড়িয়ে কিছুটা পোড়া পোড়া করে মিষ্টি আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। এই পদ্ধতি সাধারণ সর্দি-কাশির উপশমে কার্যকর।

আরো পড়ুন:  ব্ল্যাক ডেথ : মধ্যযুগের ইউরোপের ভয়াবহতা

প্রুশিয়ান (বর্তমানে এটি জার্মানির একটি অঙ্গরাজ্য) রাজা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট (১৭১২-১৭৮৬) এবং ফরাসি ফার্মাসিস্ট আন্টোইন পারমেন্টিয়ার (১৭৩৭-১৮১৩) সর্বপ্রথম আলুর উৎপাদন ও সম্ভাবনা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্ররিশ্রম করেছেন। তারা মানুষের মধ্যে আলুর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা গুলো ভাঙতে চেয়েছিলেন।

রাজা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট আলু চাষের জন্য আদেশ জারি করেছিলেন,এজন্য তিনি ‘পটেটো কিং’ উপাধি মানু আলু রাজা ডাকনাম অর্জন করেছিলেন। নিজেকে “আলু রাজা” ডাকনাম অর্জন করেছিলেন।

রাজা ফেড্রিক আলু চাষের তদারকি করছেন।credit: Wikimedia Commons

ফরাসি সেনাবাহিনীর ফার্মাসিস্ট এন্টোইন পারমেন্টিয়ার সাত বছরের যুদ্ধে (১৭৫৬-১৭৬৩) প্রুশিয়ানদের দ্বারা বন্দী হন। কারাগারে থাকাকালীন, তাকে আলু খাওয়ানো হয়েছিল এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে আলু মোটেও বিষাক্ত নয়। মুক্তি পেয়ে ফ্রান্সে ফিরে আসার পর, আলুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

ফার্মাসিস্ট এন্টোইন পারমেন্টিয়ার credit: Wikimedia Commons

পারমেন্টিয়ার বেশ কিছু কৌশল ব্যবহার করেছিলেন যেমন আলুর চাষ বাড়ানো এবং আলু ক্ষেত পাহারা দেওয়ার জন্য সৈন্য নিয়োগ করা। যাতে লোকজনের মনে হতে থাকে আলু খুবই মুল্যবান একটি খাদ্য।

এমনকি তিনি বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মতো উল্লেখযোগ্য অতিথিদের সাথে বিখ্যাত ডিনারের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে খাবার হিসেবে শুধুমাত্র আলু পরিবেশন করা হয়েছিল।

আলু সম্পর্কে প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের এমন ধ্যানধারনা হওয়ার মূল কারণ ছিলো, এটি সম্পূর্ণ

এককালে ফ্রান্সে, আলু অবৈধ ছিল। আজকাল, তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় আলুর খাবারের নাম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

জাতিসংঘ এফএও-এর রিপোর্ট মতে সারা পৃথিবীতে আলু উৎপাদন ২০১৩ সালে ছিল ৩৬৮ মিলিয়ন টন। একজন ব্যক্তি প্রতিবছর প্রায় ৩৩ কেজি আলু খায়।

Featured image Courtesy: BASF