You are currently viewing ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত ৩ টি রহস্যময় ঘটনা; যা কখনো সমাধান হয়নি

ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত ৩ টি রহস্যময় ঘটনা; যা কখনো সমাধান হয়নি

সত্য খুঁজে বের করার সহজাত প্রবৃত্তি বা ইচ্ছে দুটোই মানব জাতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ইতিহাসে এমন সব ঘটনা ঘটে গেছে সেসব ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যি আমরা শত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সত্য খুঁজে বের করতে পারিনি। সময়ের সাথে সাথে সেসব বিষয়ে আরো নিত্য নতুন থিউরি কিংবা মতবাদ যুক্ত হয়েছে ফলে ঘটনাগুলো হয়ে উঠেছে আরো রহস্যময়।

আজ তেমনই ইতিহাসের ৩ টি রহস্যময় ঘটনার কথা সম্পর্কে জানাবো। ইতিহাসের পাতায় হাজারো অসমাপ্ত রহস্যময় ঘটনা রয়েছে। তবে আমার জানা বা পড়া ঘটনাগুলোর মধ্যে এগুলো সবার উপরের দিকেই থাকবে।

১. দ্য ম্যান ইন দ্য আয়রন মাস্ক 

তাকে বলা হয় ফ্রান্সের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় ব্যক্তি। ১৬৯৮ সালে একজন অজানা ব্যক্তিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গে স্থানান্তর করা হয়। এই নতুন বন্দী ইতিমধ্যেই অন্যান্য কারাগারে বহু বছর ধরে বন্দী ছিলেন।

তার পরিচয়ের ব্যাপারে এতোটাই সতর্ক থাকা হয়েছিলো যে কাউকে তার পরিচয় জানতে দেওয়া হয়নি। কারাগার থেকে স্থানান্তর করার সময় তাকে কালো মুখোশ পরিয়ে স্থানান্তর করা হতো। এছাড়া সবসময় তাকে একটি লোহার মুখোশ পড়ে থাকতে হতেো, এমনকি খাওয়া কিংবা ঘুমানোর সময়েও। তার পরণের কাপড়চোপড়ে আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিলো। তিনি গিটারও বাজাতে পারতেন। অনেকে বিশ্বাস করতেন তিনি কোনো অভিজাত ব্যক্তি।

Photo Courtesy: Defrosting cold case

রহস্যময় এই ব্যক্তি ১৭০৩ সালে বাস্তিল দুর্গে মারা যান। তার মৃত্যুর পর বছরের পর বছর ধরে তার পরিচয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি হতে থাকে। গুজব ছিলো বন্দী লোকটির সাথে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের সম্পর্ক ছিল। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার সেই কারাগারের বন্দীদের প্রশ্ন করেছিলেন; তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরণো কয়েদিরা দাবি করেছিলেন বন্দী লোকটি রাজা লুইয়ের অবৈধ সৎ ভাই।

এই তত্ত্বের বিপরীতে অনেকে যুক্তি দিয়েছিল যে বন্দী লোকটি আসলে রাজা লুই এর পুত্র লুই ডি বোরবন, যিনি একজন ছিলেন সমকামী। তিনি সমকামী এটা প্রমাণ হওয়ার পর রাজপ্রাসাদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আর তাই নিজের বাবার অনুগ্রহ পেতে তিনি রাজা লুইয়ের হয়ে ফ্ল্যান্ডার্সে (বতমানে বেলজিয়ামের অংশ) প্রচারাভিযানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা অনুমান করেন যে তিনি আসলে বেঁচে ছিলেন এবং গোপনে তার পিতার দ্বারা বন্দী হয়েছিলেন, আর তিনিই সেই লোহার মুখোশে বন্দী সেই রহস্যময় ব্যক্তি। 

ঔপন্যাসিক আলেকজান্দ্র ডুমাস উনবিংশ শতাব্দীতে দ্য ম্যান ইন দ্য আয়রন মাস্ক-এর রহস্যকে জনপ্রিয় করেছিলেন এবং গল্পটি এখনো মানুষকে কৌতুহলী করে চলেছে। যাইহোক, এই রহস্যময় ব্যক্তির সম্পর্কে আমরা কখনই সত্য জানতে পারব এমন সম্ভাবনা কম।

২. ইউএসএস সাইক্লোপসের রহস্যময় হারিয়ে যাওয়া

ইউএসএস সাইক্লোপস একটি ৫৪২-ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশাল কার্গো জাহাজ ছিল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অংশ ছিল। আর এই রহস্যময় জাহাজের গল্প আজও মানুষকে বিস্মিত করে।

জর্জ ডব্লিউ. ওর্লির নেতৃত্বে, সাইক্লোপস কে ভার্জিনিয়ার নরফোক থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে কয়লা নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জাহাজে করা পাঠানো কয়লা ব্রাজিলের ওই এলাকায় মার্কিন জাহাজের জ্বালানিতে ব্যবহার করা হবে। ওর্লির দুর্বল নেভিগেশন দক্ষতার কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ১৯১৮ সালের ২৮ শে জানুয়ারি সাইক্লোপস ব্রাজিলের বন্দরে পৌঁছায়। 

Phot Courtesy: USS neval Institute

কয়লা আনলোড করার পর, জাহাজটি ১১,০০০ টন ম্যাঙ্গানিজ আকরিক (স্টিল তৈরিতে ব্যবহৃত একটি খনিজ) নিয়ে মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরের দিকে রওনা হয়। জাহাজটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে থেমেছিল। ওর্লি জাহাজে আরও মালামাল তুলতে চেয়েছিল। এরপর ৪ মার্চ জাহাজটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোস বন্দর ত্যাগ করে। এরপর জাহাজ টিকে আর কখনো কোথাও দেখতে পাওয়া যায় নি।

মার্চ মাসের প্রায় পুরোটাই কিউবা ও কোস্টারিকোর সমুদ্র অঞ্চলে অনুসন্ধান করে জাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ খোঁজাখুঁজির পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। জাহাজের কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি এমনকি পাওয়া যায়নি জাহাজে থাকা কোনো নাবিকের খোঁজ।

এই ঘটনাটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত হওয়ার কারণে, কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে জার্মানরা সাইক্লোপস আক্রমণ করেছিল। কিন্তু জার্মানির নৌ রেকর্ডের বিস্তৃত অনুসন্ধান ইঙ্গিত দেয় যে কোনও আক্রমণ কখনও হয়নি।

কেউ কেউ মতামত দিয়েছেন যে জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে, ভারী বোঝার কারণে একপাশে হেলে পড়ে এবং ডুবতে শুরু করে। যদিও এটি একটি যুক্তিযুক্ত তত্ত্ব, তবে এটি এখনও ব্যাখ্যা করতে পারেনি কেন জাহাজটির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

৩. অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ 

১৯৬৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড হল্ট চেভিওট বিচে সাঁতার কাটতে গিয়েছিলেন।  তার সাথে তার প্রতিবেশী এবং তার বাড়ির বেশ কয়েকজন অতিথিও ছিলেন।

হল্ট দ্রুত তার সুইমিং পোশাক পড়ে সঙ্গীদের নিয়ে সমুদ্রে নেমে গেলেন। তিনি সৈকত থেকে দূরে সাঁতার কাটতে শুরু করলেন, দলের বাকিদের থেকে আরও দূরে সরে গেলেন। তার সঙ্গীসাথী ও অন্যরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

Phot Courtesy: medium

কিছুক্ষণ পরে, হল্টের মাথা জলের নীচে অদৃশ্য হয়ে গেল এবং তাকে আর কখনও দেখা গেল না।  সবাই ধরে নিল প্রধানমন্ত্রী ডুবে গেছেন। ডুবুরিরা সাগরে অনুসন্ধান করেছে। হেলিকপ্টারে করে পুরো এলাকা স্ক্যান করা হয়েছে। কিন্তু লাশ আর পাওয়া যায়নি।

কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে হোল্ট আত্মহত্যা করেছিলেন কারণ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার দুই বছরের মেয়াদ ছিলো সমস্যায় পরিপূর্ণ। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন হল্ট নিজের মৃত্যুর নাটক করেছেন।

আর অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক অ্যান্টনি গ্রে তো যুক্তিই দিয়ে দিয়েছিলেন যে হল্ট গোপনে একজন চীনা গুপ্তচর ছিলেন এবং তিনি একটি সাবমেরিনে চড়ে চীনে চলে গিয়েছিলেন। ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টার ওয়াজ এ স্পাই’ নামে একটি বইয়ে প্রকাশিত এই তত্ত্বকে অনেকেই উপহাস করেছেন।

এতোগুলা বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো জানিনা হল্টের সাথে কি হয়েছিল। সে কি আত্মহত্যা করেছিল? নাকি এটা শুধুই একটা দূর্ঘটনা ছিলো? নাকি সেদিন অন্যকিছু ঘটেছিল? দুর্ভাগ্যবশত, আমরা কখনই সেই সত্য জানতে পারব না।

Leave a Reply