You are currently viewing প্রাচীন রোমের নারীদের রূপচর্চা: রূপচর্চার অদ্ভুত ৮ টি পদ্ধতি

প্রাচীন রোমের নারীদের রূপচর্চা: রূপচর্চার অদ্ভুত ৮ টি পদ্ধতি

সৌন্দর্যের ধারনা মানুষের ভেতরে প্রাচীন কালেই বিকশিত হয়েছিল তা আজ অবধি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আমাদের নান্দনিক আবেদনের পছন্দগুলিকে আকার দেয়।

প্রাচীন রোমের মানুষদের কাছে সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য ছিলো ফর্সা বর্ণ, বদামী চোখ। আর মহিলাদের অসাধারণ ফিগারের সাথে স্বর্ণকেশী চুল।

সেসময় সৌন্দর্য রক্ষার্থে সাজগোছ করার জন্য বিভিন্ন প্রসাধনী ও পদ্ধতি ব্যবহার করতো। তবে আজকেই দিনে যে কোনো সাধারণ মানুষ তা করতে পারে কিন্তু প্রাচীন রোমে আর আট দশটা সাধারণ মানুষ রূপচর্চা করতে পারতো না। প্রাচীন রেমের মেকআপ কেবলমাত্র ধনী শ্রেণীর মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। যদি কোনো নিম্ন শ্রেণির নারী মেকাপ করতো তাহলে তাকে প্রায়শই তিরস্কার করতো মানুষজন।

চলুন আজ প্রাচীন রোমের মানুষদের রূপচর্চা বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

১. ত্বকের সৌন্দযের জন্য দুধ দিয়ে স্নান করতেন

প্রাচীন রোমে গায়ের রং ফর্সা হওয়ার গুরুত্ব ছিলো বেশি, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য। আর বেশিরভাগ পুরুষই বিয়ের জন্য ফর্সা ত্বকের নারীর খোঁজ করতো।

আর তাই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নারীরা বিশেষ যত্ন নিতেন। ত্বকে দাগ মুক্ত, বালি মুক্ত ও মসৃণ রাখতে মহিলারা বাড়ির বাহিরে খুব একটা বের হতেন না। সারাদিন তারা বাড়ির অন্দরমহলেই কাটিয়ে দিতেন। আবার বের হলে তারা মুখে বিশেষ মাস্ক পড়ে বের হতেন।

বেশ কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা মুখের উপর সালভ, আনগুয়েন্টস এবং তেলের ব্যবহার সাধারণ বিষয় ছিল। এই উপাদানগুলির প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, বেশিরভাগ উপাদানগুলিকে মিক্স করে একটি পেস্ট তৈরি করে তা মুখে লাগিয়ে রাখতো।

ধনী মহিলারা তাদের ত্বকে যত্নের সাথে দুধ ব্যবহার করতো, অনেক ধনী নারীরা আবার দুধ দিয়ে স্নান ও করতো। দুধে ত্বক সৌন্দর্য করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে কথিত আছে তাই সেসব কথা তারা সহজেই বিশ্বাস করতো।

Image Source: Quora


প্রাচীন রোম কিংবদন্তি অনুসারে, সম্রাট নিরোর স্ত্রী পপ্পা সাবিনা এত বেশি পরিমাণে দুধ ব্যবহার করতেন যে যখনই তিনি ভ্রমণ করতেন তখন গাধার একটি বাহিনী তার সাথে থাকত। বলা হয় যে তিনি দুধ এবং ময়দাযুক্ত তার নিজস্ব একটি রেসিপি তৈরি করতেন যা তিনি তার ত্বকে উপর প্রচুর পরিমানে প্রয়োগ করতেন।

আরো পড়ুন:  ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কিছু অদ্ভুতুরে মৃত্যু!

২. চোখের পাপড়ি যত বড় হবে বিয়ের প্রস্তাবের তালিকা তত দীর্ঘ হবে



প্রাচীন রোমে লম্বা দোররা একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হত, এবং মহিলারা বড় পাপড়ি নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর, এবং কখনও কখনও অস্বাস্থ্যকর মাধ্যম অবলম্বন করত।

আর সেজন্য তারা চোখে বিভিন্ন প্রকার কালি ব্যবহার করতো তা ছিলো শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।

৩. চোখের মেকাপ

বলা হয় যে উজ্জ্বল ঝকঝকে রঙগুলি মহিলারা তাদের চোখের আকার বাড়ানোর জন্য আইশ্যাডো হিসাবে ব্যবহার করতেন। রঙিন সবুজ, হলুদ এবং নীলগুলি প্রাকৃতিক খনিজ থেকে সূক্ষ্ম পাউডার তৈরি করা হয়েছিল এবং চোখের পাতায় প্রয়োগ করা হয়েছিল।

একটি কাঠকয়লা ধূসর পাউডার চোখের রূপরেখার জন্য কোহল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য দূরবর্তী দেশগুলি থেকে আনা হয়েছিল। এটা বলা হয় যে কোহল চোখের প্রাকৃতিক রঙ বাড়াবে এবং তাদের বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে।

কোহল জাফরান, ছাই, কাঁচ বা অ্যান্টিমনি থেকেও তৈরি করা হয়েছিল। এই সূক্ষ্ম পাউডারটি প্রয়োগ করার জন্য, হাড়ের কাঠিগুলিকে প্রায়শই তেল বা জলে ডুবিয়ে, তারপর কোহল পাউডারে ডুবিয়ে চোখের উপর ব্যবহার করা হতো।

একজনের ভ্রুর মাঝখানে কালো কালি ব্যবহার করে প্রায়শই একটি ভ্রু আঁকা হযতো আর এটিকে প্রাচীনকালে সৌন্দর্যের চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করা হত।

Photo Credits: Saubhaya Makeup

৪. গোলাপী গাল

সৌন্দর্য বাড়াতে মহিলারা লাল গোলাপী বিভিন্ন রঙ নিজেদের গালে ব্যবহার করে। এই কাজটি প্রাচীন রোমের নারীরাও করতেন। তবে তারা কিছু অদ্ভুত পদ্ধতি অবলম্বন করতেন।

রোমান নারীরা তাদের গাল রঙ করতে গোলাপের পাপড়ি ছিড়ে ফেলতেন এবং সেগুলো ঢলে গালে লাগিয়ে গালের রঙ গোলাপি করতেন।
এছাড়াও তারা আরো বেশ কিছু পদার্থ ও ব্যবহার করতেন গাল লাল করতে যেমন লাল চক, অ্যালকানেট এবং কুমিরের মূত্র।

৫. চুল কোঁকড়া ও রঙ করা

প্রাচীন যুগের একটি প্রবাদ আছে, একজন মহিলার মহিলার সৌন্দর্য্য হচ্ছে তার চুল।
আর তেমনি প্রাচীন রোমে মহিলাদের জন্য চুলের গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তারা তাদের পছন্দসই চুলের ধরন পেতে অদ্ভুত সব কান্ড করেছেন।

প্রাচীন রোমের নারীরা চুল কোঁকড়া করতে ব্রোঞ্জের রড ব্যবহার করতেন। এই ব্রোঞ্জের রড কে হালকা গরম করে তা দিয়ে চুল গুলোকে রোলিং করে দীর্ঘক্ষণ রাখা হতো। সাথে অলিভ ওয়েল ও ব্যবহার করতো।

আর যেহেতু সেসময় স্বর্ণকেশী এবং লাল চুলের উচ্চ চাহিদা ছিল, তাই তারা চলের উপর হালকা আস্তরণের রঙ ব্যবহার করতেন। এই রংগুলির বেশিরভাগই শাকসবজি এবং প্রাণীজ পদার্থ থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর সেই রংগুলো জল এবং তেল দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারতো।

আরো পড়ুন:  মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে স্বামীরা স্ত্রী কে নিলামে বিক্রি করতো!
Photo Credits: Wikimedia Commons

৬. সুন্দর হাসির জন্য চাই সুন্দর দাঁত

এ যুগের মানুষের কাঙ্ক্ষিত বহু জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফকফকে সাদা দাঁত। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন সাদা দাঁত অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি বিদ্যমান আছে।

যাইহোক, প্রাচীন রোমানরা পশুর হাড়ের ছাই বা দাঁতের ছাই দিয়ে তৈরি তাদের নিজস্ব টুথপেস্ট তৈরি করত।
যদি একজন ব্যক্তি একটি দাঁত হারিয়ে ফেলতেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হাতির দাঁত বা হাড় থেকে তৈরি একটি কৃত্রিম দাঁত একটি সোনার তারের মাধ্যমে তাদের মুখে পূঃণস্থাপন করা হতো।

৭. ঘনঘন মেকাপ নেওয়া

যেহেতু সেসময় ফর্সা ত্বকের চাহিদা ছিল অত্যন্ত প্রচুর তাই সেসময় একধরনের সাদা ক্রিম ব্যবহার করা হতো ত্বকের জন্য। এই ক্রিমটির প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে সীসা।

হ্যাঁ, সীসা বিষাক্ত। তবুও তারা সেটি ব্যবহার করতেন এই ভেবে যে এটি তাদের ত্বকের রঙের পরিবর্তন করবে। বিশেষ করে ধনী নারীরা এই ক্রিম বেশি ঘনঘন ব্যবহার জরতেন। এ জন্য অবশ্য তাদের ত্বকের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতো। তবুও তারা সেসবের কোনো তোয়াক্কা করতেন না।

সেসম রোমান নারীরা এখনকার মতো নেইল পালিশ ও ব্যবহার করতেন! সেসময় নেইল পালিশ তৈরি করা হতো পশুর চর্বি ব্যবহার করে।
পশুর চর্বি একটি হালকা গোলাপী রঙ উৎপন্ন করে যা নখকে সূক্ষ্ম ও উৎকৃষ্ট দেখাতো।

Photo Credits: Italy Magazine

৮. সুগন্ধি ব্যবহার

প্রাচীন রোমানরা শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে বিশেষ যত্ন নিতেন। আর মহিলাদের সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি শরীর থেকে সুগন্ধি প্রস্ফুটিত হওয়া ছিলো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রাচীন রোমেও বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি তৈরি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কিছু তরল পদার্থের ছিলো। আর অন্যগুলি আঠালো কঠিন পদার্থের ছিল।

এই সুগন্ধিগুলি ফুল এবং পাতা থেকে তৈরি করা হয়েছিল। জলপাই এবং আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি অনফেসিওর ছিলো পারফিউমের মূল উপাদান। আর সেই পারফিউম কে রঙিন করতে মেশানো হতো বিভিন্ন রঙ।

Image source: Pintarest

Featured Image Source: Roma Wonder