You are currently viewing নকার-আপার্স : মানব অ্যালার্ম ঘড়ির ইতিহাস

নকার-আপার্স : মানব অ্যালার্ম ঘড়ির ইতিহাস

আজকের এই সময়ে দাড়িয়ে আপনি খুব ভোরে উঠতে চাইলে কি করবেন? হয়তো মোবাইল ফোনে অ্যালার্ম সেট করবেন কিংবা অ্যালার্ম ঘড়িতে আপনার নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ম সেট করবেন।

আচ্ছা কখনো কি আপনার মনে এই প্রশ্নটি উঁকি মেরেছে? যখন এলার্মঘড়ি বা মোবাইল ফোন ছিলো না তখন মানুষ কিভাবে ঘুম থেকে উঠতো।

আমার দাদা-দাদিরা ঘড়ির শব্দে ঘুম থেকে উঠতেন ঘড়ির টিক, টিক, টিক শব্দ শুনে কিংবা তারা নিজেদের অধিকাংশ সমই গ্রামে কাটিয়েছেন, তাই মোরগের শব্দ শুনেও ঘুম ভেঙেছে। গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে আমার নিজের ঘুমই খুব ভোরে মোরগের ডাকেই ভাঙে।

আচ্ছা সেদিকে আর কথা না বাড়াই। আচ্ছা আগের শতকে তো শহরাঞ্চলের মানুষদের ঘুম ভাঙার জন্য এলার্মঘড়ি বা শহরাঞ্চলের মানুষদের ঘরে মোরগ ও ছিলো না। তাদের অ্যালার্ম কে দিত? উত্তর টা হলো ‘মানুষ আগে অ্যালার্ম ঘড়ি ছিল’।

১৮ ও ১৯ শতকে ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডে বিশেষ কর্মীরা সকালে মানুষকে ঘুম থেকে জাগাতেন, তাদের বলা হত নকার-আপার।

চলুন পুরানো যুগের মানব ঘড়ির ইতিহাসে একটু ডুব দেওয়া যাক!

নকার-আপার্স কারা ছিলেন?

শিল্প বিপ্লবের সময় নকার-আপার ছিল ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি শতকের একটি পেশা যখন অ্যালার্ম ঘড়ি জনপ্রিয় ছিল না এবং সেগুলি সস্তা বা নির্ভরযোগ্যও ছিল না। ব্রিটেনের কারখানার শ্রমিকদের সেসময় অ্যালার্ম ঘড়ি ক্রয় করা ছিলো দুঃসাধ্য ব্যপার। যেহেতু সেসময়টায় শিল্পায়ন ক্রমবর্ধমান ছিলো তাই কল-কারখানাগুলি আরও বেশি শ্রমিক এবং আরও বেশি ওয়ার্কিং আওয়ারের প্রয়োজন অনুভব করে।

Credit: hypnomedia.site

সেসময় শ্রমিকরা খুবই ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করত এবং কাজে যোগ দেয়ার সময়ের ব্যাপারে কল-কারখানা গুলো কঠিন ছিল। দেরি করলে চাকরি চলে যাওয়া কিংবা মাইনে থেকে বেতন কেটে নেয়ার ভয় ছিল, এমনিতেই ছিল অল্প বেতনের চাকরি, জরিমা কেটে নিলে বেতনের থাকেই বা কি? তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে তারা ভাড়া করতো নকার- আপারদের।

নকার-আপাররা প্রধানত বড় শহর বা ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে কাজ করত।
প্রথমে, নক-আপাররা দরজায় ধাক্কা মেরে মানুষকে জাগিয়ে তুলত কিন্তু এটি ছিলো অকার্যকর এবং ভুল পদ্ধতি। দরজায় ধাক্কা দেয়ার ফলে ঐ পরিবারের সবার ঘুম ভেঙে যেতো, এমনকি প্রতিবেশীরাও অভিযোগ করতে থাকে এ ব্যাপারে। কারণ তাদের ভোর ৫-৬ টা বাজে ঘুম থেকে উঠার কোনো প্রয়োজন নেই।

আরো পড়ুন:  পৃথিবীর বিখ্যাত ৪ টি কাকতালীয় ঘটনা

পরবর্তীতে তারা শ্রমিকদের জাগানোর একটি ভাল উপায় খুঁজে পেয়েছিল। যেহেতু বেশিরভাগ শ্রমিকদের বেডরুম উপরের তলায় অবস্থিত ছিল, তারা একটি দীর্ঘ লাঠি ব্যবহার করে এবং সেই শ্রমিকের জানালায় সেই লাঠি দিয়ে আঘাত করতো। কিছু নকার আপার জানালায় দু-তিনবার ধাক্কা দিয়ে চলে যেতো আবার কেউ ধাক্কা দিতেই থাকতো যতক্ষণ না কর্মী জানালায় উঠে এসে জানালা খুলতো। প্রতিটি নকার-আপার প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জনকে জাগিয়ে তুলতেন।

কয়েকজন নকার-আপারের নাম এবং তারা কত উপার্জন করতো?

Credit: Fox Photos, Hulton Archive, Getty Image

চার্লস নেলসন: চার্লস নেলসন ২৫ বছর ধরে নকার-আপার হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ইস্ট-লন্ডনের কর্মীদের যেমন ডাক্তার, বাজারের ব্যবসায়ী এবং ড্রাইভারদের জাগিয়ে তুলতেন।

ডরিস উইগ্যান্ড: তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রেলওয়ের প্রথম নকার-আপার। তিনি শর্ট নোটিশে শ্রমিকদের জানাতেন যাদের শিফটে জরুরি প্রয়োজন ছিল।

মেরি স্মিথ: তিনি শ্রমিকদের জাগানোর জন্য আরেকটি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ইস্ট-লন্ডনে শ্রমিকদের জাগানোর জন্য তাদের জানালায় শুকনো মটর ছুঁড়ে মারতেন। তিনি সপ্তাহে ছয় পেন্স আয় করতেন।

অন্যান্য সমস্ত নকার-আপাররা প্রতি সপ্তাহে কয়েক পয়সা উপার্জন করতো।

যাইহোক, তখনকার প্রতিটি কর্মী তাদের নিয়োগ করা নকার-আপারের কাছে কৃতজ্ঞ ছিল না, তারা তাদেরকে কখনো পাত্তা দিত না। মাঝেমাঝে তারা উপর থেকে নকার-আপারের উপর বালতি দিয়ে পানি নিক্ষেপ করত।

নক আপার কে জাগিয়ে তুলতো?

কর্মীদের জাগানোর জন্য একজন নকার-আপারকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হতো। কিন্তু তারা কিভাবে এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠতো?

নকার-আপাররা তাদের সকালের দায়িত্ব শেষ করে তারা দিনের বেলা সারাদিন ঘুমাতো আর পেঁচার মতো সারারাত জেগে থাকতো। ১৯৪০ ও ৫০ এর দশকে অ্যালার্ম ঘড়ি কেনা সহজলভ্য হলে নকার আপার রা তাদের চাকরি হারায়।

১৯৭০এর দশক পর্যন্ত উত্তর ইংল্যান্ডের কিছু শহরে নকার-আপারদের নিয়োগ করেছিল, যাতে এই পেশাটা কালের স্রোতে হারিয়ে না যায়।

১৮ ও ১৯ শতকের মানুষরা এভাবেই জেগে উঠত। নকার-আপারের পুরানো ইতিহাস চিরকাল স্মরণীয়। কারণ তাদের কাজটি তখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যা ইংল্যান্ডের লোকেদের সময়মতো কাজে পাঠানোর ভূমিকা পালন করতো।

Reference: Wikipedia & BBC

Featured Image: vintag. es

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a B.A. in English Literature. He has a long-standing interest in writing, with a focus on historical and mythological themes. His work often explores the cultural and literary connections between past and present. Outside of writing, he enjoys reading across genres and is passionate about music and singing.

Leave a Reply