You are currently viewing টয়লেট পেপারের ইতিহাস: রোমানরা টয়লেট পেপার হিসেবে কাঠি ব্যবহার করতো

টয়লেট পেপারের ইতিহাস: রোমানরা টয়লেট পেপার হিসেবে কাঠি ব্যবহার করতো

টয়লেট পেপার বা টয়লেট টিস্যু যে নামেই বলেন না কেন, এই পেপারের কাজ কিন্তু সবারই জানা। রেস্টুরেন্ট কিংবা চলতি পথে, নানা কাজে টিস্যু পেপার এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, টিস্যু পেপার ছাড়া এখন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান চলেই না।

খাবারের শেষে, কপালের ঘাম মুছতে, হাতমুখ ধোয়া শেষে টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ না মুছলে যেন চলেই না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক জায়গা থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত টিস্যু পেপার এনেছে বড় পরিবর্তন। পরিচ্ছনতার ধারণা বদলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনেছে নতুন মাত্রা।তবে মলমূত্র ত্যাগের পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য টয়লেট টিস্যুর বিকল্প আর কিছুই নেই।

আধুনিক টয়লেট পেপার আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে মানুষ কি ব্যবহার করতো?

বর্তমানে যে আধুনিক টয়লেট পেপার পাওয়া যায় তার সৃষ্টির সময়কাল আনুমানিক ২০০ বছর। ঠিক কবে থেকে টয়লেট পেপার ব্যবহার শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না।

প্রাচীন চীন

প্রাচীন চীনের মানুষরা টয়লেট এর শেষে কাগজ ব্যবহার করত। এই কাগজ সাধারণ কাগজের চেয়ে তুলনামূলক নরম ছিলো। তবে রাজ আদালতের সদস্যরা যেসব কাগজ ব্যবহার করতেন তা আবার সুগন্ধিযুক্ত ছিল।

চীনে টয়লেট পেপার ব্যবহারের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে। যাইহোক, যেহেতু চীনারা খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে কাগজ আবিষ্কার করেছিল, তাই তারা নিশ্চিতভাবে ৫৮৯ খ্রিস্টাব্দের আগেও টয়লেটের উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করে থাকতে পারেন।

ইতিহাস বলছে, ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে চীনে টয়লেট পেপার ব্যবহার করার রীতি চালু ছিল। এরপর চতুর্দশ শতকে মিং বংশের শাসনকালে চীনের রাজ প্রাসাদে এই কাগজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়। ১৩৯৩ সালে শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বছরে ৭,২০,০০০ টুকরো টয়লেট পেপার দরকার হত। প্রতিটি টুকরোর মাপ ছিল ৬০ সেমি X ৯০ সেমি।

প্রাচীন চীনের কাগজ Image: theazb.com

প্রাচীন রোম

প্রাচীন রোমানরা একটি লাঠিতে একটি স্পঞ্জ ব্যবহার করত, যাকে বলা হয় জাইলোস্পনজিয়াম। এই নরম ডিভাইসটি ব্যবহার শেষে ভিনেগারে ভরা একটি বালতিতে ফেরত দিতে হতো, যেনো পরবর্তী তে অন্য কোনো ব্যক্তি সেটি ব্যবহার করতে পারে।

Image: Wikimedia Commons

প্রাচীন গ্রীক

প্রাচীন গ্রীকরা মোছার জন্য সিরামিক টুকরো ব্যবহার করত। (বলাই বাহুল্য, সেই পাথর ও ছিদ্রের কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং অর্শ্বরোগ হয়)। এই সিরামিকে তারা নিজেদের শত্রুর নাম লিখে রাখতো।

আরো পড়ুন:  লেপা রেডিক : নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সাহসী কিশোরীর বিদ্রোহ
সিরামিকে শত্রুর নাম খোদাই করে গ্রীকরা তা ব্যবহার করতো। Image: greecehighdefinition.com

এই সিরামিকের টুকরোকে বলা হত পেসসোই। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গ্রীক সাম্রাজ্যের পাওয়া বিভিন্ন নথি থেকে এটি আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি একবার একটি গুহায় পাওয়া যায় সেই সময়কার মানুষের মল। যা পরীক্ষার পর পেসোইয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

সেসময়ে পাবলিক টয়লেটগুলোতে গ্রীকরা পেসসোই রেখে দিত। যেই এই টয়লেট ব্যবহার করবে সেই তার শত্রুর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারল বলে ভেবে নিতে পারবে। অর্থাৎ এটিও তাদের এক ধরনের যুদ্ধ বলা যায়। শত্রুর বিরুদ্ধে কিছু করা।

প্রাচীন গ্রীসের কিছু পেসসোই Image: greecehighdefinition.com

প্রাচীন জাপান

অষ্টম শতাব্দীর দিকে জাপানীরা তাদের মলদ্বারের বাইরের এবং অভ্যন্তর পরিষ্কার করার জন্য এক ধরণের কাঠের কাঠি ব্যবহার করত। যেটার নাম ছিল চুগি। এছাড়াও পানি, পাতা, ঘাস, পাথর, পশুর চামড়া এবং ঝিনুক ব্যবহার করত। এটি ছিল প্রাচীনকালের মানুষের কথা। আর মধ্যযুগে মরিসন জাতিরা ব্যবহার করত শ্যাওলা, গাছের ছাল, খড়, এবং কাপড়ের টুকরো।

Image: Wikimedia Commons

লোকেরা এতসব জিনিস ব্যবহার করেছিল যে একজন ফরাসী ঔপন্যাসিক ফ্রান্সোইস রাবেলাইস ষোড়শ শতাব্দীতে এই বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লিখেছিলেন। তার কবিতা পশ্চিমা বিশ্বে টয়লেট পেপারের প্রথম উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন এদের শুধু হাঁসের মাথা ব্যবহার করাই বাদ আছে।

আধুনিক টয়লেট পেপারের ইতিহাস

১৮৫৭ সালে, জোসেফ সি. গেয়েটি টয়লেট পেপারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কাগজ বিক্রি শুরু করেন। তার পণ্য একটি বাক্সে কাগজের পৃথক শীট দ্বারা গঠিত। তিনি অ্যালোভেরার নির্যাস দিয়ে এটিকে মিশ্রিত করেন এবং তার উপাধির সাথে একটি জলছাপ যুক্ত করেছিলেন।

১৮৭১ সালে, শেঠ হুইলার রোল্ড এবং ছিদ্রযুক্ত টয়লেট পেপার পেটেন্ট করেছিলেন।

১৮৯০ সালে, স্কট পেপার কোম্পানি একটি রোলে টয়লেট পেপার বিক্রি শুরু করে।

১৯৩০ সালে, নর্দার্ন টিস্যু কোম্পানি স্প্লিন্টার-মুক্ত টয়লেট পেপার বিক্রি শুরু করে। এটি সমস্ত ব্যবহারকারীদের জন্য কি একটি স্বস্তিদায়ক বিষয় ছিল!

১৯৪২সালে, আরেকটি বিপ্লব ঘটেছিল। ইংল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুস পেপার মিল অ্যান্ড্রেক্স প্রবর্তন করেছিল, প্রথম টু-প্লাই টয়লেট পেপার।

image Courtesy of gracesguide.co.uk



১৯৫৪ সালে, নর্দান টিস্যু কোম্পানি প্রথম রঙিন টয়লেট পেপার বিক্রি শুরু করে।

১৯৫৫ সালে, স্কট পেপার কোম্পানি প্রথমবারের মতো টিভিতে টয়লেট পেপারের বিজ্ঞাপন দেয়।

প্রথম দেশব্যাপী টয়লেট পেপার সংকট

২০২০ সালের মার্চ মাসে, COVID-19 মহামারী চলাকালীন, একাধিক দেশ টয়লেট পেপার কেনার আতঙ্কের কথা জানিয়েছে, যা এর ঘাটতির কারণ হয়েছিল।

যাইহোক, এটি প্রথম টয়লেট পেপার সংকট ছিল না।

১৯৭৩ সালে প্রথম টয়লেট পেপার এর সংকট দেখা দিয়েছিল।

১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তেলের সংকট দেখা দেয়; যা জাপানে গুজব ছড়িয়ে দেয় যে দেশটি টয়লেট পেপার ফুরিয়ে যাচ্ছে।
জাপানি গৃহিণীরা টয়লেট পেপার কেনার উন্মাদনায় সাড়া দিয়েছিল। প্রতিদিন শত শত দোকানের সামনে অপেক্ষা করত যতটা সম্ভব রোল হাতে পাওয়ার জন্য।

আরো পড়ুন:  কৃষক যখন সম্রাট: চীনের ইতিহাসে ক্ষমতার পালাবদল



১৯ শে ডিসেম্বর, ১৯৭৩-এ, জনি কারসন, একজন জনপ্রিয় আমেরিকান কৌতুক অভিনেতা, টয়লেট পেপার ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য টুনাইট শো-তে রসিকতা করেছিলেন, যা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল এবং টয়লেট পেপারের প্রকৃত ঘাটতি ছিল।

কারসন পরে তার রসিকতার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং আশা প্রকাশ করেছিলেন যে লোকেরা তাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে মনে করবে না; যে টয়লেট পেপারের সংকট সৃষ্টি করেছিল।



টয়লেট পেপার উৎপাদন পরিবেশের উপর একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন, টয়লেট পেপার তৈরির জন্য পর্যাপ্ত কাঠ সরবরাহ করতে প্রায় ২৭,০০০ এর ও বেশি গাছ কাটা হয়।

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics. He also tutors English. Education: National University of Bangladesh BA in English Literature

Leave a Reply