You are currently viewing অজানা লতা মঙ্গেশকর

অজানা লতা মঙ্গেশকর

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। ৭ দশক ধরে দর্শক ও সমালোচক হৃদয় তৃপ্ত করে তার সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে।

জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর অনেক বিষয়ই সবার কাছে জানা। আবার কিছু বিষয় আছে যা অনেকেই জানেন না। লতা মঙ্গেশকরের এমনই কিছু অজানা বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেল।

শিশুশিল্পী লতা মঙ্গেশকর

লতা মঙ্গেশকরের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখনই তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত! না কোনো নায়িকার ঠোঁটে বাজেনি তাঁর গান, তিনি নিজেই হাজির হয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার একজন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। তাঁর মিউজিক্যাল প্লে’গুলোতে লতা প্রথম অভিনয় শুরু করেন।

শৈশবে লতা মঙ্গেশকর (photp copyright)

নাম বিভ্রাট
লতার মঙ্গেশকরের নাম শুরুতে ‘লতা’ ছিল না। জন্মের পর তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হেমা’। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মুঙ্গেশকরের ‘ভাও বন্ধন’ নাটকে লতিকা নামে একটি বিখ্যাত চরিত্রের নাম অনুসারে তিনি হয়ে যান ‘লতা মুঙ্গেশকর’!

হার্দিকর পদবী থেকে মঙ্গেশকর পদবী

মুঙ্গেশকর পরিবারের পদবি ছিল হার্দিকর। লতার আাবা দীননাথ এই হার্দিকর পরিবর্তন করে করেন মুঙ্গেশকর।

বাবার সাথে লতা মঙ্গেশকর (copyright photo)

সঙ্গীত ক্যারিয়ার শুরু মারাঠি গান দিয়ে

লতা মঙ্গেশকর তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৪২ সালে, মারাঠি গান গেয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোরি’ গানটি গেয়েছিলেন। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় সুযোগ দেন। ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিন মেরা তোরা’ গানটির পর লতাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

অতিরিক্ত চিকন কন্ঠের কারণে প্রত্যাখ্যান

নিজের কিন্নর কন্ঠের জন্য বিখ্যাত লতা মঙ্গেশকর কে তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে এই কন্ঠের জন্যই প্রত্যাখ্যান হতে হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে সংগীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাকে পরিচয় করে দেন বলিউড ছবির প্রযোজক শশধর মুখার্জীর সাথে। কিন্তু তাঁর কাছে লতার কন্ঠ ‘অতিরিক্ত চিকন’ মনে হওয়ায় লতাকে কাজ দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ শুনে ক্ষুব্ধ গোলাম হায়দার তাঁকে বলেছিলেন যে একদিন প্রযোজক, পরিচালকরা পায়ে লুটিয়ে ভিক্ষা চাবে লতার কাছে তাদের ছবিতে একটা গান করার জন্য। সেই কথাকে সত্যি করতে বেশি সময় লাগেনি লতার।

আরো পড়ুন:  টমাস হার্ডি: ভিক্টোরিয়ান সমাজের বিপরীতে এক সাহসী কণ্ঠ
কিশোরী লতা মঙ্গেশকর (photo copyright)

গায়িকা নূর জাহানের অনুকরণ

কন্ঠশিল্পী নুর জাহানের ভক্ত ছিলেন লতা। নিজের সংগীত জীবনের প্রথমদিকে তার অনুকরণ করতেন লতা। কিন্তু ধীরে ধীরে গান গাওয়ার নিজস্ব শৈলী গড়ে তোলেন তিনি।

নুর জাহান (photo copyright)

শাস্ত্রীয় থেকে রোমান্টিক সহ অন্যান্য সঙ্গীততে পদচারণা

তিনি ভারতের প্রধান সুরকারদের প্রায় সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন। সংগীতের প্রায় সব ধরনেই তিনি গান করেছেন। শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে শুরু করে রোমান্টিক গান, এমনকি ভজনও গেয়েছেন তিনি। সব ধরনের গানেই তিনি পেয়েছেন সাধুবাদ কখনো দর্শকদের, কখনো সমালোচকদের।

সাড়ে সাত হাজার গান

সংগীতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ডের ইতিহাস আশা ভোঁসলের। তিনি গেয়েছেন প্রায় দশ হাজার গান। গিনিজ বইয়ের এ রেকর্ডটি ছোট বোন আশার হওয়ার আগে ছিল লতা মুঙ্গেশকর। লতা গেয়েছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার গান।

বোন আশার সঙ্গে বিবাদ

বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গেও লতার মনোমালিন্য হয়েছিল। লতা বলেছিলেন, আশার প্রথম স্বামী গণপতরাও ভোঁসলের কারণে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সম্ভবত গণপত মনে করতেন, আশা লতার কারণে কাজ পান না। চল্লিশের দশকের শেষদিকে দুই বোনের ক্যারিয়ার শুরুর পর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে লতার দ্রুত উত্থান ঘটে। অন্যদিকে আশা তখনো সংগ্রাম করছিলেন। লতা বলেন, গণপত আশাকে তাদের বাড়িতে যেতে নিষেধ করেন। তাদের দেখা-সাক্ষাৎও তিনি বন্ধ করে দেন। পরে আশার দ্বিতীয় স্বামী রাহুল দেব বর্মণ দুই বোনকে কাছে আনেন।

বোন আশার সাথে লতা (photo copyright)

রফির সাথেরয়্যালটি নিয়ে ঝগড়া!

ভারতীয় সংগীতের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী মোহাম্মদ রফির সঙ্গে প্রায় তিন বছর কোনো গান করেননি লতা। পরে এক সাক্ষাৎ​কারে লতা বলেন, তারা সংগীতের রয়্যালটি নিয়ে ঝগড়া করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে শিল্পীদের একটি সমিতি ছিল। মুকেশ, তালাত মাহমুদরা তখন একটি দাবি তুলেছিলেন, শিল্পীদের তাদের প্রাপ্ত সম্মানী বুঝিয়ে দিতে হবে। যদিও লতা রয়্যালটি পেতেন, কিন্তু তিনি এই দাবি সমর্থন করেন। আর মোহাম্মদ রফি এ দাবির বিরোধিতা করেন। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। লতা দাবি করেছেন, পরে রফি ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর তারা শংকর-জয়কিষাণের সুরে গান করেন তারা। কিন্তু মোহাম্মদ রফির পুত্র শহীদ রফি এ কথার প্রতিবাদ করে বলেছেন, এমন কোনো চিঠি রফি লেখেননি।

রফি ও লতা (photo copyright)

৩৬ টি ভাষায় গান

লতা মঙ্গেশকর প্রায় ৩৬টি ভাষায় গান করেছেন। এর মধ্যে আছে বাংলাও। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বেলে’সহ আরও অনেক বিখ্যাত বাংলা গানের কণ্ঠ তার।

আরো পড়ুন:  লেপা রেডিক : নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সাহসী কিশোরীর বিদ্রোহ

ফিল্মফেয়ার এ সেরা কন্ঠশিল্পীর পুরস্কারের প্রচলন করা

১৯৫৬ সালে লতার গাওয়া ‘রাসিক বালমা’ গানটি ফিল্মফেয়ারে সেরা গান-এর পুরস্কার পায়। লতাকে ফিল্মফেয়ারের অনুষ্ঠানে গানটি পরিবেশন করার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু তখনো ফিল্মফেয়ারে গায়ক-গায়িকাদের জন্য আলাদা কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা না থাকার প্রতিবাদে লতা অনুষ্ঠানে গান করতে অস্বীকৃতি জানান। ৩ বছর পর ১৯৫৯ সালে ফিল্মফেয়ারে সেরা গায়কের পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয় এবং প্রথম বছরেই তিনি পুরস্কারটি লাভ করেন। তার কিছু বছর পর গায়ক ও গায়িকাদের জন্য পৃথক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়।

(Copyright photo)

লতাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা চেষ্টা

১৯৬২ সালে লতা মঙ্গেশকরকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় ১০ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় তাকে। বিষক্রিয়া পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে তার আরো ৩ মাস লেগে যায়। কিন্তু এই হত্যা চেষ্টা কে করেছিল তা কখনো জানা যায়নি।

লতা মঙ্গেশকরের গান শুনে কেঁদেছিলেন নেহেরু

১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সামনে ভারত-চীনের সীমান্তে চলা যুদ্ধের কিছুকাল পরেই এক অনুষ্ঠানে গান করেন লতা। তার কন্ঠে ‘এ মেরে ওয়াতান কে লোগো” গানটি শুনে কেঁদে দেন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু।

নেহেরুর সাথে লতা মঙ্গেশকর (copyright photo)

লতা মঙ্গেশকরের অপূর্ণ ইচ্ছা

এক সাক্ষাৎকারে লতা তার জীবনের দুইটি অপূর্ণ ইচ্ছার কথা বলেন। প্রথমটি ছিল ভারতীয় গায়ক ও অভিনেতা কে.এল. সায়গল-এর সাথে দেখা করা ও দ্বিতীয়টি ছিল অভিনেতা দিলীপ কুমারের জন্য গান করা। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা দুটি অপূর্ণই রয়ে যায়।

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a B.A. in English Literature. He has a long-standing interest in writing, with a focus on historical and mythological themes. His work often explores the cultural and literary connections between past and present. Outside of writing, he enjoys reading across genres and is passionate about music and singing.

Leave a Reply