দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকা। অনেক সিসিলীয় পরিবার অভিবাসী হয়েছে আমেরিকায়। এসব ইটালিয়ান আমেরিকানরা সামান্য দরিদ্র মানুষ। রুটি ব্যবসায়ি, ফলের দোকানী, ময়লার সিন্ডিকেট কিংবা শ্রমজীবী। মার্কিন আইন তাদের প্রতি সদয় নয় তখনও, পদে পদে এ মানুষগুলো অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু এই অসহায় মানুষদের একজন বন্ধু আছেন। এমন একজন মানুষ যিনি অনেক ক্ষমতাবান হলেও পর্দার পিছনে থাকতেই ভালোবাসেন। নিজের বন্ধুদের সাহায্য করতে যার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, বিনিময়ে তিনি শুধু কামনা করেন কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব আর একটি সম্বোধন-গডফাদার!
মারিও পুজো, আজকের “মারিও পুজো” হয়ে ওঠেন যে উপন্যাস লিখে সেটি হল-‘দ্য গডফাদার’। মাফিয়া বা কসা নস্ত্রা পরিবারগুলোকে নিয়ে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস আজ পর্যন্ত হয়ত এটাই। উপন্যাসের পটভূমি ১৯৪৫-১৯৫৫ সালের আমেরিকা।

ভিটো কর্লিয়নি একজন বর্ষীয়ান পুরুষ। তিনি একজন ব্যবসায়ী, এবং নৈতিকতার মাপে খুবই উঁচু একজন ব্যক্তি। তিনি নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় মাফিয়া পরিবারের প্রধান হওয়া সত্তেও কিছু নৈতিকতা মেনে চলেন। তাঁর অধীনে চলছে এক বিরাট সন্ত্রাসী সাম্রাজ্য, বিশাল মাফিয়া পরিবার। ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও নামের দুই সহকারীকে সাথে নিয়ে, পালকপুত্র টম হেগেনের আইনী জ্ঞানে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পরিবার। তাঁর বড় দুই ছেলে-সনি আর ফ্রেডি, বাবাকে সাহায্য করে তাঁর কাজে। ব্যতিক্রম ছোট ছেলে মাইকেল। পরিবার থেকে সেই একমাত্র আর্মিতে যোগ দেয়। এমনকি পিতার আদেশ অমান্য করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার হয়ে অংশ নেয়।
গল্পের শুরু হয় ভিটো কর্লিয়নির মেয়ে কনির বিয়ের অনুষ্ঠানের বর্ণনার মাধ্যমে, তারপর নানা ঘটনায় কাহিনী এগিয়ে চলে। এরই মধ্যে দৃশ্যপটে সলোজো নামের এক ড্রাগডিলারের আবির্ভাব ঘটে। সে নিউইয়র্কে মাদকব্যবসা ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু আগেই বলেছি যে, ডন কর্লিয়নি নিজস্ব নৈতিকতা মেনে চলে। ডন ভিটো কর্লিয়নি মূল্যবোধের সাথে আপোষ করে বেশি লাভের আশায় মাদক-ব্যবসায় জড়িত হবেন না কোনক্রমেই। উপায়ান্তর না পেয়ে সলোজো ডনকে হত্যার চক্রান্ত করে, প্রকাশ্যে তার উপর পরপর পাঁচটা গুলি চালানো হয়। অলৌকিকভাবে ডন বেঁচে যান।
মাইকেল সেসময় ছুটি কাটাচ্ছিল তার বান্ধবী কে অ্যাডামসের সাথে, শহরে। তার বাবার উপর আক্রমণের খবর শুনে সে তাড়াতাড়ি ছুটে যায় বাড়িতে। তার মাথায় তখন প্রতিশোধের আগুণ জ্বলছে তীব্রভাবে। সে সলোজো-কে এক রেস্টুরেন্টে ডাক দেয় ব্যবসায়িক আলাপের উদ্দেশ্যে। সলোজো এলে সে তাকে খুন করে কপালে গুলি করে, সাথে এক পুলিশ অফিসারকেও হত্যা করে। জোড়া খুন করে মাইকেল পালিয়ে যায় সিসিলিতে। এবার শত্রুর রক্তে হাত রাঙিয়ে ও আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িত হয়ে যায় পারিবারিক ব্যবসার সাথে!
একদিকে হাসপাতালে আহত ডন কর্লিয়নি। মেজো ছেলে ফ্রেডির হতাশা ও আতঙ্কে ভেঙে পড়া। অপরদিকে বড়ছেলে সনির প্রচন্ড বদমেজাজি স্বভাব; টিকতে পারবে তো নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় মাফিয়া পরিবারটি? এরই মধ্যে বাকি পাঁচটা পরিবার একজোট হয়ে গেছে কর্লিয়নি পরিবারের বিরুদ্ধে। শুধু হয়ে গেলো যুদ্ধ!
‘গডফাদার’ উপন্যাসটি একটি ক্লাসিক-ক্রাইম থ্রিলার। মুলতঃ এই উপন্যাসের মাধ্যমে পুজো ইতালিয়ান-আমেরিকান মাফিয়া পরিবারগুলোকে নিয়ে থ্রিলার লেখার ধারার সূচনা করেন। পরবর্তীতে গডফাদারের পার্শ্ব-সিকুয়েল ‘দ্য সিসিলিয়ান’, হলিউড আর লাসভেগাস নিয়ে লেখা ‘দ্য লাস্ট ডন’-এ তিনি এ জনরাকে ব্যাপকভাবে বিকশিত করেছেন।
‘গডফাদার’ উপন্যাসটি মোটা দাগে চারটি পর্বে বিভক্ত। শেষ দুই পর্বের অনেকটা এসেছে ফ্ল্যাশব্যাক আকারে, দেখানো হয়েছে ভিটো করলিয়নির প্রথম জীবন, যৌবন ও ডন হিসেবে উত্থান। পুজোর বর্ণনার ধরণ একান্তই ওঁর নিজস্ব আর বিকল্পহীন। পুরো বইয়ে বোরিং হওয়ার মতো স্থান নেই বললেই চলে।
গল্প যত এগিয়ে যায়, চরিত্রের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। উপন্যাসের প্রয়োজনেই আসে লুসি মানচিনি, নিনো ভালেন্টি, লুকা ব্রাসি, জনি ফন্টেন-এর মতো কিছু চরিত্র, যাদেরকে ভোলার নয়।
যে লাইনটা না লিখলে পুরো লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়, সেটা হলো Balzac এর বিখ্যাত লাইন…
“Behind every successful fortune ; There is a Crime.”
#TheGodfather #MarioPuzo

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.
Unbeliveabe Interesting , Imagine. Congratulations on your blog.