বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি হয়েছিলো ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। আর ফুটবলের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল ১৮৮৪ সালে শুরু হওয়া ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপ। এই সময়ে গ্রেট ব্রিটেনের বাহিরে ফুটবল খেলার প্রচলন বলতে গেলে ছিলই না। তবে ১৯০০,১৯০৪,১৯০৬ অলিম্পিকে প্রথম ফুটবল খেলা প্রদর্শনী হিসেবে খেলা হয়। ১৯০৮ সালের অলিম্পিকে ফুটবল প্রথম আনুষ্ঠানিক খেলার মর্যাদা পায়। এফএ’র পরিকল্পনা অনুযায়ী এই প্রতিযোগিতা ছিল অপেশাদার খেলোয়াড়দের জন্য এবং এটিকে প্রতিযোগিতার চেয়ে প্রদর্শনী হিসেবেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হত।
১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিকে ফুটবলের জনপ্রিয়তা দেখে ফিফা প্রয়োজনবোধ করে নিজেদের একটি আলাদা ও সতন্ত্র টুর্নামেন্ট আয়োজন করার। আর এজন্যই ১৯৩০ সালে উরুগুয়ের স্বাধীনতার ১০০ বছর উপলক্ষে উরুগুয়েতে ফিফা প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে।
কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ সহ ৯২ বছরের ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফিফা আয়োজন করেছে ২৩ টি আসর। শুধু ১৯৪২ ও ১৯৪৮ সালের বিশ্বকাপটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে আয়োজন করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।
দীর্ঘ ৯২ বছরের ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রতি আসরেই ঘটেছে মজার সব ঘটনা। আজ তেমনই সব মজার ঘটনা নিয়ে এই নিবন্ধন।
দর্শকেরা পকেটে পিস্তল নিয়ে খেলা দেখতে গিয়েছিল
ভাবা যায়, স্টেডিয়ামে এক সময় পিস্তল নিয়ে খেলা দেখতে যেতো দর্শকরা। প্রথম বিশ্বকাপের ঘটনা এটা। সেবার দুই প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ে ফাইনালে ওঠায় দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিলো চরম পর্যায়ের। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেফারি সকল দর্শকদের তল্লাশি করতে বলেন। এতে ১৬০০ রিভলভার পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে।
পেনাল্টি নিতে গিয়ে পেন্ট খুলে যাওয়া
গোলের পর গোলদাতা উল্লাসে ফেটে পড়বে, সতীর্থরা এসে আলিঙ্গনে বাঁধবে, আর সেই উৎসবে গ্যালারি থেকেই যোগ দেবে সমর্থকরা- এটাই তো স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু ভেবে দেখুন, গোলের পর পুরো গ্যালারি হাসছে, আর গোলদাতা বিব্রত, লাজ-রাঙা মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনটাই হয়েছিল ১৯৩৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। টানা দ্বিতীয় শিরোপা থেকে মাত্র দুই ধাপ দূরে ইতালি। প্রতিপক্ষ ব্রাজিল। ৬০ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে গেল ইতালি। শট নিতে এগিয়ে এলেন অধিনায়ক পেপিনো মিয়াজ্জা। শট নিলেন, গোল হলো এবং প্রায় একই সঙ্গে খুলে পড়ে গেল তাঁর প্যান্ট! হয়েছে কী, খেলা চলার সময়ই মিয়াজ্জার শর্টসটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। পেনাল্টি কিকের সময় জোরালো শট নিতে গিয়ে শর্টসের দফারফা। গোল উদ্যাপন আর সতীর্থের সম্ভ্রম রক্ষা- দুটোই একসঙ্গে করতে হয়েছিল ইতালির খেলোয়াড়দের। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঘিরে রেখেছিলেন মিয়াজ্জাকে, ওই আড়ালেই নতুন শর্টস পরে নিয়েছেন মিয়াজ্জা।
দুটি ভিন্ন ধরনের বলে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল
প্রথম বিশ্বকাপে ফিফার নিজস্ব কোন বল ছিলো না। দলগুলোর বল দিয়ে খেলা হতো। সেবার ফাইনালে বল নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যায় দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। দুই দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে খেলতে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে খেলা হবে আর দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমার্ধে নিজেদের বল দিয়ে ২টি গোল দেয় আর্জেন্টিনা। আর দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল দিয়ে উরুগুয়ে দেয় ৪টি গোল। ফলে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।
গোল খেয়ে বাঁচিয়েছেন প্রাণ
ইতালির সে সময়ের স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনি আসলে বলেছিলেন ‘ভিনসেরে ও মরিরে’। ইতালির সঙ্গে বাংলার কী মিল! ‘মরিরে’ মানে যে ‘মরিবে’, এ তো না বলে দিলেও চলছে। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের আগে রোম থেকে এমনই সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিরাট হুমকি বয়ে নিয়ে একটি তারবার্তা পৌঁছেছিল প্যারিসে। হিটলারের আশীর্বাদধন্য মুসোলিনির এমন ‘প্রেরণাদায়ী’ বার্তা পেয়েই কিনা সেবার ফাইনালে হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইতালি, প্রথম দল হিসেবে জিতেছিল টানা দ্বিতীয় শিরোপা। ওই ম্যাচের পর হাঙ্গেরির গোলরক্ষক আনতল জাবো নাকি বলেছিলেন, ‘আমি হয়তো চারটি গোল খেয়েছি; কিন্তু বিনিময়ে বাঁচিয়ে দিয়েছি অনেক প্রাণ।’
ট্রফি চুরির ভয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বিশ্বকাপ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ফিফার ইতালিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্তোরিনো বারসি বিশ্বকাপ ট্রফি নিজের বেডরুমের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। তার ভয় ছিল নাৎসি বাহিনী ট্রফিটি চুরি করতে পারে!
টিম বাস চুরি
১৯৭৪ সালে টিম জায়ার পশ্চিম জার্মানি ছাড়ার জন্য একটি বিএমডব্লিউ টিম বাস চুরি করে। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি তারা। জার্মানি ছাড়ার আগেই তাদের পাকরাও করে পুলিশ।
গোল করলেই রোল রয়েস গাড়ি
১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দলের খেলোয়াড়দের প্রতিজ্ঞা করা হয় যদি কেউ গোল করতে পারে, তাহলে তাকে দেওয়া হবে একটি রোল রয়েস গাড়ি। অনভিজ্ঞ দলটির ভালো করার সুযোগ ছিল খুবই কম। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পরার আগে তারা ২টি গোল দিতে সমর্থ হয়। আর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী শেখ মোহাম্মদের কাছ থেকে দুই গোলদাতা ইসমাইল মোবারক ও থানি জুমা একটি করে রোল রয়েস গাড়ি উপহার পান।
নক-আউট পর্ব ছিলো না
১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোন নক আউট ফাইনাল ছিল না। তার পরিবর্তে পরীক্ষামূলক ভাবে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। আর তাতে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। তেমনি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে ছিলো না কোন গ্রুপ পর্ব।
বিশ্বকাপে খেললে চাকরি যাবে না
প্রথম বিশ্বকাপে রোমানিয়া দলটি নির্বাচন করেছিলেন সেদেশের রাজা দ্বিতীয় ক্যারল।
তা ছাড়া, যেহেতু বিশ্বকাপে যেতে-আসতেই লাগবে প্রায় ৩০ দিন আর তার পর ১৭ দিন ধরে টুর্নামেন্ট – তাই এত দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকলে যাতে জাতীয় দলের ফুটবলারদের চাকরি চলে না যায়, সে জন্য নিয়োগদাতাদের সাথে সমঝোতাও করেছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় জাহাজেই কিছু শরীরচর্চা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের ফিট রেখেছিলেন খেলোয়াড়রা।
প্রথম বিশ্বকাপে যোগ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ৯টি দেশ।
সব গোল আত্মঘাতী
ব্রাজিলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় পিনেইরো এক মৌসুমে গোল করেন ১০টি। সবই আত্মঘাতী। পরের মৌসুমে তাঁকে নামানো হয় স্ট্রাইকার হিসেবে। প্রথম খেলাতেই গোল করেন তিনি। সেটাও আত্মঘাতী। তাঁর ২৫তম জন্মদিনে সতীর্থ খেলোয়াড়রা তাঁকে একটা কম্পাস উপহার দেয়। সেটার গায়ে খোদাই করে লেখা ছিল- ‘মনে রেখো, বিপক্ষ দল অপর প্রান্তে।
হারের দুঃখ সহ্য করতে না পেরে ব্রাজিল সমর্থকদের আত্মহত্যা
কোন মতে হার এড়াতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন। আগের সব ম্যাচেই ব্রাজিল পায় বড় বড় জয়। তাই এ ম্যাচে নিয়ে বিশাল আগ্রহ ছিল ব্রাজিলিয়ানদের। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনাল রাউন্ডের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের লড়াই দেখতে রিও’র মারাকানা স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৪ জন। যা এখনও বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচটি হারে ব্রাজিল। আর সে ম্যাচে হারের বেদনা সহ্য করতে না পেরে বেশ কিছু ব্রাজিলিয়ান ভক্ত মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
খেলার মাঝে গোল পোস্ট পরিবর্তন
সাজানো নাটক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হলেও সত্যি সত্যি বিশ্বকাপেই ঘটে সেরকমই একটি ঘটনা। বুলগেরিয়া ও মেক্সিকোর ম্যাচে গোল পোস্টের এক পাশ ভেঙ্গে যায়। কিছুক্ষণ পর নতুন একটি গোল পোস্ট এনে সেখানে বসিয়ে আবারও ম্যাচ শুরুর নির্দেশ দেয় রেফারি।
পারিবারিক ঐতিহ্য লাল কার্ড
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বেপেতকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ক্যামেরুনের রিগবার্ড সং। সবচেয়ে কম বয়স মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপে লাল কার্ড খাওয়ার রেকর্ড এটি। ১৯৯৮ সালে অদ্ভুত এক চুলের স্টাইল করে মাঠে নামেন। কিন্তু স্টাইল অপরিবর্তিত থাকলে লাল কার্ড খাওয়া থেমে থাকেনি তাঁর। চিলির বিপক্ষে আবারও তিনি লাল কার্ড দেখেন। ঘটনার ১৬ বছর পর ক্যামেরুনের দলে সুযোগ পায় রিগবার্ডের চাচাতো ভাই এলেক্স সং। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেই তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মতনই লাল কার্ড দেখেন এবং পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখেন। বিশ্বকাপের মতন আসরে একই পরিবারের ৩ লাল কার্ডের ঘটনা আর নেই।
খালি পায়ে খেলতে পারবে না বলে বিশ্বকাপ খেলতে রাজি হয়নি ভারত
সদ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তি হওয়ার পর ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। আর সেই সুযোগে বাছাই পর্ব না খেলেই ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। সে সময়ে খালি পায়ে খেলে অভ্যস্ত দলটি বিশ্বকাপেও খালি পায়ে খেলার দাবি করে। কিন্তু ফিফা সে অনুমতি দেয়নি। পরে বাধ্য নাম প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। এজন্য আজো ভারতীয় সমর্থকরা আফসোস করেন।
একমাত্র দল হিসেবে সবগুলো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে ব্রাজিল
ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে খেলেছে। আগের ২০ আসরে সর্বোচ্চ পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। এছাড়াও বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭০টি জয়ের রেকর্ডও তাদের। তবে সফল এ দলটির বিশ্বকাপ সূচনাটা ভালো ছিলো না। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৯৩০ বিশ্বকাপে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু দলটি।
বিদেশী ম্যানেজার দিয়ে কি বিশ্বকাপ জিতে নি কোনো দল
গত ২১ টি বিশ্বকাপে যে দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে – তাদের ম্যানেজারও ছিলেন সেই দেশেরই। জাতীয় দলের ম্যানেজার বিদেশী হলে কি তাহলে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব? দেখা যাক, এবার তা কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারে কিনা।
এ পর্যন্ত ২০টি বিশ্বকাপের সবগুলোই জিতেছে কোন না কোন ইউরোপের দেশ (১১ বার) বা দক্ষিণ আমেরিকান দেশ (৯ বার)।
ব্রাজিল হচ্ছে একমাত্র দেশ যারা বিশ্বকাপের প্রতিটি চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে।
বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হয়েও কোন দল দ্বিতীয় পর্বে উঠতে পারে নি – এমন হয়েছে মাত্র একবার, ২০১০-এর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাগতিক দেশই বিশ্বকাপ জিতেছে।
আত্মঘাতী গোল করার কারণে খেলোয়াড়ের মৃত্যু
১৯৯৪ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট দল ছিল কলোম্বিয়া। কিন্তু গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় তারা। সেখানে একটি আত্মঘাতী গোল দেন আন্দ্রে এসকোবার। সেই আত্মঘাতী গোলের কারণে গ্যাংস্টাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চ্যাম্পিয়ন ছিলো ইতালি
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় টানা চ্যাম্পিয়ন থাকার রেকর্ডটি ইতালির। ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৩৮ সালেও বিশ্বকাপ জিতে নেয় তারা। এর পরের দুই আসর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল তারা।
ভিন্ন দেশ ও ভিন্ন মহাদেশে একসাথে আয়োজন
বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২০০২ সালেই দুটি ভিন্ন দেশে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান যৌথভাবে আয়োজন করেছিল সে আসর। আর ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ দুটো ভিন্ন মহাদেশে আয়োজিত হয়েছিলো। কারণ রাশিয়া একই সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পড়েছে।
জার্সি বদল নিষিদ্ধ ছিল
১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যাচ শেষে জার্সি বদল নিষিদ্ধ ছিলো। খেলোয়াড়দের বুক উন্মুক্ত হয়ে যেতো বলেই এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা।
চুরি হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপ
প্রথম বিশ্বকাপের ট্রফিটির নাম ছিল জুল রিমে কাপ – ফিফার সেসময়কার প্রেসিডেন্টের নামে। সেটি ছিল ১০ সেন্টিমিটার উঁচু সোনার তৈরি পাখা-ছড়ানো পরীর মূর্তি।
ট্রফিটি প্রথমবার চুরি হয় ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে। লন্ডনে এক প্রদর্শনী থেকে এডওয়ার্ড ব্লেচলি নামেএক সাবেক সৈনিক এটি চুরি করে। পুলিশ তাকে ধরতে পারলেও ট্রফিটি পায় নি।
পরে দক্ষিণ লন্ডনের নরউড এলাকার একটি পার্কে হেঁটে বেড়ানোর সময় ডেভ করবেট নামে এক ব্যক্তির কুকুর ‘পিকলস’ সেই ট্রফি খুঁজে পায় ২৭শে মার্চ।
তিনবার বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৭০ সালে ব্রাজিলকে চিরতরে দিয়ে দেয়া হয় জুল রিমে ট্রফি – কিন্তু ১৯৮৩ সালে তা হারিয়ে যায়।
আর কখনোই তা পাওয়া যায় নি। ধারণা করা হয় চোরেরা কাপটি গলিয়ে সোনা হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। তবে এর ভিত্তিটি সংরক্ষিত আছে জুরিখের ফুটবল মিউজিয়ামে।।
বিভ্রান্ত ইংলিশ মিডিয়া
প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি খেলেছিল স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। ১৮৭২ সালে। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে স্কটল্যান্ডের সময় লাগে ৮২ বছর। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে সুযোগ পায় তারা। আর ইংল্যান্ডের সুযোগ পেতে সময় লাগে ৭৮ বছর। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নেয় দলটি। প্রথম ম্যাচেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ গোলে হারে তারা। যদিও ইংলিশ মিডিয়া এটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি ইংল্যান্ড আসলে ম্যাচটি জিতেছিল ১০-১ গোলে। ভুলবশত ছাপা হয় ০-১!
ফাইনালে সর্বোচ্চ জয় ৩ গোলের ব্যবধানে
ফাইনালে ৩ গোলের ব্যবধানই সর্বোচ্চ জয়। আর এই তিনবারের সঙ্গেই যুক্ত ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে ফাইনালে সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় তারা। আর ১৯৭০ সালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় দলটি। বড় ব্যবধানে দুইবার জিতলেও একবার হারও দেখে তারা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হারে দলটি।
ফাইনালের ম্যাচের গোল ক্যামেরাবন্ধি করার জন্য প্রেকটিস
১৯৩৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষ হয়েছে। কিন্তু পরদিন আবারও বল নিয়ে মাঠে হাজির হতে হলো ইতালির রাইমন্দো ওরসিকে। আগের দিন দুর্দান্ত শটে গোল করেছিলেন। বারবার চেষ্টা করে যেতে লাগলেন সেই একই রকম আরেকটি শট নেওয়ার। কিন্তু ম্যাচ চলার সময় সহজাতভাবে যে শট তৈরি হয়, সেটি কি আর অভিনয় করে বানিয়ে বানিয়ে করা সম্ভব! একবার না পারিলে দেখ বিশবার।
হ্যাঁ, ঠিক বিশতম প্রচেষ্টায় ওই শটটির কাছাকাছি আরেকটি শট নিতে পারলেন ওরসি। ভাবছেন, ফাইনালের পরদিন উদ্যাপন-উৎসবে যোগ না দিয়ে এত হাঙ্গামা কেন? আসলে আগের দিন ফাইনালে ওরসির শটটা ঠিকমতো ক্যামেরাবন্দি করতে পারেননি আলোকচিত্রীরা। কিন্তু ওই ছবি তো তাঁদের চাই-ই চাই। আর তাই তাঁদের অনুরোধে ওরসিকে অভিনয় করতে হয়েছিল আরো একবার। একটু রাগও হচ্ছিল তাঁর, কী দরকারটা ছিল ক্যামেরা নামের আজব এই বস্তু আবিষ্কার করার!
জার্সি নিয়ে টানাটানি
১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এক প্রচণ্ড বিতর্কিত ম্যাচে চিরশত্রু আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জিতে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
ঐ ম্যাচে বেশি ফাউল করার জন্য ইংল্যান্ড কোচ আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের পশুর সাথে তুলনা করেছিলেন! ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনার অলিবার্তো গঞ্জালেজের (বাম দিকে) সাথে জার্সি বদলের চেষ্টায় ইংল্যান্ডের জর্জ কোহেনকে (ডান দিকে) বাধা দিচ্ছেন ইংলিশ কোচ অলিফ রামসে। কোচের হস্তক্ষেপের পর তোলা ছবিটি দেখতে অনেকটা দড়ি টানাটানি খেলায় রূপ নেয়।
ম্যারাডোনার ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল
আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় ফুটবলীয় উত্তেজনার বাইরেও অন্য রকম উত্তেজনা ছিল। আশির দশকে ইংল্যান্ডের কাছে ফকল্যান্ড যুদ্ধে হারের দগদগে স্মৃতিটা তখনো তাজা আর্জেন্টাইনদের মনে। তাই স্বাভাবিকভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পাশাপাশি গ্যালারি ও দুদেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় চলে আসে ম্যারাডোনার সেই গোল।
সেদিন যা ঘটেছিল কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে দুপক্ষের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। উত্তেজনাকর ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ও অন্যতম সেরা ঘটনার জন্ম দেয়। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ম্যারাডোনা খেলার ৫১তম মিনিটে একটি গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। কিন্তু পরে টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, গোলটি করার সময় ম্যারাডোনা মাথা দিয়ে বলটি হেড করতে না পারায় নিজের হাত ব্যবহার করেন। হাত দিয়ে বলে আঘাত করে তিনি সেটিকে গোলপোস্টের দিকে ঠেলে দেন। গোল শেষে ম্যারাডোনা সতীর্থদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমাকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরে উৎযাপন করো নয়তো রেফারি গোল বাতিল করে দেবে।”
পরে নিজেই সেই গোলের ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, ঈশ্বরই তার হাত দিয়ে গোলটা করিয়ে নিয়েছেন! সেই থেকে গোলটির গায়ে পাকাপাকিভাবে বসে যায় ‘ঈশ্বরের হাতের গোল’ উপাধিটি।