রুশ সাহিত্যের দিকপাল বলতে আমরা যাদের জানি; এর মধ্যে গোর্কি, ক্রিলভ আর তলস্তয় বাদে প্রায় সবাই ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ!
পুশকিন বেচেছিলেন মাত্র ৩৮ বছর!লেমন্তরভ বেঁচেছিলেন ২৭ বছর, গোগল ৪৩ বছর, দস্তয়েফস্কি তবু ৬০ বছর বেঁচেছিলেন কিতু আন্তন চেখভ মারা যান মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে(যক্ষা)!
চেখভ তার সাহিত্যিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যদিও এ থেকে তিনি সামান্যই উপার্জন করতেন। তিনি অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসতো তার লেখালেখি থেকে। তিনি লেখালেখি মুলত শুরু করেছিলেন টাকা উপার্জনের জন্য কিন্তু লেখা লেখির শুরুর দিক থেকে তার আত্ম বিশ্বাসের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। নিজেকে নিয়ে নিজে মজা করতেন; বলতেন, তার কোন সাহিত্য প্রতিভা নেই-নিজের লেখাকে কখনো ‘গাভনো’( ময়লা আবর্জনা) , কখনো ‘ চিপুখা’ ( অতি তুচ্ছ) বলে ব্যঙ্গ করতেন! যদিও স্বয়ং লিও তলস্তয় তার কয়েকটা লেখাকে রুশ সাহিত্যের সেরার মর্যাদা দিয়েছেন।
১#
যখন আপন জনকে হারাবার ভয় থাকে , তখন তাকে যতটা ভালবাসি, সাধারন অবস্থায় তার কিছুই বাসি না।
২#
সমাধিক্ষেত্রে আবেগপূর্ণ আন্তরিক ভাষন যাদের স্পর্শ করে তারা অনাত্মীয়। মৃতের স্ত্রী বা সন্তান সন্তদির কাছে তা নিষ্প্রাণ ও অবান্তর!
৩#
প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে তখনই ভাল করে হৃদয়াঙ্গম করতে পারে যখন তারা নির্বাক!
৪#
সত্যি যে সুখী বা শোকার্ত, বিশুদ্ধ কথায় প্রায়ই সে তৃপ্তি পায় না। সেজন্যই নীরবতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুখ বা দুঃখের চরম প্রকাশ!
৫#
আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, জীবন কী?
অনেকটা ‘গাজর কী?’ জিজ্ঞাসা করার মতো ব্যাপার। গাজর হলো গাজর আর এর চেয়ে বেশি কিছু জানার নাই।
৬#
একাকিত্বকে যদি ভয় পান, আপনার বিয়ে করা ঠিক হবে না।
৭#
ভদকার মতো, টাকাও মানুষকে খামখেয়ালি করে তোলে।
৮#
জন্মের পরে ব্যক্তি তার জীবনে তিনটি রাস্তার যেকোনো একটি বেঁছে নিতে পারে: আপনি যদি ডানে যান, নেকড়ে আপনাকে খেয়ে ফেলবে; যদি বামে যান আপনি নেকেড়েকে খেয়ে ফেলবেন আর সোজা হেটে গেলে আপনি নিজেকেই খেয়ে ফেলবেন।
৯#
ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধা মানুষকে যতটা এক করে তার চেয়ে অনেক বেশি করে নির্দিষ্ট কিছুর প্রতি সবার ঘৃণা।
১০#
কী চমৎকার আবহাওয়া আজ! বুঝতে পারছি না এক কাপ চা খাবো নাকি গলায় ফাঁস নেবো!
১১#
পেটি বুর্জোয়া জীবনের পয়সাকড়ি, লঘু বিলাসিতা, অর্থহীন কথাবার্তা আর প্রথাগত অকেজো নৈতিকতার মতো অশ্লীল আর কিছু নাই।
১২#
মিথ্যা যদি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারেন, অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করবে।
১৩#
সুশিক্ষা মানে এই নয় যে টেবিলক্লথে কখনও ভুল করেও আপনি সস ফেলতে পারবেন না। বরং অন্য কারও যদি পড়েও যায় সেটা না আপনার চোখে না পড়াই হলো সুশিক্ষা।
১৪#
: তুমি সব সময় কালো পোশাক পড়ো কেন?
: আমার নিজের জীবনের জন্যে শোক প্রকাশ করছি।
১৫#
কোনো রোগের জন্যে লোকে যদি বহুরকম ওষুধ নিয়ে আসে, নিশ্চিত হতে পারেন ওই রোগ ওষুধে সারবে না।
১৬#
আমি লক্ষ্য করেছি, বিয়ের পরে মানুষের কৌতূহল কমে যায়।
১৭#
প্রত্যেকেই তার আসল ও সবচেয়ে অদ্ভুত জীবনটা যাপন করে গোপনে।
১৮#
শিল্পীর কাজ প্রশ্ন তোলা, সেগুলার উত্তর দেয়া নয়।
১৯#
ধনীদের চেয়ে গরিবদের কাছে টাকা ধার চাওয়া সহজ।
২০#
কারও কাছে একঘেয়ে বলে মনে হওয়ার গোপন সূত্র হলো সবকিছু বলে দেয়া।
২১#
মানুষের সম্পর্কে অনেক বেশি অকৃত্রিমতা ও আন্তরিকতা থাকা উচিৎ, ইন্টার্যাকশনে সারল্য আর নীরবতা। ক্ষুব্ধ হলে রাগ দেখান, মজার কিছু দেখলে হাসুন, কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর দিন।
২২#
বাস্তব জীবনের উন্মাদনার সাথে কোন শিল্প সাহিত্য পাল্লা দিতে পারে না; এক ব্যারেল যে ইতিমধ্যে খেলে ফেলেছে তাকে এক গ্লাস মদে আপনি মাতাল করতে পারেন না
২৩#
যে বিভ্রম আমাদেরকে মহিমান্বিত করে তা হাজারো সত্যের চেয়ে বেশি আপন মনে হয়।
#২৪
‘প্রত্যেকটি তৃপ্ত সুখী মানুষের দ্বারের পেছনে হাতুড়ি হাতে কারো দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। বারবার আঘাত করে সে কেবল বুঝিয়ে দেবে, পৃথিবীতে দুঃখী মানুষ আছে, স্মরণ করিয়ে দেবে, সুখী মানুষ আজ যতই সুখে থাকুক, কয়েকদিন আগেই হোক আর পরেই হোক, জীবন তার অনাবৃত নখর প্রদর্শন করবেই, তার বিপর্যয় ঘটবেই- আসবে পীড়া,দারিদ্র, ক্ষয়ক্ষতি, আর তখন কেউ তা দেখবে না-শুনবে না। যেমন আজ সে অন্যের দুঃখের কথা শুনছে না।
কিন্তু হাতুড়ি হাতে এমন কোন লোক নেই। সুখী মানুষ জীবন যাপন করে চলেছে, অ্যাসপেন তরুর পত্ররাশিতে বাতাসের কম্পনের মত, ভাগ্যের তুচ্ছ উত্থান পতন তাকে আলগোছে ছুয়ে যাচ্ছে মাত্র, সবই ঠিক আছে!
[চেখভের ‘গুজবেরি’ গল্পে বুড়ো ইভান ইভানিচ আরেক বুড়ো বুরকিনকে বলছে]
২৫#
সেই জ্ঞানের কোনো মূল্য নেই, যেটা বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় না।
২৬#
প্রেমে পড়লেই মানুষ বুঝতে পারে তার আসলে কি করা উচিত।
২৭#
চিকিৎসা পেশা আমার বৈধ স্ত্রী, সাহিত্য আমার গোপন প্রেমিকা।
২৮#
টাকা ভোদকার মতই মানুষকে খামখেয়ালী করে তোলে। আমাদের শহরে ছিল এক বনিক, মৃত্যু শয্যায় সে একবাটি মধু চেয়েছিল! সেই মধু দিয়ে তার সমস্ত ব্যাঙ্কনোট ও লটারির টিকেট খেয়ে ফেলেছিল, যাতে আর কেঊ সেসব না পায়।
২৯#
আমি একদিন রেলস্টেশনে কাজ করছিলাম, এমন সময় এক ভদ্রলোক পড়ে গেল ইঞ্জিনের তলায়- পা-টা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল! রক্তে মাখা লোকটিকে আমরা ধরাধরি করে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে, সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য!লোকটা ব্যাথার যন্ত্রনায় চিৎকার করতে করতে তার কেটে যাওয়া পা-টার খোজ করছিল, কেটে যাওয়া পায়ের বুটের মধ্যে বিশটা রুবল নাকি ছিল তার। ভয় পাচ্ছিল সে-টাকাটা বেহাত না হয়ে যায়!
৩০#
দুঃখীমাত্রেরই অহংবোধ প্রবল, তারা রাগী নিষ্ঠুর, ন্যায় বিচারে অক্ষম, বোকাদের চেয়েও তারা পরস্পরকে কম বোঝে!