You are currently viewing মধ্যযুগের ইউরোপে শূকর, কুকুর ও পোকামাকড়রা যখন আদালতের আসামি

মধ্যযুগের ইউরোপে শূকর, কুকুর ও পোকামাকড়রা যখন আদালতের আসামি

আপনি যদি কয়েক শতাব্দীর আগের ইউরোপের ইতিহাস পড়েন, অনেক হাস্যকর বিষয় আপনার সামনে আসবে। সেসব হাস্যকর বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আদালতে পশুর বিচার।

এডমন্ড পি. ইভান্সের “দ্য ক্রিমিনাল প্রসিকিউশন অ্যান্ড ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস” বইতে লেখক লিখেছেন কিভাবে, অর্ধ সহস্রাব্দেরও কম আগে, প্রাণীদের বিচার করা হয়েছিল, উপহাস করা হয়েছিল, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং নির্বাসিত করা হয়েছিল।

বেশ কিছু নথিপত্র ঘাটাঘাটি করে দেখা যায় কমপক্ষে ৮৫ টি প্রাণীর বিচার করা হয়েছিলো ১২ শতাব্দী থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত।

খুনি শূকর

মধ্যযুগীয় ইউরোপে, খচ্চর, কুকুর, গরু, মুরগি, ইঁদুর এবং এমনকি পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে সমস্ত অপরাধীদের মধ্যে, শূকরদের সবচেয়ে বেশি বিচার করা হয়েছিল।

১৪৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লেভেগনি (সুইজারল্যান্ডের একটি পৌরসভা) তে মধ্যযুগের সবচেয়ে বিচিত্র বিচারের ঘটনাটি ঘটেছিল। বিচারের জন্য আদালতে ৬ টি শূকর কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এই শূকরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো এরা ৫ বছরের একটি শিশুকে হত্যা করেছে এবং হত্যা র শেষে খেয়ে ফেলেছে।

বিচার চলাকালীন, নয়জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন, এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীরা প্রতিনিধিত্ব করেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন শেষে বিচারক তার সাজা ঘোষণা করেন।

শূকরের মালিক, জেহান বেলি, অবহেলার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিল কিন্তু কোন শাস্তি পায়নি। ছয়টি শূকরকে খালাস দেওয়া হয়েছিল, এবং বিচারক নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেনঃ-

যেহেতু বাচ্চা শূকরদের কেও রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া গেছে তাই তারা ছিলো তার মায়ের সহযোগী। যেহেতু তারা ছোট তাই এই কাজে তারা তাদের মা শূকরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তাই বাচ্চা শূকরদের কে তার মালিকের হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল।

আর শিশু হত্যার জন্য মূল আসামি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে মা শূকর কে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বিচারক আদেশ দেন শূকরের পায়ে দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হোক।

জনসাধারণের সামনে শূকরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হচ্ছে Image credit: Wikimedia commons

কুকুরের বিচার

কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপে পিলোরির প্রচলন ছিল। পিলরি ছিলো ৩ টি বড় ছিদ্রযুক্ত কাঠের যন্ত্র। এই যন্ত্রের ছিদ্রে মানুষের দুই হাত ও মাথা ঢুকিয়ে মানুষ কে পাবলিক প্লেসে লজ্জা দেয়া হতো। সাধারণত মিথ্যাবাদী ও অপরাধীদের হীনমন্যতায় ভুগানোর জন্য এই যন্ত্রের প্রবর্তন হয়েছিল।

পিলোরির ব্যবহার ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশেই ব্যবহৃত হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় একবার মানুষের পরিবর্তে একবার এক কুকুর কে পিলোরিতে আটকে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:  মধ্যযুগের ফরাসী নারীরা স্বামীকে কাছে রাখতে বিষ প্রয়োগ করতেন
মধ্যযুগের পিলোরি image credit: Wikimedia commons

১৯ শতকের গোড়ার দিকের কথা, অস্ট্রিয়ার এক দরিদ্র সঙ্গিত বাদক এর কুকুর এক অভিজাত মানুষের পা কামড়ে দেয়। সাথে সাথে পুলিশ কর্তৃপক্ষ সেই কুকুরটিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেখা তাকে রাখা হয় পরের দিন আদালতে বিচার করার জন্য।

পরের দিন আদালতের বিচারক সাধারণ মানুষকে চমকে দিয়ে এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত দেন। তিনি আদেশ দেন সেই কুকুরটিকে আগামী ১ বছরের জন্য পিলোরিতে আটকে জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শনী হিসেবে রাখা হবে। আর তার অবস্থা দেখে সাধারণ পথচারীরা উপহাস ও তামাশা করবে।

অবাঞ্ছিত পোকামাকড়

এডমন্ড পি. ইভান্স তার বই ‘দ্য ক্রিমিনাল প্রসিকিউশন অ্যান্ড ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট অফ অ্যানিমালস’ এ লিখেছিলেনঃ-

চার্চের বিচার বিভাগের দ্বারা এই বিচার গুলো সম্পন্ন হতো, বেশিরভাগ সমই প্রাণীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড জল্লাদ দ্বারা কার্যকর করা হতো। এই অদ্ভুত বিচারের কারন ছিল কুসংস্কার। শুধু যে পশুদের এভাবে বিচার করে হত্যা করা হতো তা নয়, তারা মানুষকে ডাইনি উপাধী দিয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করতো।

Credit: Wikipedia

১৪৭৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ঘটনা। এবার কোনো পশু নয় এবারের আদালতে অপরাধী ছিল পোকামাকড়।

বীজ পোকা ফসল নষ্ট করার পর, পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়। বেশ কিছুদিন আলোচনার পর একটি সমাধানে আসা হয়।

সুইজারল্যান্ডের লুসানের বিশপ ও ধর্মীয় আদালতের প্রধান একটি আইন পাস করেন, সেই রায়ে তিনি পোকামাকড়দের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

Sources: Medievalists, History, JSTOR Daily & History Today.