You are currently viewing নির্মলেন্দু গুণ এর উক্তি : ৪০ টি উক্তি ও পঙক্তি

নির্মলেন্দু গুণ এর উক্তি : ৪০ টি উক্তি ও পঙক্তি

নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী (জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫, ৭ আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ), যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন ও ছবি এঁকেছেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে।

১#

অমিতব্যয়িতা আমার স্বভাব, ব্যক্তিগত জীবনে এবং স্বভাবতই কবিতাতেও। কবিতা কী? জানিনে। ছন্দ কাকে বলে – ভালো করে বুঝিনে। কাব্য বিচারের মানদন্ড কী? – আমি নিরুত্তর। আমি শুধু উড়নচণ্ডি প্রেমিকের মতো অবিবেচক, যুক্তিহীন এবং ব্যক্তিগত। আমার কাছে কবিতা তা-ই, আমি যা লিখি। অন্যের কাছে সেটা গল্প হলেও ক্ষতি নেই, এলজাব্রা হলেও না।

২#

আমরা দুজনে রচনা করেছি
একে অপরের ক্ষতি,
প্রবাসী প্রেমের পাথরে গড়েছি
অন্ধ অমরাবতী।

৩#

ভালোবাসা, অর্থ ও পুরষ্কার আদায় করে নিতে হয়।

৪#

আমি আর কোনো নবযাত্রার আয়োজন করবো না।
বাকি সময়টা আমি তোমার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে চাই।

৫#

আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,
আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য,
আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।
তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য।
শুধু তোমার জন্য।

৬#

আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেব স্ট্রেটকাটঃ ‘ভালোবাসি’।
এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে ওঠে,
অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়,
আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষ চিরে
তোমার প্রতিমা। দেয়ালে টাঙ্গানো কোন প্রথাসিদ্ধ
দেবীচিত্র নয়, রক্তের ফ্রেমে বাঁধা হৃদয়ের কাচে
দেখবে নিজের মুখে ভালোবাসা ছায়া ফেলিয়াছে।
এরকম উন্মোচনে যদি তুমি আনুরাগে মুর্ছা যেতে চাও
মূর্ছা যাবে,জাগাবো না,নিজের শরীর দিয়ে কফিন বানাবো।
‘ভালোবাসি’ বলে দেব স্ট্রেটকাট, আবার যখনই দেখা হবে।

৭#

ভালোবেসে কিছু পাওয়া রেখে গেছো বলে আজো এত হারানোর ভয়, নিজের মুখের কাছে বারবার নত হয়ে আসি; ভাবি, এই মুখ এত সুখী, এত স্মৃতিময়!

৮#

ডাকিব না প্রিয়, কেবলি দেখিব।

৯#

বুকের কার্নিশে এসে মাঝে-মধ্যে বসো প্রিয়তমা,
এখানে আনন্দ পাবে, পাবে খোলা হাওয়া।

১০#

হয় নিদ্রা আসুক, না হয় এক্ষুনি অবসান হোক এই অসহায় রাত্রির।

১১#

আমি আছি, তুমি নেই, এইভাবে দু’জন দু’দিকে।

১২#

তোমার জন্যে কখনো কখনো মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে সাধ হয়।

১৩#

কাগজের দুটো পৃষ্ঠার মতো প্রেম,
কোনোদিন কেউ ছোঁবে না পরস্পর।
চোখের কৃষ্ণ বৃত্ত ঘিরেছে সাদা,
ভালোবাসা তবু আমার ভিতরে একা।

১৪#

কাগজের দুটো পৃষ্ঠার মতো প্রেম,
কোনোদিন কেউ ছোঁবে না পরস্পর।
চোখের কৃষ্ণ বৃত্ত ঘিরেছে সাদা,
ভালোবাসা তবু আমার ভিতরে একা।

১৫#

যা পেতে ইচ্ছে করে, আমি তাকেই বলি সুন্দর।
প্রত্যেকটি প্রাণেরই এক-একটা স্বতন্ত্র চেহারা থাকে।
সুন্দরের কোনো নির্দিষ্ট চেহারা নেই, সে আপেক্ষিক।

১৬#

আমি খুব লক্ষ্য করে দেখেছি তোমাকে,
যখন ঘুমিয়ে পড়ো তুমি, তখন আমার দেহে
প্রাণের আনন্দ বলে কিছুই থাকে না।
শুধু অকারণ, অর্থহীন জ়ীবনে তুচ্ছতার গানি
ছুটে এসে বেদনার বেশে জড়ায় আমাকে।
তখন আমাকে আমি চিনতে পারি না।

১৭#

এখন যখন হঠাৎ তোমাকে ভাবি
সত্য সে-ও স্বপ্ন মনে হয়;
বুঝি প্রেম যত তীব্র, যত সত্য হোক,
সময়ের চেয়ে সত্য নয়।

১৮#

আমার কিছু স্বপ্ন ছিল,আমার কিছু প্রাপ্য ছিল,
একখানা ঘর সবার মতো আপন করে পাবার,
একখানা ঘর বিবাহিত, স্বপ্ন ছিল রোজ সকালে
একমুঠো ভাত লঙ্কা মেখে খাবার।

১৯#

ভালোবাসা, কী নাম তোমাকে দিবো?
তুমি তো আমারই নাম, আমারই আঙুল ছোঁয়া
আলিঙ্গনে বন্ধ সারাবেলা।

২০#

তোমাকে ভুলেছি স্বপ্নে, প্রেমে, অভ্যাসে, বেদনায়।
এখন বুকের মাঝে বন্ধন মুক্তির মৃদু-হাওয়া,
হাত তুলে অনায়াসে বিদায় দিয়েছি গত রাতে।
সুখে আছি, সুখলতা, বেঁচে থেকে বেদনা সহিতে।

২১#

সবাই যে জাল ছিঁড়তে জানে
সময় কি আর সে জাল টানে?
আমিও সেই জাল টানি না।
তোর প্রেমের ঐ সিংহাসনে,
সবাই কি আর বসতে জানে?

২২#

আমায় তুমি যতোই ঠেলো দূরে
মহাকাশের নিয়ম কোথায় যাবে?
আমি ফিরে আসবো ঘুরে ঘুরে
গ্রহ হলে উপগ্রহে পাবে।

২৩#

ভাসাও আমারে অকূল সাগরে,
নিয়ে চলো প্রিয় যতো দূরে।
সেই মহাসিন্ধু দেখাও আমারে,
যার শেষ নাই, – নাই তীর যে।

২৪#

নিজের জলেই টলমল করে আঁখি,
তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি।
চেষ্টা করেও রাখতে পারি না ধরে,
ভয় হয় আহা এই বুঝি যায় পড়ে।

২৫#

আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে।

২৬#

ফুলগুলিকে ভালোবাসি, তাই তুলি না,
মুখগুলিকে লুকাই মরা ঘাসে।
ভুলগুলিকে নিজের ভাবি, তাই ভুলি না,
বেদনা পাই তোমার পরবাসে।

২৭#

তোমার ভালোবাসায় আমি অনশ্বর, অমর হয়েছি।
তোমাকে দেখার আগে আমি শিলা পাথর ছিলাম।
অচেতনের সাগরজলে আমি ভাসিতেছিলাম একা।

২৮#

চেতনার প্রথম প্রভাতে, চোখ মেলে সেই যে আমি
চমকে উঠলাম তোমাকে দেখে, আজও আমার সে
ঘোর কাটেনি; পঞ্চাশসহস্র বর্ষ পার হয়ে গেলো।

২৯#

আমার দুঃখ আমিই কিছুটা বুঝি
কেউ যদি তার বেদনার দায়ভাগে
ভিখারির দাবি শোধ করে থাকে আগে
ইঙ্গিতে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে আমি
আরো আগামীর বেদনার ভাষা খুঁজি।

৩০#

তীরের তরঙ্গ এসে বলে যায় সমুদ্রের কানে: ‘সব প্রেম ফিরে পাবে, কিচ্ছু হারাবে না।

৩১#

প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়,
আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়।
তোমরা মানুষ, তাই সহজেই দুঃখ পাও,
হে ঈশ্বর, আমাকে আকাশ করে দাও।

৩২#

আমার ভালোবাসা কিংবা প্রেম-সংক্রান্ত
কোনো স্মৃতি নেই, যাকে ঠিক ভালোবাসা
কিংবা প্রেম বলা যায়।

৩৩#

এখনো বাসিনি ভালো পুরোপুরি,
আয়ত্তে রেখেছি কিছু প্রেম,
অপূর্ণ রেখেছি কিছু অন্তরঙ্গ বোধের বাসনা;
কল্পনায় ঘিরে আছি অন্ধ-যৌন রূপের কংকাল।
যদি ব্যর্থ হই এরকম নিঃসঙ্গ খেলায়
কুরে খাবো চর্বচোষ্য লাবণ্য তোমার,
আলিঙ্গন ভরে দেবো অজস্র বাহুর পিপীলিকা।
সবাই পড়েছে প্রেমে, আমি সকলের চেয়ে বেশি।

৩৪#

অনুশোচনা হচ্ছে পাপ, দুঃখের এক নিপুণ ছদ্মবেশ। তোমাকে বাঁচাতে পারে আনন্দ। তুমি তার হাত ধরো,
তার হাত ধরে নাচো, গাও, বাঁচো, ফুর্তি করো।
দুঃখকে স্বীকার করো না, মরে যাবে, ঠিক মরে যাবে।

৩৫#

আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,
মাথার চুল মেঘের মতো উড়ুক ।
আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,
স্বপ্নগুলো ছায়ার মতো ঘুরুক

৩৬#

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
তারপর হব ইতিহাস।

৩৭#

এত যে আমি ওখানে যাই
ওখানেই পাই কাছে
ওইখানে তার পায়ের কিছু
চিহ্ন পড়ে আছে।

৩৮#

কিছুই সহজ নহে, বেদনা সহজ নহে,
বিরহ সহজ নহে, মিলন সহজ নহে।
কী তবে সহজ?
কিছুই সহজ নহে যদি, নদী কি সহজ?
নাকি সহজ কঠিন? সহজ কঠিন ভেবে
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।

৩৯#

প্রাণে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বী
বাসনা ঢেউ,
তোমাকে পাবে না পরান ভরিয়া
আমি ছাড়া কেউ।

৪০#

আমি কি জানি না, এই বৈরি-পৃথিবীতে
শুধু তুমি ছাড়া কতটা দুর্লভ ছিল সুখ?
আমি কি জানি না, এই নিস্তরঙ্গ অকূল পাথারে
তুমি ছাড়া কতটা অসহ্য ছিল বাঁচা!

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.

Leave a Reply