আরজ আলী মাতুব্বর একজন বাংলাদেশী দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন।
গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেয়া হত। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন।
ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে। তিনি তার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’।
তিনি বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্যপদ (১৯৮৫), বাংলাদেশ লেখক শিবিরের ‘হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭৮) ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (বরিশাল শাখা) সম্মাননা (১৯৮২) লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আজকের এই ব্লগ পোস্টে থাকছে দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বলা বিখ্যাত কিছু উক্তির সংকলন।
১#
বিদ্যা শিক্ষার ডিগ্রি আছে, জ্ঞানের কোনো ডিগ্রি নেই: জ্ঞান ডিগ্রিবিহীন ও সীমাহীন।
২#
জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই নয়, সকল মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে আবদ্ধ হলে চলেনা। সীমানাকে অতিক্রম করে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যেই ক্রমশ অতিক্রম করা যাবে নিজেকে।
৩#
লাইব্রেরীই আমার তীর্থস্থান। আমার মতে মন্দির, মসজিদ, গির্জা থেকে লাইব্রেরী বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।
৪#
কোন ব্যক্তি যদি একজন ক্ষুদার্থকে অন্নদান ও একজন পথিকের মাল লুন্ঠন করে ও অন্য কাউকে হত্যা করে অথবা একজন গৃহহীনকে গৃহদান করে এবং অপরের গৃহ করে অগ্নিদাহ, তবে তাহাকে ‘দয়াময় ‘বলা যায় না।
৫#
বিশ্ব মানবতাবাদ হোক মানব ধর্ম।
৬#
জ্ঞানের কোন ডিগ্রী নাই। জ্ঞান ডিগ্রী বিহীন ও সীমাহীন। সেই অসীম জ্ঞানার্জনের মাধ্যম স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তা হচ্ছে লাইব্রেরী।
৭#
অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে আমি ঘৃনা করি পুরীষেরমত, আদর করি মানবতার”।
৮#
লাইব্রেরী অ-মানুষকে মানুষ বানাতে পারে, পারে অন্ধবিশ্বাস ও কু-সংস্কার দূর করতে।
৯#
একটা দেশের সমাজ অশিক্ষা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হলে সে দেশের রাজনীতিও স্বচ্ছ হবে।
১০#
যা কিছু দুর্ভেয় এবং রহস্যময়, তা সত্য নাও হতে পারে।
১১#
সকলেই বলিয়া থাকেন যে, তাঁহাদের আপন আপন ধর্মই একমাত্র সত্যধর্ম, অন্য কোন ধর্মই সত্য নহে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্বর্গপ্রাপ্তি, পরিত্রাণ, নির্বাণ বা মোক্ষলাভ ঘটিবে না। এ যেন বাজারের গোয়ালাদের ন্যায় সকলেই আপন আপন দধি মিষ্ট বলে।
১২#
লাইব্রেরি আমার তীর্থস্থান।
যার মধ্যে মনুষ্যত্ব গুন নাই,সে কখনো স্রষ্টার অন্তরঙ্গ হতে পারে না।
রমজান আল সিয়াম
বাঙালি উয়ীয়মান কবি, লেখক, গীতিকার,অভিনেতা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী।