You are currently viewing আনিসুল হকের উক্তি : ১০ টি উক্তি

আনিসুল হকের উক্তি : ১০ টি উক্তি

আনিসুল হক (জন্ম: মার্চ ৪, ১৯৬৫) একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে তার লেখা মা বইটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায় এবং ভুবনেশ্বর থেকে ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

১#

আমি শিল্পী নই, কিন্তু ছবি–রংতুলি দেখলে হাত আপনিই ছুটে যায়; আমি লেখক নই, কিন্তু লিখতে লিখতে লিখতে আয়ু ক্ষয় করে ফেললাম, আমি কবি নই, কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোকে আকার দিতে জীবনপাত করে যেতে রাজি আছি। একটা জীবন কিছুই করলাম না, নিজের মতো করে জীবনটাই যাপন করলাম না। বড় দুঃখী একটা মানুষ আমি। আমার সেই দুঃখ আমি ভুলে যাই, যখন আমি লিখি, যখন আমি আঁকি!

২#

‘আমি বারবার বলি, মা উপন্যাসটি আমার মাধ্যমে লিখিত হয়েছে বটে, কিন্তু এটি আসলে শহীদ আজাদ তাঁর বুকের রক্ত এবং তাঁর মা অশ্রু দিয়ে লিখেছেন। মাকে আমরা সবাই ভালোবাসি, দেশকেও ভালোবাসি। কাজেই মা যে বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠবে, এতে আমার খুব কৃতিত্ব নেই। আমি অনুরোধ করে কাউকে মা উপন্যাস অনুবাদ করতে বলেছি, তা নয়। একেকজন পড়েছেন ও মনে করেছেন, বইটি অনূদিত হওয়া উচিত, মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো উচিত। তাঁরা তা করেছেন।’

৩#

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃক হবি?

৪#

কাজেই এই দূষণ, এই কুয়াশা, এই মেঘ, ভূমধ্যসাগর থেকে আসা নয়, আমাদের খাসলতের মধ্য-সাগর থেকে আসা। খাসলত কখন মরে! স্বভাব যায় না ম’লে! আমরা করোনায় মরব, নিউমোনিয়ায় মরব, হাঁপানিতে মরব, শ্বাসকষ্টে মরব, তবু আমাদের স্বভাব ভালো হবে না। ভূমধ্যসাগরের মেঘ কেটে যাবে, ঢাকার আকাশ পরিষ্কার হবে না হবে না হবে না। করোনা চলে যাবে, প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে ঠিকই, কিন্তু রমনায় গিয়ে তারা শ্বাস নিতে পারবে না পারবে না পারবে না।

৫#

আমাদের জীবনে আমরা কলুর বলদের মতো চোখে ঠুলি পরেছি, মাড়াইয়ের গরুর মতো মুখে টোপর পরেছি, আর একই চক্রে ঘুরছি। আমরা দেখি না, আমরা খাই না। শুধু তা–ই না, আমরা বলিও না। সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, মানুষের চোখ আছে তা দেখবার জন্য শুধু নয়, কাঁদবারও জন্য। আমরা বলি, মানুষের মুখ আছে, তা কেবল খাওয়ার জন্য নয়, বলবারও জন্য। আমাদের মুখে আমরা মুখোশ পরে আছি। আমরা মুখ দেখাব না এবং আমরা কিছু বলবও না। বোবার শত্রু নেই।

৬#

বলতে চাইছি, রাষ্ট্রগুলো কেবল নিজেদের স্বার্থ দেখে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সাম্য, মৈত্রী কেবল নিজের জন্য, অন্যদের জন্য নয়।

৭#

আমাদের অফিস যেখানে, কারওয়ান বাজারে, একটা পরিবার সারাটা দিন, বাসের নিচে দিনের বেলাটা কাটিয়ে দেয়। দুটো শিশু বাসের নিচে ঘুমায়, খেলা করে। পাঁচটার পরে বাসটা চলে যায়, তারা উঠে আসে বহুতল অফিস ভবনের এক পাশের উঁচু বেদিতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেলি: আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ।

৮#

আমরা একটা চক্রে পড়ে গেছি। রাষ্ট্রগুলো, ব্যবস্থাগুলো আমাদের মুক্তি দেয় না, আমাদের ক্রমাগতভাবে বন্দী করে। আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার তো দেয়ই না, বরং আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলার অধিকার, আমাদের কথা বলার অধিকার ক্রমাগতভাবে সংকুচিত করাই রাষ্ট্রের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৯#

মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মায়, কিন্তু সবখানেই সে শিকলে বাঁধা। আমাদের দেহই তো একটা কারাগার। নারী–পুরুষ বা তৃতীয় লিঙ্গ, বাঙালি–অবাঙালি, প্রতিবন্ধী–চৌকস, বুদ্ধিমান–বুদ্ধিকম, একালের–সেকালের কত রকমের শিকলে যে আমরা বাঁধা।

১০#

আমরা এই ক্ষমতাকাঠামো এবং মূল্যবোধের কাঠামোর বাইরে যেতে পারি না। কেউ যদি যায়, তাহলে তাকে মানসিক হাসপাতালে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, না হলে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাজেই মানুষের মুক্তি নেই।

Leave a Reply