সুভাষচন্দ্র বসু (২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ – ?) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নেতা, যিনি এই সংগ্রামে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। উঁনি নেতাজি কিংবা নেতাজী নামেও সমধিক পরিচিত। সুভাষচন্দ্র বসু পরপর দুবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। সে কারণে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। তার চির-অমর উক্তি— “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
১
যে সৈনিকরা সর্বদা তাদের জাতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, যারা সর্বদা তাদের জীবন উত্সর্গ করতে প্রস্তুত, তারা অজেয়।
২
রাজনৈতিক দর কষাকষির গোপনীয়তা হলো আপনি যা যা করছেন তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী দেখানো।
৩
মনে রাখবেন যে সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো অন্যায় ও অন্যায়ের সাথে আপস করা।
৪
আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা হলো, দারিদ্র, অশিক্ষা, রোগ, বৈজ্ঞানিক উৎপাদন। যে সমস্যাগুলির সমাধান হবে, কেবলমাত্র সামাজিকভাবনা চিন্তার দ্বারা।
৫
ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনও পরিবর্তন আলোচনার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
৬
মানুষ যতদিন বেপরোয়া ততদিন সে প্রানবন্ত।
৭
আমাকে রক্ত দিন এবং আমি আপনাকে স্বাধীনতা দেব!
৮
মহাত্মা গান্ধীর এমন কিছু আছে যা ভারতীয় জনগণের কাছে আবেদন করে। অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করা তিনি সম্ভবত একটি পুরোপুরি মিসফিট হতে পারে।
৯
ভুলে যাবেন না যে গুরুতর অপরাধটি অন্যায় এবং অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করা। চিরন্তন আইন মনে রাখবেন: আপনি পেতে চাইলে অবশ্যই দিতে হবে।
১০
জগতের সব কিছু ক্ষণভঙ্গুর। শুধু একটা জিনিস ভাঙে না, সে বস্তু, ভাব বা আদর্শ।
১১
এটি কেবল অঘোষিত জাতীয়তাবাদ এবং নিখুঁত ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই মুক্তি পেতে পারে ভারতীয় মুক্তি বাহিনী।
১২
শক্তিশালী প্রতিপক্ষ-কে তখনই হারানো সম্ভব যখন একটা বাহিনী নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং ভয়ডরহীনতা ও অপরাজেয় হওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি করতে পারবে।
১৩
সৈনিক হিসাবে, আপনাকে সর্বদা বিশ্বস্ততা, কর্তব্য এবং ত্যাগের তিনটি আদর্শকে লালন করতে হবে এবং বেঁচে থাকতে হবে। যে সৈনিকরা সর্বদা তাদের জাতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, যারা সর্বদা তাদের জীবন উত্সর্গ করতে প্রস্তুত, তারা অজেয়। আপনিও যদি অদম্য হতে চান তবে এই তিনটি আদর্শকে আপনার অন্তরের অন্তঃস্থলটিতে খোদাই করুন।
১৪
একজন সৈনিক হিসাবে সবসময় তিনটি জিনিসের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, এগুলি হলো – আনুগত্য, দায়িত্ব এবং বলিদান। যদি নিজেকে সত্যি অপরাজেয় করতে চাও, তাহলে এই তিনটি আদর্শকে হৃদয়ের অন্তর থেকে জাগ্রত করতে হবে।
১৫
আমাদের স্বাধীনতার জন্য নিজের রক্ত দিয়ে মূল্য প্রদান করা আমাদের কর্তব্য।
১৬
ভুলে যেও না গুরুতর অপরাধ অবিচার ও অন্যায়ের সঙ্গেই সমঝোতা করতে শেখায়। তবে স্মরণ করো অন্তরাত্মাকে। যদি কিছু পেতে হয় তাহলে তোমাকে দিতে হবে।
১৭
সংঘাত কাউকেই মানুষ করে তোলে। দ্বন্দ্ব আত্মবিশ্বাসের দিকে নিয়ে যায়।
১৮
একটা আদর্শকে খাড়া করতে একজন মরে যেতে পারে, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেই আদর্শ নিজে থেকেই হাজার হাজার মানুষের আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলে।
১৯
সাফল্য সর্বদা ব্যর্থতার স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে।
২০
রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করাটা আমাদের কর্তব্য। যে স্বাধীনতা আত্মত্যাগ ও শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে অর্জন করা যাবে তাকে আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে রক্ষা করার মতো স্বাবলম্বী হবো।
২১
যদি আপনাকে সাময়িকভাবে মাথা নত করতে হয়, তবুও নায়কদের মতো বাঁকান।
২২
ধ্বংস ও সৃষ্টিলীলার মধ্যে যে আত্মহারা হইতে পারে একমাত্র সেই ব্যক্তিই তরুণ। তারুণ্য যার আছে সে ধ্বংস ও সংগ্রামের ছায়া দর্শনে ভীত হয় না। অথবা নব সৃষ্টিরূপ কার্যে অপারগ হয় না।
২৩
শুধুমাত্র চিন্তার জন্য কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু, সেই চিন্তা আজীবন অমৃত থাকে এবং তা একজন থেকে আরেকজনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
২৪
একটি জাতি বেঁচে থাকতে পারে, যতক্ষণ যে ব্যক্তিদের নিয়ে সেই জাতি গঠিত তারা যখনই প্রয়োজন দেখা দিবে জাতির স্বার্থে মৃত্যুবরণ করিতে প্রস্তুত থাকিবে।
২৫
মায়ের ভালবাসা নিঃস্বার্থ ও গভীর। এটি কোনওভাবেই পরিমাপ করা যায় না।
২৬
যে নেতা জনতার মনস্তত্ত্ব ভালো মতো বোঝে সেই নেতারই প্রভাব বেশি, ক্ষমতা বেশি, সাফল্য বেশি।
২৭
যদি জীবনে সংগ্রাম, ঝুঁকি না থাকে, তাহলে বেঁচে থাকা অনেকটা ফিকে হয়ে যায়।
২৮
স্বাধীনতা বলিতে আমি বুঝি সমাজ ও ব্যক্তি, নর ও নারী, ধনী ও দরিদ্র সকলের জন্য স্বাধীনতা, শুধু ইহা রাষ্ট্রীয় বন্ধন মুক্তি নহে, ইহা অর্থের সমানবিভাগ, জাতিভেদ ও সামাজিক অবিচারের নিরাকরণ ও সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি বর্জনও সূচিত করে।
২৯
শুধু মানুষ, অর্থ, এবং সামগ্রী দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। আমাদের মধ্যে একটা চালিকা শক্তি-র প্রেরণা থাকতে হবে যা সাহসী পদক্ষেপ নিতে ও নায়কোচিত কর্মদ্যোমে উদ্বুদ্ধ করবে।
৩০
সত্য এবং ত্যাগ—এই দুইটি আদর্শ রাজনীতির ক্ষেত্রে যতই লোপ পাইতে থাকে, রাজনীতির কার্যকারিতা ততই হ্রাস পাইতে থাকে।
৩১
প্রকৃতির সঙ্গ না পেলে জীবনটাই বৃথা, ঠিক যেন মরুলোকে নির্বাসনের মতো।
৩২
সত্যান্বেষণ না করা পর্যন্ত আমরা চুপ করে বসে থাকব না, বা থাকা উচিত নয়।
৩৩
অন্তরের জাগরণ থেকে সজাত এবং ভবিষ্যৎ সমাজ সম্পর্কে এক নতুন বিশ্বাস এবং স্বপ্ন দ্বারা অনুপ্রাণিত যুব আন্দোলন ব্যতীত যুবকদের দ্বারা পরিচালিত প্রত্যেকটি আন্দোলনকেই আমি যুব-আন্দোলন বলে মনে করি না।
৩৪
স্বাধীনতা কেউ কাউকে দেয় না, সেটা অর্জন করে নিতে হয়।
৩৫
নিজের প্রতি সত্য হলে বিশ্বমানবের প্রতি কেউ অসত্য হতে পারে না।
৩৬
বাস্তব বোঝা কঠিন। তবে, জীবনকে সত্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সত্যকে গ্রহণ করতে হবে।
৩৭
রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যে মধ্যে মতান্তর হওয়া অনিবার্য এবং মতান্তরের জন্য ঝগড়া বিবাদ হওয়াতে বোধ হয় তদ্রুপ অনিবার্য। কিন্তু মতান্তর যেন মনান্তরে পরিণত না হয় এবং ব্যক্তি নিন্দা ও গালাগালি যেন আমাদের অস্ত্র না হইয়া দাঁড়ায়।
৩৮
বিভিন্ন সভ্যতার ও শিক্ষার সংঘর্ষের দরুন চিন্তাজগতে বিপ্লব উপস্থিত হয়। এই বিপ্লবই জাতির চৈতন্যের লক্ষণ।
৩৯
জীবনকে এমন একটি ভাবধারার মধ্যে তুলে ধরতে হবে, যাতে সত্যতা পূর্ণমাত্রায় থাকে।
৪০
সার্থক শিল্পী বা সঙ্গীতজ্ঞের এমন একটা সুকুমার স্পর্শবোধ এবং এমন সূক্ষ্ম অনুভূতি থাকে যা তার শিক্ষা বা চর্চা থেকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। যদি শুরু থেকেই তার মধ্যে সহজাত একটা শৈল্পিক প্রবণতা না থাকে সে কখনোই শিল্প-নৈপুণ্যের শীর্ষে উঠতে পারে না।