দুর্গেশনন্দিনী সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত প্রথম উপন্যাস। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। ১৮৬৫ সালের মার্চ মাসে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্রের চব্বিশ থেকে ছাব্বিশ বছর বয়সের রচনা। এই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলা কথাসাহিত্যের ধারায় এক নতুন যুগ প্রবর্তিত হয়।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে উড়িষ্যার অধিকারকে কেন্দ্র করে মোঘল ও পাঠানের সংঘর্ষের পটভূমিতে এই উপন্যাস রচিত হয়। তবে এটিকে সম্পূর্ণরূপে ঐতিহাসিক উপন্যাস মনে করা হয় না। কোনো কোনো সমালোচক এই উপন্যাসে ওয়াল্টার স্কটের আইভানহো উপন্যাসের ছায়া লক্ষ্য করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবদ্দশায় এই উপন্যাসের তেরোটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং ইংরেজি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষাতেও এটি অনূদিত হয়েছে।
১
সত্যকে যেমন আছে তেমনি বলিতে হইবে, তদ্বিরূপ করিলে সে সত্য আর থাকে না।
২
ধর্ম যদি হৃদয়ে না থাকে, তবে মন্দিরে গিয়া কৃতার্থ হইবে না।
৩
স্ত্রীলোকের পরিচয়ই বা কী? যাহারা কুলোপাধি ধারণ করিতে পারে না, তাহারা কী বলিয়া পরিচয় দিবে? গোপনে বাস করা যাহাদিগের ধর্ম, তাহারা কী বলিয়া আত্মপ্রকাশ করিবে? যেদিন বিধাতা স্ত্রীলোককে স্বামীর নাম মুখে আনিতে নিষেধ করিয়াছেন, সেইদিন আত্মপরিচয়ের পথও বন্ধ করিয়াছেন।
৪
ভালোবাসা সহজ নয়, তাহা মন জানে, হৃদয় জানে, দেহ জানে, কিন্তু ভাষা জানে না।
৫
তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?
৬
স্মৃতিচিহ্ন অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়া নিঃশেষ করিতে পারিলাম, স্মৃতিও ত সত্তাপে পুড়িতেছে, নিঃশেষ হয় না কেন?
৭
তুমি যাহা ইচ্ছা তাহা কর, দিন যাবে, রবে না। যে অবস্থায় ইচ্ছা, সে অবস্থায় থাক, দিন যাবে, রবে না। পথিক!
৮
বয়সে কি যৌবন যায়? যৌবন যায় রূপে আর মনে; যার রূপ নেই, সে বিংশতি বয়সেও বৃদ্ধা; যার রূপ আছে, সে সকল বয়সেই যুবতী। যার মনে রস নাই সে চিরকাল প্রবীণ; যার রস আছে সে চিরকাল নবীন।
৯
যাহার প্রেম নাই, তাহার হৃদয় নাই— হৃদয়হীন মনুষ্য পশুর অপেক্ষা অধম।
১০
নারীর রূপের মধ্যে কখনো কখনো এমন একটি শোভা থাকে, যাহা দেখিলে কৃতজ্ঞতা জন্মে।