You are currently viewing চীনের আটলান্টিস

চীনের আটলান্টিস

ছবি দেখে হয়তো মনে হতে পারে, এগুলো ডিসি কমিকসের ‘অ্যাকুয়াম্যান’ মুভির কোনো দৃশ্য। পৌরাণিক সেই আটলান্টিস নগরী। কিন্তু আসলে কল্পনার আটলান্টিস নয়, বাস্তবেরই এক নগরীর দৃশ্য এটা। আটলান্টিসের মতোই জলের নিচে তলিয়ে যাওয়া এক শহর। তবে তফাৎটা হচ্ছে, এই শহরটাকে ইচ্ছে করেই তলিয়ে দেয়া হয়েছিলো পানির নিচে। তাও বেশিদিন আগে নয়। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে।

Shicheng, China

(Photo Courtesy: Chinese National Geography)



নগরীটার নাম হচ্ছে ‘শিচেং’। শিচেং শব্দের মানে হচ্ছে ‘সিংহ নগরী’। বর্তমানে চীনের জুওজিয়াং প্রদেশের চিয়ানদাও লেকের নিচে তলিয়ে আছে শহরটা। চিয়ানদাও লেকটা মনুষ্য নির্মিত। ১৯৫০-১৯৬০ এর দশকে চীন যখন ধীরে ধীরে শিল্পায়নের যুগে প্রবেশ করছিলো, গড়ে উঠছিলো আধুনিক সব কল-কারখানা, তখন এই স্থানে একটা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। সেই সময়েই বাঁধ তৈরি করে জলের নিচে তলিয়ে দেয়া হয় শহরটাকে। শহরের কয়েক লাখ অধিবাসীকে স্থানান্তরিত করা হয় অন্যত্র। এদের মাঝে অনেকেই শত শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছিলো এই শহরে। শুধু তাই নয়। ১৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই শহরটি মিং এবং পরবর্তীতে চিং সাম্রাজ্যের অধীনে বেশ সমৃদ্ধ একটা শহর ছিলো প্রায় এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু কৌশলগত কারণে চীন এই শহরকে পানিতে তলিয়ে দিয়ে এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরে বৈশ্বিক শিল্পায়নের প্রতিযোগিতায় চীনকে দৌড়াতে সহায়তা করতে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলো।

Photo Courtesy: Chinese National Geography



১৯৫৯-এ জলের অতলে হারানোর পর একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলো সবাই এককালের এই প্রাণচঞ্চল নগরীটার কথা। পঞ্চাশ বছর পরে ২০১০-২০১১’র দিকে হঠাৎ চীন সরকারের খেয়াল হয় শহরটা এখন কী অবস্থায় আছে, সেটা দেখার। ডুবুরি দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে তখন তুলে আনা হয় পোস্টের ছবিগুলো। প্রকাশ করে চীনের ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওয়েবসাইটে। দেখা যায়, পানির নিচে আলো-বাতাস-ঝড়-ঝঞ্জা ইত্যাদি হতে দূরে থেকে বেশ ভালো অবস্থাতেই আছে শহরটা।



চীন সরকার এটা পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত করে রেখেছে। প্রতি বছরে ডাইভিংয়ে এক্সপার্ট অনেক মানুষজন গভীর জলে ডুব মেরে দেখে আসেন শিচেং শহরটাকে। এককালের প্রাণচঞ্চলতায় ভরপুর যে শহরটা এখন জলের নৈঃশব্দতায় আর আলো-আঁধারিতে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে বাস্তবের আটলান্টিস হয়ে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি

Photo Courtesy: Chinese National Geography

Leave a Reply