হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় সংযোজন। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি তার স্বকীয় লেখনী এবং গভীর জীবনবোধের প্রথম সার্থক দৃষ্টান্ত। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন জীবন, তাদের হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা এবং মানসিক জটিলতাকে কেন্দ্র করে এর আখ্যানভাগ রচিত হয়েছে।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাবেয়া, যে একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত তরুণী, তার নিষ্পাপ দৃষ্টিতে সমাজের বাস্তবতা এবং মানবিক সম্পর্কগুলোর এক ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। লেখক অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে রাবেয়ার মনোজগতকে তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। গল্পের অন্যান্য চরিত্রগুলোও এত জীবন্ত যে মনে হয় তারা আমাদেরই চেনা জগতের মানুষ। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া, সীমাবদ্ধতা এবং মানবিক দুর্বলতা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিত্রিত হয়েছে।
নন্দিত নরকে শুধু একটি পারিবারিক গল্প নয়, এটি মানব মনের অন্ধকার দিকগুলো এবং সমাজের নিষ্ঠুরতার এক আয়না। উপন্যাসের ভাষা সহজ, সরল এবং সাবলীল, যা হুমায়ূন আহমেদের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি এমন এক জাদুকরী ভঙ্গিতে গল্প বলেছেন যে পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে বাধ্য করে। বইটির প্রতিটি পাতায় মিশে আছে বিষণ্ণতা, মানবিকতা এবং জীবনের এক অমোঘ সত্যের অনুসন্ধান।
১
স্মৃতি সে সুখেরই হোক আর বেদনারই হোক – সবসময় করুণ।
২
ভালোবাসা যতটা না প্রকাশ করা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি অনুভব করা যায়।
৩
জীবনটা অনেকটা পানির মতো—রংহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন। অথচ এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪
জীবন কখনো সরল নদীর মতো হয় না, এর ঢেউ আর গভীরতা বুঝতে পারলে তোমার ভয় কমে যায়।
৫
অপ্রকাশ্য কষ্টই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।
৬
মৃত্যু আসলে খুব সাধারণ একটি ঘটনা, কিন্তু আমরা সেটাকে অস্বাভাবিকভাবে ভাবি।
৭
বৃষ্টির দিনে যারা একা থাকে, তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট চেনে।
৮
সব ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত।বৃত্ত দিয়ে ঘেরা।এর বাইরে কেউ যেতে পারে না।
৯
মেয়েদের মানসিক প্রস্তুতি শুরু হয় ছেলেদেরও আগে। তারা তাদের কচি চোখেও পৃথিবীর নোংরামি দেখতে পায়। সে নোংরামির বড় শিকার তারাই। তাই প্রকৃতি তাদের কাছে অন্ধকারে খবর পাঠায় অনেক আগেই।
১০
রাবেয়া হয়তো ঠিক রুপসী নয়। কিংবা কে জানে হয়তো রুপসী। রঙ হালকা কালো। বড় বড় চোখ, স্বচ্ছ দৃষ্টি, সুন্দর ঠোঁট। হাসলেই চিবুক আর গালে টোল পড়ে। যে সমস্ত মেয়ে হাসলে টোল পড়ে তারা কারণে অকারণে হাসে। তারা জানে হাসলে তাদের সুন্দর দেখায়।
১১
নদীর মতোই কিছু সম্পর্ক ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়, ফিরে আসে না আর।
১২
কে যেন বলেছিলো,সিগারেটের আনন্দটা আসলে সাইকোলজিক্যাল। তুমি একটা কিছু পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছো,তার আনন্দ। অনেকে আবার বলেন, নিঃসঙ্গের সঙ্গী।
১৩
রাতের আঁধারে মানুষ সবকিছু ভুলে যেতে চায়, অথচ এই রাতই সব মনে করিয়ে দেয়।
১৪
সে কখনোই জানবে না আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। আর আমি কখনোই বলব না।
১৫
ভালোবাসা কখনো দাবি করে না, ভালোবাসা শুধু দিতে জানে।