হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত।
তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র। প্রিয় পাঠক আজকের এই ব্লগ পোস্টে থাকছে হুমায়ূন আহমেদ এর সেরা ১০০ টি বাছাইকৃত উক্তি।
১#
❝চলে যায় বসন্তের দিন! কী অদ্ভুত কথা। বসন্তের দিন কেন চলে যাবে? কোনো কিছুই তো চলে যায় না। এক বসন্ত যায়, আরেক বসন্ত আসে। স্বপ্ন চলে যায়, আবারো ফিরে আসে।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (চলে যায় বসন্তের দিন)
২#
❝আমরা সব সময় বলি— সব মানুষ সমান। একজনের সঙ্গে আরেকজনের কোনো প্রভেদ নেই। কার্যক্ষেত্রে কখনোই সেরকম দেখা যায় না। শুধু শেষ সময়ে, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি এসে সব মানুষ এক হয়ে যায়। শুধু তখনই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাস্তায় ইট ভাঙে যে মেয়ে তার মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (তোমাদের এই নগরে)
৩#
❝রাগলে মানুষের চোখ ছোট হয়ে যায়। আনন্দিত মানুষের চোখ হয় বড় বড়।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর রূপালী রাত্রি)
৪#
❝পুরুষ জাতির অনেক দুর্বলতার এক দুর্বলতা হচ্ছে,
তারা মনে করে মেয়ে মাত্রই তার প্রেমে পড়ার জন্যে পাগল হয়ে আছে।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (তোমাদের এই নগরে)
৫#
❝সঙ্গপ্রিয় মানুষের জন্য নিঃসঙ্গতার শাস্তি কঠিন শাস্তি। এই শাস্তি মানুষকে বদলে দেয়।❞
—হুমায়ূন আহমেদ
৬#
ভোর বেলা মেজাজ মোটামুটি ভালো থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হতে থাকে, বিকাল বেলায় মেজাজ সবচে’ বেশি খারাপ হয়, সন্ধ্যার পর আবার ভালো হতে থাকে। এটাই সাধারণ নিয়ম।
—হুমায়ূন আহমেদ (তন্দ্রাবিলাস)
৭#
❝মেয়ে মানুষের দুঃখ তো বলে বেড়াবার নয়; ঢেকে রাখবার।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (শঙ্খনীল কারাগার)
৮#
❝বড় বড় সমস্যার সমাধান অতি সহজেই করা যায়। ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করাই কঠিন।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা)
৯#
❝বিত্তবান মানুষরা কল্পনা করতে পারেনা। তারা বাস্তব নিয়ে এত ব্যাস্ত থাকেন যে কল্পনা করার সময় পাননা।কল্পনা না করতে করতে তাদের কল্পনা করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি ও মেঘমালা)
১০#
যারা কম বুঝতে পারে, এই পৃথিবীতে তারাই সবচে সুখি।
—হুমায়ূন আহমেদ (তন্দ্রাবিলাস)
১১#
❝ইউনিভার্সিটির পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে, হাসি হাসি করে জিজ্ঞেস করা হয়— তারপর কি খবর ভালো আছেন? এখন কি করছেন?
কলেজের পুরানো বন্ধুর সঙ্গে বলা হয়— আরে তুমি? কেমন আছো?
আর স্কুল লেভেলের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে— একজন আরেকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে— তাই নিয়ম।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর রূপালী রাত্রি)
১২#
❝বউ মানেই তো কোমল একটা ব্যাপার। স্বপ্ন এবং কল্পনা মেশানো ছবি।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (বাসর)
১৩#
❝সুন্দরী মেয়েদের হাতের লেখা সুন্দর। এটা হল নিপাতনে সিদ্ধ। সুন্দরীরা মনে প্রাণে জানে তারা সুন্দর। তাদের চেষ্টাই থাকে— তাদের ঘিরে যা থাকবে সবই সুন্দর হবে।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর রূপালী রাত্রি)
১৪#
“একেকজন মানুষ যেন একেকটা বই। কোনো বই সহজ, তরতর করে পড়া যায়। কোনো বই অসম্ভব জটিল। আবার কোনো কোনো বই এর হরফ অজানা। সেই বই পড়তে হলে আগে হরফ বুঝতে হবে। আবার কিছু কিছু বই আছে যার পাতাগুলি শাদা। কিচ্ছু সেখানে লেখা নেই, বড়ই রহস্যময় সে বই।
আমার নিজের বইটা কেমন? খুব জটিল নয় বলেই আমার ধারণা। সরল ভাষায় বইটি লেখা। যে কেউ পড়েই বুঝতে পারবে। কিন্তু সত্যি কি পারবে?
সারল্যের ভেতরেও তো থাকে ভয়াবহ জটিলতা।”
—হুমায়ূন আহমেদ
১৫#
❝যাদের ঘরে কোনো আকর্ষণ নেই তারা সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফেরে না। ঠিক সন্ধ্যায় তারা একধরনের অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়।❞
–হুমায়ূন আহমেদ (হিমু)
১৬#
❝যে পাখি উড়ে যায়, তাকে ফিরে আসতে হয়। খাঁচায় বন্দি পাখিরই শুধু উড়ে যাওয়া বাঁ ফিরে আসার ব্যাপার থাকে না।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (চলে যায় বসন্তের দিন)
১৭#
❝হাসলে মেয়েদের যত সুন্দর লাগে হাসি চেপে রাখলে তারচে দশ গুন বেশি সুন্দর লাগে।❞
—হুমায়ূন আহমেদ
১৮#
❝পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন।
তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?❞
—হুমায়ূন আহমেদ (মধ্যাহ্ন; অখন্ড)
১৯#
“ঘুমাবার আগে আয়নায় নিজেকে দেখার বাসনা সব তরুণীর মনেই থাকে।”
—হুমায়ূন আহমেদ
২০#
❝রাতের ট্রেনে উঠলে তিথির সব সময় মনে হয়- ট্রেনে ট্রেনে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতনা। তবে একা না। একজন পাশে দরকার। এমন একজন যাকে দেখতে ভাল লাগে। যার পাশে বসতে ভাল লাগে। যার কথা শুনতে ভাল লাগে।
এমন একজন যে কথা বলতে বলতে চোখ ফিরিয়ে নিলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, ‘তুমি চোখ ফিরিয়ে নিলে কেন? খবরদার আর কখনো এরকম করবে না।❞
—হুমায়ূন আহমেদ
২১#
“মুজিবকোট বঙ্গবন্ধুকেই মানায়। এই কোট বেঁটে এবং মোটারা পরলে তাদের লাগে পেঙ্গুইন পাখির মতো।”
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর নীল জোছনা)
২২#
“মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকেই স্বামী ভেবে আনন্দ পায় না। প্রেমিককেও তারা বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (কিছুক্ষণ)
২৩#
“ছেলে পাগলের চেয়ে মেয়ে পাগল বেশি ভয়ংকর।”
—হুমায়ূন আহমেদ (অপেক্ষা)
২৪#
‘কল্পনায় দেখেছি নুহাশ পল্লীর সবুজের মধ্যে সাদা ধবধবে শ্বেত পাথরের কবর। তার গায়ে লেখা চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।’
—হুমায়ূন আহমেদ (কাঠপেন্সিল)
২৫#
“গুণী মানুষের প্রেমে মেয়েরা যুগে যুগে পাগল হয়েছে। কারণ প্রকৃতির সেই পুরানো খেলা, প্রকৃতি চাচ্ছে পুরুষদের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে ‘ডি এন এ’ র মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি প্রাণপণে চাচ্ছে মানব সম্প্রদায়ের গুণগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায়। যেন প্রবাহিত হতে হতে এক সময় পূর্ণ বিকশিত হয়। তৈরি হয় অসাধারণ একটা মানব সম্প্রদায়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (রুমালী)
২৬#
“কিছু মানুষ মনে করে নারীজাতির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার ফল একটাই; সময় নষ্ট করা। কী দরকার সময় নষ্ট করার।”
—হুমায়ূন আহমেদ (বীণার অসুখ)
২৭#
“প্রকৃতি যাকে দেবার তাকে উজার করেই দেয়। যাকে দেবার না তাকে কিছুই দেয় না। এই জন্যেই একজন হয় রবীন্দ্রনাথ, একজন হয় ঠেলাগাড়ির ড্রাইভার মুকাদ্দেছ।”
—হুমায়ূন আহমেদ (অপেক্ষা)
২৮#
“সব মানুষের ভেতরে কিছু আদিম ভয় লুকিয়ে থাকে। মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই ভয় লালন করে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষই সেই আদিম ভয়ের মুখোমুখি হয়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (মৃন্ময়ী)
২৯#
“ভাগ্য ফেরাবার জন্যে হলেও পুরুষ মানুষের বিয়ে দিতে হয়। কথায় আছে না স্ত্রীভাগ্যে ধন।”
—হুমায়ূন আহমেদ
৩০#
“সব দলের মন্ত্রীই একই। তাদের মধ্যে গুণগত প্রভেদ যেমন নেই, দোষগত প্রভেদও নেই। তাদের সঙ্গে গ্রাম্য বাউলদের কিছু মিল আছে। বাউলরা যেমন বন্দনা না গেয়ে মূল গান গাইতে পারেনা, মন্ত্রীরাও সেরকম নিজ নিজ নেত্রীর বন্দনা না গেয়ে কোনো কথা বলতে পারেনা।”
—হুমায়ূন আহমেদ (কিছুক্ষণ)
৩১#
“প্রেমের ধর্ম হচ্ছে অগ্নি। আগুন যেমন সব পুড়িয়ে দেয়, প্রেমও সব ছাড়খার করে দেয়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (তন্দ্রাবিলাস)
৩২#
“মানুষ যখন একা থাকে তখন কিন্তু আসলে সে একা থাকে না, তার মনের ভেতরের মানুষগুলো তাকে ঘিরে থাকে। একা থাকার এক মাত্র উপায় হল অনেক মানুষের সাথে থাকা। কারন জনতার মধ্যেই আছে নির্জনতা।”
—হুমায়ূন আহমেদ (নক্ষত্রের রাত)
৩৩#
“যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে তারা কখনো অর্থ উপার্জন বন্ধ করতে পারে না। কখনো অবসর নিতে পারে না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (সেদিন চৈত্রমাস)
৩৪#
“মানুষের আগ্রহকে উপেক্ষা করা ঠিক না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (দরজার ওপাশে)
৩৫#
“একজন খারাপ মানুষ অতি দ্রুত একজন ভালো মানুষকে খারাপ বানিয়ে ফেলতে পারে।”
—হুমায়ূন আহমেদ (শুভ্র)
৩৬#
“সুন্দর দৃশ্য একা বা দোকা দেখা যায় না। তিনজন লাগে ৷ Three is company.”
—হুমায়ূন আহমেদ (এই শুভ্র! এই)
৩৭#
“টাকা বোকা মানুষকেও বুদ্ধিমান বানিয়ে দেয়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমু)
৩৮#
ভালো কাজ চিন্তা ভাবনা করে করতে হয় না। মন্দ কাজ অনেক চিন্তাভাবনা করে করতে হয়।
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)
৩৯#
তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি সেটা কি তুমি জান? জান না, তাই না?
আমিও জানি না। ভালবাসা যদি তরল পানির মত কোনো বস্তু হত তাহলে সেই ভালবাসায় সমস্ত পৃথিবী তলিয়ে যেত। এমনকি হিমালয় পর্বতও।
—হুমায়ূন আহমেদ (এপিটাফ)
৪০#
মাঝেমধ্যে চিন্তার জগতে যেতে হয়। চিন্তার জগত বড়ই বিচিত্র!
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)
৪১#
মানব জাতির সমস্যা হচ্ছে তাকে কোনো না কোনো সন্ধানে জীবন কাটাতে হয়। অর্থের সন্ধান, বিত্তের সন্ধান, সুখের সন্ধান, ভালোবাসার সন্ধান, ঈশ্বরের সন্ধান।
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী)
৪২#
ঢাকা শহরের পথেঘাটে চাকরি পরে থাকেনা। কেউ এলো, পথ থেকে একটা চাকরি কুড়িয়ে তার হাতে দিয়ে দেয়া হলো, হাসিমুখে চাকরি নিয়ে সে বাড়ি চলে গেলো। ঘটনা সেরকম না। বি.এ., এম.এ. পাস করা শতশত ছেলে শুকনো মুখে পথেঘাটে ঘুরছে!
—হুমায়ূন আহমেদ (দ্বিতীয় মানব)
৪৩#
কোনোকিছু দেখে হকচকিয়ে গেলেই যে জিনিসটা সত্যি, তা কিন্তু না। আমরা যখন স্টেজে ম্যাজিক শো দেখতে যাই তখন কী দেখি? তখন দেখি জাদুকর জুয়েল আইচ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে একটা মেয়েকে কেটে দু’ভাগ করেছেন। ঘটনাটা সবার চোখের উপর ঘটলেও ঘটনা সত্যি না।
—হুমায়ূন আহমেদ (দ্বিতীয় মানব)
৪৪#
যে বাড়ীতে টিভি নেই, সে বাড়িতে কোনো কাজের লোক থাকেনা; এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।
—হুমায়ূন আহমেদ (কুটু মিয়া)
৪৫#
একজন মানুষের অনেকগুলি চেহারা থাকে। একটি চেহারার সাথে অন্য চেহারার কিছুমাত্র মিল থাকেনা।
—হুমায়ূন আহমেদ (এইসব দিনরাত্রি)
৪৬#
“মন খারাপের ব্যাপারটা হল একটা খারাপ গ্যাসের মতো। দরজা জানালা বন্ধ ঘরে এই গ্যাসটা আটকে থাকে। কাউকে মন খারাপের কথা বললে বন্ধ ঘরের জানালা খুলে যায়। তখন মন খারাপ নামক গ্যাসটা বের হতে পারে।”
—হুমায়ূন আহমেদ (মৃন্ময়ী)
৪৭#
“আমি মানুষ। আমি তো ভুল করবোই। আমি কি ফেরেশতা যে আমার ভুল হবেনা?”
—হুমায়ূন আহমেদ (আমার আপন আঁধার)
৪৮#
“মিথ্যা দু’রকমের আছে। হঠাৎ মুখে এসে যাওয়া মিথ্যা, আর ভেবে চিন্তে বলা মিথ্যা। হঠাৎ মিথ্যা আপনা আপনি মুখে এসে যায়। কোনাে পরিশ্রম করতে হয় না। ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলাটাই কঠিন। এই মিথ্যা সহজে গলায় আসে না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৪৯#
“একালের মেয়েগুলী ফাজিলের চুড়ান্ত, সহজ কথারও তিন রকম অর্থ করে মজা পায়।”
—হুমায়ূন আহমেদ
৫০#
মেয়েদের আমি কখনো খুশি হলে সেই খুশি প্রকাশ করতে দেখিনি। একবার একটা মেয়ের সাথে সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে ইন্টারমিডিয়েটে ছেলে-মেয়ে সবার মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে। আমি বললাম, কি খুশি তো? সে ঠোঁট উল্টে বলল, উঁহু বাংলা সেকেন্ড পেপারে যা পুওর নাম্বার পেয়েছি। জানেন, মার্কশিট দেখে কেঁদেছি।
—হুমায়ূন আহমেদ (এলেবেলে)
৫১#
“মেয়েরা অনেক শক্ত ধরনের হয়। ছেলেরা তা হয় না। বাইরে থেকে তাদের শক্ত মনে হলেও আসলে তারা তা না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (এপিটাফ)
৫২#
বোকা মেয়েরা ঝামেলা করে না। বাবা-মায়ের কথা মেনে নেয়। ঝামেলা করে বুদ্ধিমতীরা।
—হুমায়ূন আহমেদ
৫৩#
মানুষ শুধু যে মানুষের কাছ থেকে শিখবে তা না। পশু পাখির কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
―হুমায়ূন আহমেদ
৫৪#
“যে মানুষ নিঃশব্দে হাসে তাহার বিষয়ে খুব সাবধান। দুই ধরনের মানুষ নিঃশব্দে হাসে- অতি উঁচু স্তরের সাধক এবং অতি নিম্নশ্রেণীর পিশাচ চরিত্রের মানুষ।”
―হুমায়ূন আহমেদ (তোমাদের এই নগরে)
৫৫#
চোখের দেখাতে প্রেম গল্প উপন্যাসে হয়। বাস্তবে প্রেমে পড়ার জন্য একজনকে অন্যজনের কাছাকাছি যেতে হয়।
—হুমায়ূন আহমেদ (আশাবরী)
৫৬#
কান্নার সঙ্গে তো সমুদ্রের খুব মিল আছে। সমুদ্রের জল নোনা। চোখের জল নোনা। সমুদ্রে ঢেউ ওঠে। কান্নাও আসে ঢেউয়ের মতো।
—হুমায়ূন আহমেদ
৫৭#
ঘুমন্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলা খুব আনন্দের ব্যাপার। যার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে সে পাশেই আছে অথচ কিছুই শুনছেনা।
—হুমায়ূন আহমেদ
৫৮#
অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি। তারা যেকোনো পরিস্থিতি অতি দ্রুত সামাল দিতে পারে। পরম শত্রুকেও হাসিমুখে জিজ্ঞেস করতে পারে -তারপর ভাই কী খবর?
―হুমায়ূন আহমেদ (মেঘ বলেছে যাব যাব)
৫৯#
প্রেম হয় শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকে, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে।
―হুমায়ূন আহমেদ
৬০#
এই পৃথিবীতে প্রিয় মানুষগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, জীবন তার মতই প্রবাহিত হবে।
―হুমায়ূন আহমেদ
৬১#
“আজকাল অধিকাংশ মায়েরাই মেয়েদের ভয় পায়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (ময়ূরাক্ষী)
৬২#
ভালোবাসায় যেমন স্বর্গের সুখের মতো কিছু মুহূর্ত থাকে। ঠিক তেমনি নরকের কষ্টের মতোও কিছু দুঃখ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।
―হুমায়ূন আহমেদ
৬৩#
“রুচির রহস্য ক্ষুধায়। যেখানে ক্ষুধা নেই সেখানে রুচিও নেই।”
―হুমায়ূন আহমেদ (বৃহন্নলা)
৬৪#
“সব কষ্টই মানুষের একসময় শেষ হয়ে যায়। মানুষের কষ্ট গ্যাস বেলুনের মতো, উঁচুতে উঠে থাকে – এক সময় না এক সময় সেই বেলুন নেমে আসতে থাকে। বেলুনভর্তি গ্যাস থাকে ঠিকই, তবে গ্যাসের বেলুনকে উড়িয়ে রাখার ক্ষমতা থাকে না।”
―হুমায়ূন আহমেদ (মেঘ বলেছে যাব যাব)
৬৫#
আমি কখনো রূপাকে চিঠি লিখি নি। একবার হঠাৎ একটি চিঠি লিখতে ইচ্ছা হলো। লিখতে বসে দেখি কী লিখব ভেবে পাচ্ছি না। অনেকবার করে একটি লাইন লিখলাম: রূপা তুমি কেমন আছ? সমস্ত পাতা জুড়ে একটি মাত্র বাক্য। সেই চিঠির উত্তর রূপা খুব রাগ করে করে লিখল: তুমি এত পাগল কেন? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে, তারমধ্যেও পাগলামি । কেন এমন কর? তুমি কি ভাবো এইসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসব?
—হুমায়ূন আহমেদ (ময়ুরাক্ষী)
৬৬#
“সময় নেতা তৈরি করে। ঠিক সময়ে ঠিক নেতা এই কারণেই বের হয়ে আসে।”
―হুমায়ূন আহমেদ (চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক)
৬৭#
যে সুন্দর সে সব সময়েই সুন্দর। মাথা ভর্তি চুল থাকলেও সুন্দর, চুল না থাকলেও সুন্দর।
—হুমায়ূন আহমেদ
৬৮#
“আলো যেমন চারপাশ আলো করে তোলে একজন পবিত্র মানুষও তার চারপাশ আলো করে তুলবেই।”
―হুমায়ূন আহমেদ (পারাপার)
৬৯#
“রিকশায় চড়ায় একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে। মাথা সামান্য উচু করলেই আকাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যায়।”
―হুমায়ূন আহমেদ (কবি)
৭০#
“ধুমপানও অভ্যাসের ব্যাপার। অভ্যাস না থাকলে সিগারেটের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসবে। আবার যারা অভ্যস্ত তারা পাগল হয়ে থাকে এই ধোঁয়াটার জন্য।”
―হুমায়ূন আহমেদ
৭১#
“হঠাৎ দেখলাম তোমার চোখ ভর্তি পানি! তখন আমার যে কী আনন্দ হলো! ভাবলাম, তোমাকে কিছুদিন কষ্ট দিয়ে দেখি। আনন্দেকে তীব্র করার জন্য কষ্টের প্রয়োজন আছে। তাই না?”
—হুমায়ূন আহমেদ (তেতুল বনে জোসনা)
৭২#
মেঘ দেখতে সব মেয়েদেরই বোধ হয় ভালো লাগে।
—হুমায়ূন আহমেদ (জনম জনম)
৭৩#
আমরা যাদের পছন্দ করি, তাদের কড়া কথাও আমাদের ভালো লাগে।
—হুমায়ূন আহমেদ (এইসব দিনরাত্রি)
৭৪#
“পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। একজন পুরুষের রাগ করার যতটা অধিকার, একজন মেয়ের কিন্তু ততটা অধিকার নেই।”
—হুমায়ূন আহমেদ (মৃন্ময়ী)
৭৫#
“কাওকে খুশি হতে দেখলে আমার ভালো লাগে।”
—হুমায়ূন আহমেদ (আমার আপন আঁধার)
৭৬#
“পুলিশরা উঁচুদরের আসামিদের ভাল খাতির করে। চা সিগারেট খাওয়ায়।”
—হুমায়ূন আহমেদ
৭৭#
“খুব ঘনিষ্ঠ দুজন মানুষের মাঝখানেও বোধহয় পর্দা থাকে। কারো পর্দা খুব ভারি, কারো পর্দা খুব হালকা স্বচ্ছ মসলিনের। সব দেখা যায়, তারপরও অনেক কিছু দেখা যায়না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (এপিটাফ)
৭৮#
‘ভদ্রলোক লজ্জ্বা পেলে দেখতে ভালো লাগে। চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। ঠিকমত কথা বলতে পারে না। তোতলাতে থাকে।’
―হুমায়ূন আহমেদ (গৌরীপুর জংশন)
৭৯#
বুদ্ধিমতীরা নিজেকে ভালোবাসে অন্য কাউকে তারা ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার ভান করে।
—হুমায়ূন আহমেদ
৮০#
প্রেম বলিয়া জগতে কিছু নাই। ইহা শরীরের প্রতি শরীরের আকর্ষণ। এই আকর্ষণ প্রকৃতি তৈরি করিয়াছেন যাহাতে তাঁহার সৃষ্টি বজায় থাকে। নর-নারীর মিলনে শিশু জন্মগ্রহণ করিবে- প্রকৃতির সৃষ্টি বজায় থাকিবে।
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর বাবার কথামালা)
৮১#
❝মানুষের করুণা গ্রহণ করার মতো লজ্জা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুতে নেই।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (এপিটাফ)
৮২#
“ঢাকা শহরে বাতাসে পয়সা ওড়ে। কেউ ধরতে পারে, কেউ ধরতে পারেনা।”
—হুমায়ূন আহমেদ (জনম জনম)
৮৩#
“মেয়েদের উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা উচিৎ না। মেয়েদের কাজই হচ্ছে ভুল করা। তারা ভুল করবেই।”
—হুমায়ূন আহমেদ (জনম জনম)
৮৪#
“প্রেমিকা হাত ধরে রাখলে সেই হাত ছাড়িয়ে নেয়া যায়। কিন্তু পুলিশ হাত ধরে রাখলে ছাড়িয়ে নেয়া যায় না।”
―হুমায়ূন আহমেদ (একজন হিমু এবং কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা)
৮৫#
“বিয়ে করার জন্য দরকার হাসি খুশি ধরনের একটি মেয়ে, যে খুব রাগ করবে আবার পরমুহূর্তেই সবকিছু ভুলে হেসে ফেলবে। রাত ১ টার সময় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে যার আপত্তি থাকবেনা।”
—হুমায়ূন আহমেদ (এইসব দিনরাত্রি)
৮৬#
দেশে প্রেমের অভাব নেই। দেশে অভাব হচ্ছে ভাতের।
—হুমায়ূন আহমেদ (পারুল ও তিনিটি কুকুর)
৮৭#
“পুলিশের কি কিছু ঠিক আছে? এরা জালিম! এরা করতে পারেনা এমন কাম নাই।”
—হুমায়ূন আহমেদ (মৃন্ময়ী)
৮৮#
“বুড়া মাইনষের রক্তে কোনো টেস নাই গো বউ। শইল্যে মশা বয় ঠিকই, কামুড় দেয় না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (অপেক্ষা)
৮৯#
কারনে মিথ্যা বলার চেয়ে অকারণে মিথ্যা বলতে মানুষ বেশি পছন্দ করে।
—হুমায়ূন আহমেদ (মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)
৯০#
বিরাট বুদ্ধিমান এবং বিরাট বোকা এই দুধরনের মানুষের সঙ্গ আনন্দময়।
—হুমায়ূন আহমেদ
৯১#
মেয়েদের কান্নায় ঘুমপাড়ানী কিছু আছে। শুনলেই ঘুম পেতে শুরু করে। ঘুম আসার সময় টা বেশ সুন্দর। গভীর কোন নির্জন দিঘিতে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে এর একটা মিল আছে।
—হুমায়ূন আহমেদ
৯২
“আমরা সবাই কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছি! শুধুই উল্টো কাজ করতে ইচ্ছে করে।”
—হুমায়ূন আহমেদ (রজনী)
৯৩#
এভারেস্ট জয় করা যায় কিন্তু লোভ জয় করা যায় না।
—হুমায়ূন আহমেদ
৯৪#
মেয়েরা হচ্ছে জন্মদাত্রী জননী। হাজার ভুল করলেও এদের উপর রাগ করতে নেই। এদের উপর রাগ করাটাই কাপুরুষতা।
—হুমায়ূন আহমেদ
৯৫#
মানুষকে আদর করলে ভাবে আদরের পেছনে স্বার্থ আছে!
—হুমায়ূন আহমেদ
৯৬#
চিঠি ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। যতক্ষণ পড়া হয় না ততক্ষণ আঁকিবুঁকি টানা সামান্য এক টুকরাকাগজ। পড়তে শুরু করলেই সে একজন রক্ত মাংসের মানুষ। মানুষের মতোই সে রাগ করে। অভিমান করে।
—হুমায়ূন আহমেদ
৯৭#
একদল মানুষ আছে, যারা অন্যদের বিরক্ত করেই আনন্দ পায়।
—হুমায়ূন আহমেদ (মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)
৯৮#
মেয়েরা যদি জানতো গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচে সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।
—হুমায়ূন আহমেদ (তিথির নীল তোয়ালে)
৯৯#
বুদ্ধিমান লোকের সাথে কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়, গাধা টাইপ লোকের সাথেও কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়। যাদের বুদ্ধি মাঝামাঝি, এদের সাথে কথা বলে আনন্দ নেই।
—হুমায়ূন আহমেদ (মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য)
১০০#
যে মানুষ যত বেশি গম্ভীর, সে মানুষ ততবেশি রাগী, তবে তার মধ্যে ভালোবাসাও থাকে বেশি।
—হুমায়ূন আহমেদ
_______________
ভাল ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে প্রেম জাগে না, যেটা জাগে তার নাম সহানুভুতি।
—হুমায়ূন আহমেদ