হযরত লোকমান হাকীম (এছাড়াও লোকমান প্রজ্ঞাবান, এবং লুকমান, নামেও পরিচিত) ছিলেন একজন বিজ্ঞ লোক যার নামে আল কুরআনের একত্রিশতম সূরা, সূরা লুকমান এর নামকরণ করা হয়। লোকমান (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতাব্দী) বর্তমান সুদানের নুবিয়ায় বসবাস করতেন বলে ধারণা করা হয়। ফার্সি, আরবি ও তুর্কি সাহিত্য এবং প্রাথমিক ঐতিহাসিক গ্রন্থ কুরআনের তাফসীর তাফসীরে ইবনে কাসীরে লোকমান সম্বন্ধে অনেক ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। কুরআনে বর্ণিত নেই যে লোকমান নবী ছিলেন কি না, তবে কিছু লোক তাকে নবী হিসাবে বিশ্বাস করে এবং নামের শেষে আলাইহিস সালাম (আঃ) লিখেন।
১
যে কথা তোমার শত্রু হতে গোপন রাখতে চাও, তা মিত্র হতেও গোপন রাখো। কারণ মিত্রও একদিন শত্রু হতে পারে।
২
যা তুমি জানো না, তা বলো না; আর যা তুমি জানো, তা যথাস্থানে বলতে কুন্ঠিত হয়ো না।
৩
হে বৎস! আল্লাহ তায়ালার পরিচয়-জ্ঞান অর্জন করো এবং তাঁকে ভালোরকম বুঝতে সচেষ্ট হও।
৪
নিজ খাঁটি বন্ধুদের মনে-প্রাণে বন্ধু জানবে।
৫
যৌবনে এমনসব কাজ করবে, যা ধর্ম ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে উপকারী হয়।
৬
যৌবনকালকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করবে।
৭
যে কথাই বলবে মাপজোখ ও প্রামাণ্যরূপে হওয়া চাই।
৮
বুদ্ধিমান ও কল্যণকামী লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
৯
ভালো কাজে পরিপূর্ণ চেষ্টা চালাবে।
১০
বোকা লোকজন থেকে দূরে থাকবে।
১১
অন্যকে যে-কথা বলবে তাতে নিজেও আমল করবে।
১২
নিজের গোপনীয়তা কারও কাছে প্রকাশ করবে না।
১৩
বিপদকালীন বন্ধুদের পরীক্ষা করে নাও।
১৪
লাভ ও ক্ষতি দুই অবস্থাতেই বন্ধুদের পরীক্ষা করো।
১৫
সাধারণ জনগণ যেন তোমার সঙ্গে বেয়াদবি করার সুয়োগ না পায়।
১৬
উপস্থিত কাজ বাকি রাখবে না।
১৭
কোনো বিপদগ্রস্তকে নিরাশ করবে না।
১৮
বিগত শত্রুতাকে নতুনভাবে উত্থাপন করবে না।
১৯
সম্মানীজন বা বড়দের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে না।
২০
বড়দের সঙ্গে হাসি-তামাশায় জড়াবে না।
২১
যা তুমি জান না, তা বলো না; আর যা তুমি জানো, তা যথাস্থানে বলতে কুন্ঠিত হয়ো না।
২২
বড়দের সামনে আগে আগে চলবে না।
২৩
বুদ্ধিমান ও সতর্ক লোকজনের সঙ্গে ওঠবস করবে।
২৪
বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সঙ্গেই হাসিমুখে অবস্থান করবে, কথা বলবে।
২৫
সুযোগ বুঝে কথা বলবে এবং প্রয়োজনীয়টুকু বলার জন্যই মুখ খুলবে।
২৬
প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার লোকজনের মর্যাদা জেনে-বুঝে সে হিসেবেই তাদের সঙ্গে আচরণ-ব্যবহার করবে।
২৭
প্রত্যেক ব্যক্তির হক-অধিকার জানার চেষ্টা করো।
২৮
বুদ্ধিমতী নয় এমন নারীদের ওপর ভরসা করবে না।
২৯
শিশুদের কাছে গোপন-রহস্য প্রকাশ করবে না এবং কারও কিছুতে লোভ করবে না।
৩০
যা জানো না সে বিষয়ে কাউকে পথ দেখাতে যাবে না।
৩১
স্বীয় কাজকর্ম ভেবে-চিন্তে করবে।
৩২
নিজ সন্তানদের ঘোড়দৌড় ও তীর-নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ দেবে।
৩৩
রাতের বেলায় চুপে চুপে কথা বলবে, যেন তোমার কোনো শত্রু তোমার কথা শুনে, সে সূত্রে ক্ষতি করতে না পারে।
৩৪
নিজ সন্তানদের ‘ইলম’ ও ‘আদব’ শিক্ষা দেবে।
৩৫
প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থা বুঝে তার কাজ ও সেবা করবে।
৩৬
জাতি-ধর্ম ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক বা মিলেমিশে চলবে।
৩৭
নিজ বস্ত্র-পোশাক পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখবে।
৩৮
গৃহে প্রবেশকালীন চোখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখবে।
৩৯
সাধ্যমতো অবশ্যই মেহমানের আপ্যায়ন করবে।
৪০
দানশীলতার অভ্যাস গড়ে তোল।
৪১
প্রত্যেক কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে।
৪২
ব্যয়ের ক্ষেত্রে আয়ের প্রতি লক্ষ রাখবে।
৪৩
শিক্ষককে উত্তম পিতা বলে জ্ঞান করবে।
৪৪
কম আহার’,‘কম নিদ্রা’ ও ‘কম কথা’ বলার অভ্যাস করবে।
৪৫
যা নিজের জন্য পছন্দ করবে, তা অন্যের জন্যও পছন্দ করবে।
৪৬
দিনের বেলায় সতর্কভাবে বাক্যালাপ করবে।
৪৭
সর্বদা নিজ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
৪৮
অনর্থক কথাবার্তা থেকে মুক্ত থাকবে।
৪৯
মানুষের সামনে কাউকে লজ্জা দেবে না।
৪৯
মানুষের সামনে হাই তুলবে না।
৫০
নিরপরাধ ও নির্দোষকে অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত করবে না।
৫০
নিজের সম্পদ গোপন রাখবে, তা বন্ধু ও শত্রু কারও কাছে প্রকাশ করবে না।
পিতা-মাতার অস্তিত্বকে অমূল্য সম্পদ ও গনিমত মনে করবে।”