মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু বাংলা উপন্যাসসাহিত্যের ধারায় এক কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম। শতবর্ষেরও অধিককাল পূর্বে প্রকাশিত এই উপন্যাস এখনো বাংলাভাষী সাহিত্যপিপাসুদের কাছে একটি অনুপম গ্রন্থ হিশেবে বিবেচিত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যে-সব গ্রন্থ জনপ্রিয়তায় শতাব্দীর সীমা অতিক্রম করেছে, বিষাদ-সিন্ধু নিঃসন্দেহে তার অন্যতম। হিজরি ৬১ সালের মহরম মাসে সংঘটিত কারবালার মর্মন্তুদ কাহিনী অবলম্বনে রচিত হয়েছে বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাস।
এই ব্লগ পোস্টে মীর মোশাররফ হোসেন এর বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসের কিছু বিখ্যাত উক্তি ও লাইন তুলে ধরেছি।
১#
ঈশ্বর নিয়োজিত কার্যে কেহ বাধা দিতে পারেনা।
২#
প্রণয়, স্ত্রী,রাজ্য,ধন এই কয়েকটি বিষয়ের লোভ বড় ভয়ানক।এই লোভে লোকের ধর্ম,পুণ্য,সাধুতা,পবিত্রতা সমস্তই একেবারে সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হয়।অতি কষ্টে উপার্জিত বন্ধুত্ব রত্নটিও ঐ লোভে অনেকেই অনায়াসে বিসর্জন দেয়।মানুষ এ লোভে অনায়াসে যথেচ্ছ ব্যবহারে অগ্রসর হইতে পারে।
৩#
প্রাণে আঘাত লাগলে মুখ বন্ধ থাকেনা।
৪#
কপাল মন্দ হইলে তাহার ফলাফল ফিরাইতে কাহারো সাধ্য নাই।
৫#
যে আমার নয় আমি তাহার কেন হইবো।
৬#
মনে করিলেই যদি মনের দুঃখ যায়,তবে জগতে কে না মনে করে?
৭#
বিশ্বাসী না হইলে বিশ্বাসঘাতকতা করিবার সাধ্য কাহার?
৮#
বাইরের শত্রু হতে রক্ষা পাওয়া সহজ কিন্তু ঘরের শত্রু হইতে রক্ষা পাওয়া দুষ্কর।
৯#
বিপদগ্রস্ত না হইলে নিরাপদের সুখ কখনোই ভোগ করা যায়না; দুঃখ ভোগ না করিলে সুখের স্বাদ পাওয়া যায়না।
১০#
স্ত্রীজাতির এমনি একটি মোহনীশক্তি আছে যে, পুরুষের মন অতি কঠিন হইলেও সহজে নোয়াইতে পারে,ঘুরাইতে পারে,ফিরাইতেও পারে।(কথা অধিকাংশ সত্য)তবে অন্যের প্রণয়ে মজিলে একটু কথা আছে বটে,কিন্তু হাতে পাইয়া নির্জনে বসাইতে পারিলে,কাছে ঘেঁষিয়া মোহন মন্ত্রগুলি ক্রমে ক্রমে আওড়াইতে পারিলে অবশ্যই কিছু কিছু ফল ফলাইতে পারিবেই পারবে।এ যে না পারে সে নারী নহে।
১১#
হুতাশনের দাহন আশা,ধরণীর জলশোষণ আশা,ভিখারীর অর্থলোভ আশা,চক্ষুর দর্শন আশা,গাভীর তৃণভক্ষণ আশা,ধনীর ধন বৃদ্ধির আশা, প্রেমিকের প্রেমের আশা,সম্রাটের রাজ্য বিস্তার আশার যেমন নিবৃত্তি নাই,হিংসাপূর্ণ পাপ হৃদয়ে দুরাশারও তেমনি নিবৃত্তি নাই-ইতি নাই।
১২#
জলে অগ্নি নির্বাণ হয়,কিন্তু প্রেমাগ্নি অন্তরে প্রজ্বলিত হইয়া প্রথমে নয়ন দুটির আশ্রয়ে বাষ্প সৃষ্টি করে,পরিণামে জলে পরিণত হইয়া স্রোত বহিতে থাকে।সে জলে হয়তো বাহ্যবহ্নি সহজেই নির্বাপিত হইতে পারে, কিন্তু মনের আগুন দ্বিগুন, চতুর্গুণ, শতগুন জ্বলিয়া উঠে।
১৩#
ঈশ্বর যাহা ঘটাইবেন, তাহা নিবারণে কাহারো ক্ষমতা নাই।
১৪#
সময়ে সকলই সহ্য হয়।কোন বিষয়ে অনভ্যাস থাকিলে বিপদকালে তাহা অভ্যস্ত হইয়া পড়ে,মহাসুখের শরীরে মহা কষ্ট সহ্য হইয়া থাকে।
১৫#
বিনাশ করা অতি সহজ রক্ষ করা বড়ই কঠিন।