“‘লেডি অফ ভিক্টরিস’ নামে একটি আশ্রমে বসবাসকারী দুই তরুণী, সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারে; কেউ তাদের চুল কেটে দিয়েছে! তখন তারা হতবাক হয়ে যায়। তারা দেখে কেউ তাদের রুমের জানালা রাতে ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু আশ্চর্য! ঘরের একটা জিনিস ও নেয় নি! কিন্তু চোর শুধু তাদের দুজনের মাথার চুল চুরি করে নিয়ে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যের একটি ছোট শহর ‘পাস্কাগৌলা’। ১৯৪২ সালের জুন মাসের শুরুতে লেডি অফ ভিক্টোরিস আশ্রমের দুটো মেয়ের সম্পর্কে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে মানুষজন তা দেখে হতবাক হয়ে যায়।
দুই তরুণী, মেরি ইভলিন ব্রিগস এবং এডনা মেরি হাইডেল দাবি করেছিলেন যে তাদের চুল আগের রাতে কেউ একজন লুকিয়ে কেটে নিয়েছে। দেখা গেল ১ সপ্তাহ পরে যে এই ঘটনাস্থল থেকে বেশখানিকটা দূরে মাত্র ৬ বছর বয়সী ‘ক্যারল’ নামে ছোট্ট একটি মেয়ের এমন রহস্যময় ভাবে চুল কাটা যায়।

‘পাস্কাগৌলা’ শহরে এর ফলে উদ্বেগ এবং ভয়ার্থ হয়ে উঠে। স্থানীয় সংবাদপত্র গুলো এই খবর খুব জোর দিয়ে প্রচার করতে থাকে এবং এই চুল চোরকে ‘Phantom Barber’ ডাক নাম দেয়, যার অর্থ ‘ভুতুড়ে নাপিত’। এই ভুতুড়ে নাপিত রাতে জানালা ভেঙ্গে অন্ধকারে তার শিকারের ঘরে প্রবেশ করতো; সকল ভুক্তভোগীরই বক্তব্য ছিলো সেদিন রাতে তারা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে বিছায় গিয়েছিল। প্রথম সপ্তাহেই তিন নারীর চুল চুরি করতে পেরেছিলেন এই ভুতুরে চুল চোর।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে তাদের সকলের চুলই ছিলো সোনালী বর্ণের। চুল চুরি করার জন্য এই ভুতুরে নাপিত যতগুলো ঘর ভেঙে প্রবেশ করেছিল সে চুল ছাড়া অন্য কোনো কিছু চুরি করেনি। এমনকি ধর্ষণ কিংবা যৌন নিপিড়নের খবর ও পাওয়া যায় নি। তার একমাত্র অপরাধ ছিলো চুল চুরি।
সময়ের সাথে সাথে চুরির ঘটনার সংখ্যা ও বাড়তে থাকে, যার ফলে ‘পাস্কাগৌলা’ শহরের বাসিন্দারা তাদের সতর্কতা বাড়ায়। রাতে মহিলাদের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। এদিকে পুরুষরা তাদের বাড়ির চারপাশে পাহারা দিতে থাকেন।

প্রথম চুল চুরির ঘটনার এক সপ্তাহ পরে, ‘ডেভিড পিটির’ কন্যা ক্যারলের চুল চুরি করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায়,চুল চোর নাপিত বিছানায় একটি নোংরা পায়ের ছাপ রেখে গেছে। যে সকল পুলিশরা এই মামলাটি তদন্ত করেছিল তারা বিভ্রান্ত হয়েছিল কারণ চুলের চোরের হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর এছাড়া সেই শহরে ঐসময় সন্ত্রাসী হামলার তৎপরতা বেশি ছিল।
চুল চোর নাপিতকে পুলিশ ধরতে ব্যার্থ হয়ে একটি বিজ্ঞাপন ছাপায়। বিজ্ঞাপনে বলা হয়, যদি কেউ চুল চোর নাপিত সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারে তাকে ৩০০ মার্কিন ডলার পুরষ্কার দেয়া হবে। সে সময়ে এই অর্থ ছিলো বিশাল অঙ্কের পুরষ্কার। কিন্তু কেউ সেই চুল চোর নাপিতের কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারে নি। তার পরিচয় এখন পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে।

একদিন রাতে কেউ একজন ‘টেরেল হাইডেলবার্গ’ দম্পতির বাড়ি ভেঙে ফেলেছিল। অনুপ্রবেশকারী জানালা দিয়ে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ঘটনা ‘চুল চোর নাপিতের’ সাথে সম্পর্ক যুক্ত ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অনুপ্রবেশকারী এক চুলও নেয়নি! উল্টো স্বামী-স্ত্রীর ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়। স্বামীকে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়, আর স্ত্রী পিটিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং সামনের দাঁত হারিয়ে ফেলে। সৌভাগ্যক্রমে সেই হামলায় বেঁচে যান স্বামী-স্ত্রী।
দুই মাস পর, ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে, পুলিশ উইলিয়াম এ ডলান নামে একজন কেমিস্ট কে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়, যিনি হাইডেলবার্গ দম্পতির উপর হামলা ও হত্যার চেষ্টার জন্য সন্দেহভাজন ছিলেন।
অবশেষে দোলনের বাসভবন তল্লাশি করা হয়, এবং তার বাড়ির ভেতর থেকে বেশ কিছু চুল কাটা পাওয়া যায়। কিন্তু ডলান জোর দিয়ে বলেছেন যে তিনি চুল চোর নাপিত নন যাকে সাধারণ জনগণ খুঁজছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে ওই দম্পতির ওপর হামলা করেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
শ্লীলতাহানি এবং হত্যার চেষ্টার জন্য ডলানকে অবশ্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যাইহোক, তিনি চুল চুরির অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন কারণ ‘ক্যারলের’ ঘরে পাওয়া পায়ের ছাপগুলি ডলানের থেকে আলাদা ছিল এবং তিনি যেভাবে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন তা ফ্যান্টম নাপিত যা করতেন তার থেকে আলাদা ছিল।
তারপর থেকে, পাস্কাগৌলায় চুল চুরির আর কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর এই ‘ভুতুরে চুল চোর’ নাপিত আসলে কে? এবং মহিলাদের চুল নেওয়ার ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য কী ছিল তা আজও একটি রহস্যই রয়ে গেছে।
Featured Image Credit: Fandom

Wow!!