ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়া আমার কাছে টাইম মেশিনে চেপে অতীত ভ্রমনের মতো। যারা আমাদের কিংবদন্তি,সোনালী ইতিহাসের বরপুত্র তারা তাদের সময়ে তাদের মতো করে জীবনযাপন করছেন। আর আমি যেনো সবকিছু হাওয়ায় ভেসে দেখছি।১১৩৫ পৃষ্টার বিশাল উপন্যাস। সমসাময়িক অনেক পরিচিত ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে লিখিত। কিন্তু কোথাও সামান্যতম বিচ্যুতি চুখে পড়েনি।
উপন্যাসের শুরু হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজের আমন্ত্রণে তার উপজাতি প্রজাদের যাত্রাপথের বর্ণনা দিয়ে। ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য। যার রূপকথার রাজাদের মতো অনেক রাণী,কাছুয়া প্রাসাদ ষড়যন্ত্র সবকিছু আছে। তবে তিনি বাংলা সাহিত্যের সমাঝদার এবং কবি। তার জীবনাচরণ,রাজ্য,সাহিত্য বোধ সবকিছু খুব গোছালো ভাবে উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। রাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের পাটরানির মৃত্যুর পর তার শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে নবীন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ভগ্নহৃদয়। রাজা খুশি হয়ে শাল-দোশালা পাঠান নবীন কবিকে। এখান থেকে উপন্যাসের কাহিনী চলে যায় ঠাকুর পরিবারে। যেখানে নবীন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেদের প্রেস থেকে বই ছাপায় কিন্তু বিক্রি হয়না কিছুই। দেখা মেলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর। ব্যাক্তিত্বময়ী বাঙালি নারীর আধুনিক জীবনযাত্রার অগ্রদূত রবির মেজবৌঠানের। উঠে আসে জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষটির কথা,যিনি স্ত্রীর কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর একেবারে চলে যান পর্দার আড়ালে।
কালিভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস ভোলাভালা মানুষটির প্রশংসা শুনে নিছক কৌতুহলের বশে তাকে দেখতে আসে নরেন দত্ত নামের অত্যন্ত আধুনিক চিন্তাধার এক যুবক। এই ছেলেটি পড়ে স্বামী বিবেকানন্দ নামে আত্মপ্রকাশ করে। থিয়েটার জগতের গিরিশচন্দ্র,অভিনেত্রী বিনোদিনী এবং সেই সময়ের থিয়েটারের স্বর্ণযুগের কথা ও উঠে আসে এই উপন্যাসে।। লেখিকা স্বর্ণকুমারী দেবি,তার কণ্যা সরলা দেবী, জগদীশ চন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধুত্ব ও গবেষণার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্থিক সহায়তা। গান্ধীজীর হ্যাট-কোট পড়ে বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার অদম্য উৎসাহ নিয়ে কাজে লেগে যাওয়ার সাহস তে অতুলনীয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে,তার সাংসারিক জীবন,আস্তে আস্তে সাহিত্য আকাশে উদিত হওয়া এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের পর দেদিপ্যমান হয়ে পুরো উপন্যাস জুড়ে তার সশব্দে বিচরণ। এই উপন্যাসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ভরত। যাকে সবসময় ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার হতে দেখা যায়। ভূমিসুতা নামের একটি মেয়ে তার জীবনে আসে কিন্তু নানান চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে তাদের মিলন হয় একেবারে শেষে। এতো সব বিখ্যাত মানুষদের মাঝে এরা দুজন কে? সেটা বুঝতেই পারছহলাম না। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি এরা লেখকেরই কাল্পনিক চরিত্র।

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.