হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ – ১২ আগস্ট ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ – ২৬ শ্রাবণ ১৪১১ বঙ্গাব্দ) একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত।
এই ব্লগ পোস্টে হুমায়ুন আজাদ এর নারী সম্পর্কে বিখ্যাত কিছু উক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
১#
পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতার প্রথম শোষকশ্রেণী পুরুষ, প্রথম শোষিতশ্রেণী নারী।
২#
আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রূপসীর একটু নগ্ন বাহু দেখে ওরা হইচই করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনীর উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।
– হুমায়ুন আজাদ
৩#
পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।
– হুমায়ুন আজাদ
৪#
পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় শয়তানের চেয়েও বেশি নিন্দিত নারী; শয়তান পুরুষ ব’লে তার জন্যেও গোপন দরদ রয়েছে পুরুষের, কিন্তু কোনো মায়া নেই নারীর জন্যে।
৫#
যে বালিকাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে কোন কাজে যায় না, ব্যবহৃত হয় কারও বিনোদন সামগ্রী রুপে এবং তাতে ধন্য বোধ করে। তার থেকে ঐ নিরক্ষর, বিপন্ন, আবেদনহীন গার্মেন্টস কর্মী বালিকাটি অনেক প্রগতিশীল ও শ্রদ্ধেয়।
–– হুমায়ুন আজাদ
৬#
পুরুষ নারীকে বলেছে দেবী, শাশ্বতী, কল্যাণী গৃহলক্ষ্মী, অর্ধেক কল্পনা; কিন্তু চেয়েছে চিরন্তনী দাসী হিসাবে।
— হুমায়ুন আজাদ
৭#
পুরুষ নারীকে গৃহে বন্দী করেছে, তাকে। সতীত্ব শিখিয়েছে, সতীত্বকে নারীর জীবনের মুকুট ক’রে তুলেছে, যদিও লাম্পট্যকেই ক’রে তুলেছে নিজের গৌরব। পুরুষ উদ্ভাবন করেছে নারী সম্পর্কে একটি বড়ো মিথ্যা। যাকে সে বলেছে চিরন্তনী নারী। তাকে বলেছে দেবী, শাশ্বতী, কল্যাণী, গৃহলক্ষ্মী, অর্ধেক কল্পনা; কিন্তু পুরুষ চেয়েছে ‘চিরন্তনী দাসী’।
৮#
ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীরসম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষঅনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সবদেশে প্রচুর খাদ্য আছে, সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।
— হুমায়ুন আজাদ
৯#
বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয়; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
– হুমায়ুন আজাদ
১০#
বাঙলায় নারীরা এখানে পশুদের দাসী।
১১#
“এক উগ্র পিতৃতন্ত্রের মধ্যে বাস করি আমরা, যেখানে নারী অতিনিষিদ্ধ, নারীর অধিকার দাবি যেখানে দ্রোহিতা, নারী যেখানে দাসী ও ভোগ্যসামগ্রী।”
(নারী)- ডঃ হুমায়ুন আজাদ
১২#
উনিশশতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে বাঙলায় নারীদের শিক্ষার যে-ধারা শুরু হয়, তার উদ্দেশ্য নারীকে স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত করা নয়, তার লক্ষ্য উন্নতজাতের স্ত্রী বা শয্যাসঙ্গিনী উৎপাদন। নারীশিক্ষাও প্রভু পুরুষেরই স্বার্থে। বিবাহ এখানে নারীদের পেশা। বাঙলাদেশে যাঁরা নারীদের কল্যাণ চান, তাঁরা মনে করেন নারীর কল্যাণ শুভবিবাহে, সুখী গৃহে; স্বামীর একটি মাংসল পুতুল হওয়াকেই তাঁরা মনে করেন নারীজীবনের সার্থকতা।
১৩#
“জন্মের পরে মানুষকে আবার জন্ম দেয়া হয়; মানুষমাত্রই দ্বিজ। জন্মের পর থেকে শুরু হয় পুত্রকে পুরুষ আর কন্যাকে নারীরুপে দ্বিতীয় জন্ম দেয়া।”
নারী– ডঃ হুমায়ুন আজাদ
১৪#
“ছেলেটি তার বিছানা গুছিয়ে না রাখলে মা খুশি হয়, দেখতে পায় একটি পুরুষের জন্ম হচ্ছে; কিন্তু মেয়েটি বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতংকিত হয়ে পড়ে.”
~ নারী- ডঃ হুমায়ুন আজাদ
১৫#
পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি অপমান বোধ হয় তাকে লম্পট, চোর, পশু, বদমাশ, গাধা-ধরনের কিছু বললে নয়, তাকে নারী বা মেয়েমানুষ বলা হলে।
১৬#
“কোনো পেশায় না থাকাই হচ্ছে গৃহিনীর পেশায় থাকা; বিবাহিত যে-নারী আর কিছু নয়, যে কোনো আর্থযোগ্যতা অর্জন করে নি, সে-ই গৃহিনী।”
~ নারী – ডঃ হুমায়ুন আজাদ
১৭#
“কেউ বিএ পাশ ক’রে যদি বাসায় ব’সে থাকে, বা হয় সুগৃহিনী বা সুমাতা, তবে তা হচ্ছে শিক্ষার অপচয়, এবং ক্ষতিকর।”
~ নারী– ডঃ হুমায়ুন আজাদ
১৮#
বাঙালি কুৎসা রটিয়ে সুখ পায়, আর এ- কুৎসা যদি যৌন হয়, তাহলে তা সর্বশ্রেষ্ঠ।
— হুমায়ুন আজাদ
১৯#
নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখছি; কয়েকজন মহিলা আমাকে বললেন, অধ্যাপক হয়ে আমার এ-বিষয়ে বই লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম, কেনো ? তাঁরা বললেন, বিষয়টি অশ্লীল !
— হুমায়ুন আজাদ
২০#
বাঙলায় নারীদের শিক্ষার ধারা নারীকে স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত করা নয়, তার লক্ষ্য উন্নতমানের শয্যাসঙ্গিনী উৎপাদন।
~ নারী– হুমায়ুন আজাদ
২১#
পুরুষ উদ্ভাবন করেছে নারী সম্পর্কে একটি বড় মিথ্যা, যাকে সে বলেছে ‘চিরন্তনী নারী’।
—হুমায়ুন আজাদ
২২#
প্রতিটি সংস্কৃতি চায় ছেলেরা হবে সক্রিয় বা আক্রমণাত্মক, আর মেয়েরা হবে নিষ্ক্রিয়, অন্তর্মুখি বা আত্মসমর্পণাত্মক; তাই ছেলেরা হয় মাস্তান আর মেয়েরা থাকে একটি রন্ধ নিয়ে বিব্রত। এটা যে সাংস্কৃতিক ব্যাপার, তা স্বীকার না ক’রে পিতৃতন্ত্র মনে করে পুরুষের পৌরুষ বাস করে তার একটি ঝুলন্ত নির্বোধ প্রত্যঙ্গে ও তার নিচে থলের ভেতরের একজোড়া অণ্ডকোষে। আধুনিক সব সংস্কৃতিই ধ’রে নেয় সক্রিয়তা বা আক্রমণাত্মকতা হচ্ছে পৌরুষ, নিষ্ক্রিয়তা বা ভীরুতা হচ্ছে নারীত্ব।
২৩#
রাসকিন পুরুষকে ‘ভদ্রলোক’ এর বদলে ভূষিত করেন ‘লর্ড’ উপাধিতে, নারীকে ‘ভদ্রমহিলা’র বদলে ‘লেডি’তে। তবে তিনি ‘লর্ড’ ও ‘লেডি’ শব্দের যে-অর্থ নির্দেশ করেন, তাতে নারীর সব মহিমা লুটিয়ে পড়ে।
‘লেডি’ অর্থ ‘রুটিদানকারিণী’ অর্থাৎ যে ভিক্ষা দেয় ; আর ‘লর্ড’ শব্দের অর্থ ‘আইনরক্ষাকারী’ বা প্রভু।
~( নারী, পৃষ্ঠা ১০৮-৯, হুমায়ুন আজাদ )
২৪#
“”আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে আর এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে””
- হুমায়ুন আজাদ
২৫#
যে- আবেগ প্রেম নামে নরনারীর মনে জেগে ওঠে বিপরীত লিঙ্গের কারো জন্যে, কিশোরতরুণের কাছে যা রক্তমাংসের অনেক ওপরের কোন স্বপ্ন বলে মনে হয়, তা আসলে মাংসের জন্য মাংসের সোনালী ক্ষুধা।
২৬#
বাঙলায় নারীদের পেশা বিবাহ।
২৭#
বিত্তবান শ্রেণীর নারী পরগাছার পরগাছা, বিত্তহীন শ্রেণীর নারী দাসের দাসী।
২৮#
পুরুষতন্ত্রে সূর্য পুরুষ, নারী আঁধার।
২৯#
পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে, করে রেখেছে দাসী; তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো স্তব করে দেবীরূপে।
৩০#
বাঙলায় নারীবাদীরা নারী অধিকারের কথা বলতে ভয় পান, নিজেদের নারীবাদী বলতে নববধূর মত লজ্জা বোধ করেন।

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.