সমরেশ মজুমদার একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক। ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম। তার শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।
১#
আমরা মনে করি প্রেমের পরিণতি বিয়ে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়েতে প্রেম শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া প্রেমিক হিসেবে কেউ অসাধারণ হতে পারে কিন্তু স্বামী হিসাবে অযোগ্য হওয়া বিচিত্র নয়।
~সমরেশ মজুমদার (আকাশে হেলান দিয়ে)
২#
বিয়ের পর প্রথম কিছুটা দিন যে কোন নতুন বউ নতুনই থাকে । তখন তার সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখে কথা বলা, তিক্ততা এড়িয়ে চলা হয় । কিন্তু কয়েকটা দিন কাটলেই কখন সবার অজান্তে সে নিজের হয়ে যায় একসঙ্গে না থাকলেও।
৩#
মাথার ওপর আগুন , পায়ের তলা পুড়ছে । যেদিকে তাকাই খাঁ খাঁ শূন্যতা । সবুজের চিহ্ন নেই । প্রকৃতি যে কত রুক্ষ হতে পারে তার একটা ধারনা হয়েছিল তখন । তোমায় দেখে আজ সেই ছবিটা মনে এল । তুমি এত নিরাসক্ত হয়ে গেলে কি করে”?
— সমরেশ মজুমদার ( কুসুম আমি জানি তুমি ভালো নেই)
৪#
প্রেম করা যায় তাকে বিয়ে করতে নেই? অসম্ভব। ওর একটা বাহানা দরকার ছিলো। টাকাপয়সা গয়নাগাঁটির আড়ালে বাঙালী মেয়ে যে সুখ পায় তা ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিতে বোধ হয় ও কখনোই চায়নি।
~সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
৫#
মনের দূরত্ব বেড়ে গেলে পাশাপাশি চেয়ারে বসেও তাকে প্রয়োজনীয় মানুষ বলে মনে হয় না।
৬#
মদ খাওয়া , জুয়া খেলা , ড্রাগ নেওয়া ইত্যাদির থেকে হাজার গুণ জোরালো এবং ক্ষতিকর নেশা হল প্রেমে পড়া।
~সমরেশ মজুমদার (কষ্ট কষ্ট সুখ)
৭#
পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুত, যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো সে-ই তোমার দুঃখের কারণ হবে।
৮#
ভালবাসার মূলমন্ত্র যদি আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয় তবে যে কোনও ব্যাপারেই মানিয়ে নেওয়া চলে।
~সমরেশ মজুমদার (আমি রেণু )
৯#
ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা।
১০#
ভালোবাসা হলো সকালের মত। স্বার্থর লম্বা ছায়া সূর্য ওঠা মাত্র ছোট হতে আরম্ভ করে। সূর্য যখন মাথার উপর তখন ছায়া পায়ের তলায়। ভালোবাসার পূর্ণতা তখনই হয়ে যায়। তারপর যত বেলা গড়ায়, ছায়া লম্বা হয়, তত ভালোবাসার আয়ু ফুরিয়ে আসে। পৃথিবীতে সবকিছুর মত ভালোবাসার আয়ু বড় ক্ষণস্থায়ী।
~সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
১১#
একটাই শরীর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেমন বদলে যায়।
–সমরেশ মজুমদার (কুলকুন্ডলিনী)
১২#
আমাদের মধ্যে অনেকগুলো ‘একা’ আছে ! প্রিয়জন চলে যাওয়ার সময় এক–একটি জানান দেয় ! এই করতে করতে যখন সব একা ভেঙ্গে পড়বে তখন চুপচাপ শেষ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
-সমরেশ মজুমদার (গীতবিতান ছুঁয়ে বলছি)
১৩#
মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়।
১৪#
স্মৃতি যখন সুধা হারায়, যখন তা গরলে ভরে যায়, তখন প্রেম পূজার অনেক নীচে নেমে যায় মানুষ ?
পরানের পদ্মবনে তখন পদ্ম কোথায় ? শুধুই কাঁটা।
~সমরেশ মজুমদার (পরানের পদ্মবনে)
১৫#
ভালোবাসা কখনো কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায় । কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায় । সয়ে গেলে একসময় ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়।
১৬#
ভালোবাসা একটি আবেগ থেকে জন্মায় যা শরীরকে কেন্দ্র করে যত্নে বেঁচে থাকে।
~সমরেশ মজুমদার (ভালো থেকো, ভালোবাসা)
১৭#
যার গন্ধ তুমি একটি বার পেয়েছ সে অন্য সময় নিশ্চয়ই গন্ধহীন হয়ে থাকবে না। গন্ধটা আছে কিন্তু তুমি সেটা পেতে অভ্যস্ত নও । এই অনভ্যাসটা আকাশের গন্ধের ক্ষেত্রেও কাজ করছে । মাটির গন্ধ থাকবে ,আকাশের গন্ধ থাকবে না ,তা কি হয়?
~সমরেশ মজুমদার (চাঁদের মানুষ আসান)
১৮#
বিয়ে যদি কাউকে করো তাহলে ভাল করে যাচাই করে নিও। নিজের সঙ্গে কথা বলবে পরিষ্কার করে। পরিষ্কার না হলে একা থেকো। তাও বরং ভাল।
~সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
১৯#
তুমি এত বেঁকিয়ে কথা বলতে ভালবাস যে আমি তল পাই না।
~সমরেশ মজুমদার (হিরে বসানো সোনার ফুল)
২০#
ভালোবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।
– সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
২২#
ভালোবাসার মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকা অর্থহীন।
~সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
২৩#
একসঙ্গে দীর্ঘকাল বাস করেও মানুষের সঙ্গে মানুষের চেনাশোনা হয় না।
~সমরেশ মজুমদার (উত্তরাধিকার)
২৪#
আকাঙ্ক্ষার জিনিস পাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা যেমন হেলায় ফেলে রাখে ঠিক তেমনি করে ভালবাসা ফেলে রাখতে নেই। কারণ ভালবাসা প্রতিমুহূর্তে প্রতিপালিত হতে চায় তাকে আগলে রাখতে হয়।
২৫#
ভালোবাসলে অমৃত বিষ হয়ে যায় ? কেন ? ভালোবাসলে বিষ কি কখনও অমৃত হয়ে উঠে না” ?
~সমরেশ মজুমদার (কলিকাতায় নবকুমার )
২৬#
প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধ হয় শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না।
~সমরেশ মজুমদার (সাতকাহন)
২৭#
প্রেম বলুন, ভালোবাসা বলুন! একতরফা দীর্ঘকাল বয়ে গেলে সব অনুভূতি ভোতা হয়ে যায়।
২৮#
পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুদ! যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবে, সেই তোমার দুঃখের কারণ হবে।
২৯#
ভালোবাসা কখনো কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায়। কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায়। সয়ে গেলে একসময় ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়।
৩০#
প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধহয় তার শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না।

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.