You are currently viewing লজ্জা, ২০০০ – তসলিমা নাসরিন

লজ্জা, ২০০০ – তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৬২) বাংলাদেশের একজন আলোচিত ও বিতর্কিত নারীবাদী কথাসাহিত্যিক। তসলিমা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ অবধি কাজ করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন এবং তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় ইসলামপন্থীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।তিনি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকেরও বেশি সময় বসবাস করার পর, তিনি ২০০৪ সালে ভারতে চলে আসেন, কিন্তু ২০০৮ সালে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। এরপর তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।

লজ্জা, ২০০০

পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করছে এগারোটি মুসলমান পুরুষ, ভর দুপুরে।
ধর্ষণ করছে কারণ পূর্ণিমা মেয়েটি হিন্দু।
পূর্ণিমাকে পূর্ণিমার বাড়ির উঠোনে ফেলে ধর্ষণ করছে তারা।
পূর্ণিমার মাকে তারা ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রেখেছে,
চোখদুটো খোলা মার, তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার কিশোরী কন্যার বিস্ফারিত চোখ,
যন্ত্রণায় কাতর শরীর।
পূর্ণিমার বোনটি উপুড় হয়ে পড়ে আছে মাকে শক্ত করে ধরে।
উঠোনে হু ড়োহুড়ি, পূর্ণিমার মা পাথর-কণ্ঠে মিনতি করছেন, বাবারা, এক সাথে না,
একজন একজন কইরা যাও ওর কাছে।
এগারোটি উত্তেজিত পুরুষাঙ্গে তখন ধর্মের নিশান উড়ছে।
পূর্ণিমার কান্না ছাপিয়ে পূর্ণিমার মার, গ্রামের কুলবধূটির তুমুল চিৎকারে তখন দুপুর
দ্বিখণ্ডিত, তিনি ভিক্ষে চাইছেন বাবাদের কাছে, –‘যা করার আমারে করো, ওরে ছাইড়া দেও।’
মুসলমানেরা পূর্ণিমাকে ছেড়ে দেয়নি,
পূর্ণিমার মাকেও দেয়নি,
ছ বছর বয়সী ছোট বোনটিকেও দেয়নি।
কাব্যগ্রন্থ – কিছুক্ষণ থাকো (২০০৫)।

Leave a Reply