You are currently viewing রাজা রামমোহন রায়ের উক্তি : সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের ২০ টি বিখ্যাত উক্তি

রাজা রামমোহন রায়ের উক্তি : সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের ২০ টি বিখ্যাত উক্তি

রামমোহন রায় (২২ মে ১৭৭২ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩) বাংলা রেনেসাঁসের আদিম পুরুষ। তার হাত ধরেই বাংলা রেনেসাঁসের জন্ম হয়েছিলো। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন দার্শিন। তৎকালীন সময়ের রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তার বিশেষ প্রভাব ছিলো। এছাড়াও তিনি কলকাতায় দ্বারকনাথ ঠাকুরের সাথে মিলে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে রাজা রামমোহন রায় বেশি প্রশংসিত সতীদাহ প্রথার মতো নৃশংস প্রথা বন্ধ করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য। ১৮২৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর বেন্টিং এর মাধ্যমে সতীদাহ নিষিদ্ধ করেন। এই লেখায় সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের কিছু বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরেছি।

বিদ্যা শিক্ষা এবং জ্ঞান শিক্ষা দিলে পরে ব্যক্তি যদি অনুভব ও গ্রহণ করিতে না পারে তখন তাহাকে অল্পবুদ্ধি কহা সম্ভব হয়; আপনারা বিদ্যা শিক্ষা জ্ঞানোপদেশ স্ত্রীলোককে প্রায় দেন নাই, তবে তাহারা বুদ্ধিহীন হয় ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন? বরঞ্চ লীলাবতী, ভানুমতী, কর্ণাট-রাজার পত্নী, কালিদাসের পত্নী প্রভৃতি যাহাকে যাহাকে বিদ্যাভাস করাইয়াছিলেন, তাহারা সর্ব্ব শাস্ত্রের পারগ রূপে বিখ্যাত হইয়াছে।

একবার ভেবে দেখুন আপনার মৃত্যুর দিনটি কতটা ভয়াবহ হবে। অন্যরা কথা বলতে থাকবে এবং আপনি আর তর্ক করতে পারবেন না।

মিথ্যা ও প্রবঞ্চনার বেশি অধর্ম আর নেই। মিথ্যাবাদী যদি কখনো সত্যও বলে, তাহলেও কেউ তা বিশ্বাস করে না। আবার এক মিথ্যাকে বজায় রাখতে আরও মিথ্যা দিয়ে তা সাজাতে হয়। এর বেশি প্রবঞ্চনা আর কী আছে।

ঈশ্বর একজন। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তার কোন শেষ নেই। তিনি সকল জীবের মধ্যে বিরাজমান।

এক জাতীয় লােক আছে, যারা অন্যদের সমর্থন আকর্ষণ করতে আপন ইচ্ছানুযায়ী ধর্মের নাম দিয়ে মতবাদ তৈরি করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লােকের মধ্যে উত্তেজনা ও বিবাদের সৃষ্টি করে। অপরদিকে আর এক ধরনের লােক আছে যারা কোনরকম বিবেচনা না করেই পূর্বোক্ত লােকেদের আনুগত্য স্বীকার করে। তৃতীয় আর এক দল লােক আছে যারা অন্যদেরও নিজেদের দলে (জোর করে) টানতে চায়। চতুর্থ শ্রেণীতে আছেন তাঁরা যারা মহামহিম ঈশ্বরের করুণায় প্রতারক নন, প্রতারিতও নন।…সংস্কারমুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গীসহ বিচার করে চলাই শ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ।

কৃত (লােকাচার ও দেশাচার) অনুষ্ঠানকে যদি কোনাে মানুষ পালন করে, তার (মানসিক অবস্থানের) প্রতি পণ্ডিত (জ্ঞানী)-গণ ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’ শব্দের প্রয়ােগ করে থাকেন।….(এখন বিশেষ ভাবে) প্রয়ােজন কুসংস্কার ও গোঁড়ামিকে আক্রমণ।

সতীদাহ প্রথা একটি বর্বর প্রথা।

প্রতিটি ঘটনার কার্যকারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করবার ক্ষমতার অভাবের ফলে কুসংস্কারের জন্ম।

গালাগালি এবং অপমান করা, যুক্তি এবং ন্যায়বিচারের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

১০

আত্মা এক। তার মায়াভাবে (বিভিন্ন দেহরূপ) প্রপঞ্চেও নানাবিধ চেতনাত্মক জীব পৃথক পৃথক রূপে আচরণ ও কর্মফলভােগ করে, পুনরায় (দেহ) প্রপঞ্চ ভঙ্গ হলে প্রতিবিম্বের ন্যায় আর ক্ষণমাত্রও পৃথকরূপে থাকে না। জীব যদিও (স্বরূপতঃ) একক আত্মা হতে ভিন্ন নয়, তথাপি জীবের ভােগে আত্মার ভােগ হয় না।

১১

আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা যেমন প্রাচীন ভারতবর্ষের আর্যসভ্যতার চরম বাণী, সামাজিক স্বাধীনতাও তেমনই আধুনিক যুগের চরম বাণী।

১২

কোনাে বিষয়ের দুই দিক দেখে কদাচ বিরােধ করাে না। বাদী, প্রতিবাদী এই উভয়ের যথার্থ অভিপ্রায় না বুঝে একপক্ষের প্রশংসা ও অন্যপক্ষের নিন্দা করা মহতের কাছে কেবল হাস্যাসম্পদের লক্ষণ হয়।

১৩

ঈশ্বর এক। বিশ্বের পরম নিয়ন্তা। তিনি ব্রহ্ম। নিরাকার। তাঁকে দেখা যায় না, তাঁকে অনুভব করতে হয়।

১৪

এই জগতে বিদ্যমান প্রতিটি বস্তু পৃথক পৃথকভাবে কয়েকটি কারণ, পরম্পরা ও নিয়মের অনুবর্তী। এমনকি প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ সেই কারণ, পরম্পরা ও নিয়মগুলি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি পদার্থের অস্তিত্ব একটি অখণ্ড পরিকল্পনায় বাঁধা।

১৫

সত্য তাই যা কার্যকারণের দ্বারা যুক্ত, বিশ্বাস চালিত নয়। মিষ্টান্নজ্ঞানে বিষ সেবন করিলে মৃত্যু অবধারিত।

১৬

কোনও বিষয়ের দুই দিক দেখে কদাচ বিরোধ কোরো না। বাদী, প্রতিবাদী এই উভয়ের যথার্থ অভিপ্রায় না বুঝে একপক্ষের প্রশংসা ও অন্যপক্ষের নিন্দা করা মহতের কাছে কেবল হাস্যাসম্পদের লক্ষণ হয়।

১৭

ঈশ্বর মানুষকে যে বােধ (মনন) শক্তি প্রদান করেছেন, তার অভিপ্রায় হলাে এই যে, স্বজাতীয় অন্যান্য অধিকাংশ মানুষের মতাে সে পশুবৎ অনুকরণ না করে নিজের অর্জিত জ্ঞানের সহায়তায় প্রত্যেক ব্যাপারে শুভ-অশুভ বিবেচনায় নিজের বােধশক্তিকে প্রয়ােগ করবে। (বস্তুতঃ) তখনই এই ঈশ্বরদত্ত (ক্ষমতা) বােধশক্তি সার্থকতা লাভ করবে।

রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে বিখ্যাত মানুষদের উক্তি

১৮

এ কথা কেউ বলতে পারবে না যে, রামমোহন পাশ্চাত্য বিদ্যাদ্বারা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্রজ্ঞান তাঁর গভীর ছিল, অথচ তিনি সাহস করে বলতে পেরেছিলেন- দেশে বিজ্ঞানমূলক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার চাই। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিদ্যার যথার্থ সমন্বয় সাধন করতে তিনি চেয়েছিলেন। বুদ্ধি জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক সম্পদের ক্ষেত্রে তাঁর এই ঐক্যসাধনের বাণী ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক আশ্চর্য ঘটনা।
~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯

প্রকৃত পক্ষে রাজা রামমোহন রায় এ দেশীয় দ্বারা লিখিত বাঙ্গালা সংবাদপত্রের পথ প্রদর্শক। তিনিই ১৮২১ সালে “সংবাদ কৌমুদী” নামে সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশ করেন। ঐ কৌমুদীতে জ্ঞাতব্য বিষয় অনেক খাতি। ইহা লোকশিক্ষার একটী প্রধান উপায় স্বরূপ ছিল।
~ শিবনাথ শাস্ত্রী

২০

এ দেশে রামমোহন রায়ের যখন আবির্ভাব, তখনতো রীতিমত দূর্গতির দিন। মানুষের দৃষ্টিশক্তি ছিল মোহাবৃত, আর সৃষ্টিশক্তি ছিল আড়ষ্ট। বর্তমান যুগের কোন প্রশ্নের নূতন উত্তর দেবার মতো বাণী তখন আমাদের ছিল না। …কি রাজনীতি, কি বিদ্যাশিক্ষা, কি সমাজ, কি ভাষা, আধুনিক বঙ্গদেশে এমন কিছুই নাই, রামমোহন স্বহস্তে যাহার সূত্রপাত করিয়া যান নাই।
~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a Reply