You are currently viewing মাস্টারদা সূর্য সেনের উক্তি : বিপ্লবী সূর্যসেনের ৮ টি বিখ্যাত উক্তি

মাস্টারদা সূর্য সেনের উক্তি : বিপ্লবী সূর্যসেনের ৮ টি বিখ্যাত উক্তি

সূর্য সেন (২২ মার্চ ১৮৯৪ – ১২ জানুয়ারি ১৯৩৪) বা সূর্য কুমার সেন যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত, তার ডাকনাম ছিল কালু। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেওয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলিদান করেন। সূর্যসেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।

সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায় “কে জানতো যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপি অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানতো সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে – তার সমস্ত ক্ষমতাকে উপহাস করে বৎসরের পর বৎসর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই! নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান- ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!

রেখে যাবার মত একটি জিনিষই আমার আছে; তা হল আমার স্বপ্ন। সারা জীবন প্রচন্ড আবেগ নিয়ে সেই স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে জগতের আর সবকিছু ভুলে ক্লান্তিহীন আমি ছুটে চলেছি। জানিনা আরাধ্য কাজ সফল করার পথে কতটা এগিয়ে। যেতে পারলাম। জানিনা সেই পদ্মের কোনখানে এসে আমাকে থেমে যেতে বাধ্য করা হল। যদি লক্ষ্যে পৌঁছবার আগে মৃত্যুর শীতল হাত তোমাকেও স্পর্শ করে তবে আরাধ্য কাজের দায়িত্ব তোমার উত্তরসূরীদের হাতে অর্পন করো। যেমন আমি এগিয়ে গেলাম, এগিয়ে চলো। সামনে এগিয়ে চলো, পিছিয়ে পড়োনা, মুহূর্তের জন্যেও না।

ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।

আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা।

চার-পাঁচ দিন আগে একদিন সন্ধ্যার সময় একদৃষ্টে একমনে আকাশের দিকে চেয়েছিলাম। নির্মল জোৎস্নায় সমস্ত নীল আকাশ ভরে গিয়েছিল। অসংখ্য নক্ষত্র সুন্দর ফুলের মতো সারা আকাশে ফুটে রয়েছিল। গাছগুলি নীরবে যেন প্রকৃতির এই বিমল সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে গেল। মনে পড়ে গেল তাঁর কথা, যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের আনন্দের জন্য প্রকৃতির অনন্ত সৌন্দর্যের ভাণ্ডার খুলে রেখেছেন।… মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলেছে। এই আনন্দময়, পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য কি রেখে গেলাম? মাত্র একটি জিনিস, তা হল আমার স্বপ্ন, স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন।
( জীবনের শেষ দিকে জেলে বসে অত্যাচারের সব শারীরিক যন্ত্রণা তুচ্ছ করে সূর্য সেন চিঠিটি লিখেছিলেন। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা)

সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।

লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি।

প্রিয় বন্ধুরা আমার, এগিয়ে এসো, এগিয়ে চলো, জীবনের বিকাশের দিকে এগিয়ে চলো- কখনো পিছিয়ে থেকো না। বন্ধনের দিন শেষ হয়ে আসছে। ঐ দেখা যায় স্বাধীনতার নবারুণ। উঠে পড়ে লাগো। কখনো হতাশ হয়ো না। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, জীবনের সাফল্য আমাদের অবধারিত।
( ফাঁসিতে ঝোলানোর পাঁচ ঘন্টা পূর্বে লিখা মাস্টার দা’র শেষ চিঠির অংশ)

Leave a Reply