ময়ূরাক্ষী উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজির প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। হিমু সিরিজের প্রধান চরিত্র হিমু। হিমুর বাবা ছিলেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ তিনি বিশ্বাস করতেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। এই মহাপুরুষ তৈরির জন্যই সে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। একসময় হিমুর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার আগে তিনি হিমুকে বলে যান সে যেন ১৬ বছর পর্যন্ত তার মাতৃকুল অর্থাৎ তার মামাদের কাছে থাকে। সাথে এও সতর্ক করে দিয়ে যান তার মামারা পিশাচ প্রকৃতির। পিশাচ শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে না এলে মানুষের সৎ গুণ সম্পর্কে ধারণা হবে না। একসময় হিমু বড় হয়। মেট্রিক পাসের পর তার ফুফুর বাড়িতে আসে। সেখানেও এক সমস্যা হয়। তার ফুফাতো ভাই তার সংস্পর্শে এসে তার ভক্ত হয় এবং ৩ বার ইন্টারমিডিয়েটে ফেল করে। বাদল হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে। হিমুর প্রতি রয়েছে তার অগাধ বিশ্বাস। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার ২ বছর পর প্রথম কথা হয় রূপার সাথে। একসময় সে ভালোবেসে ফেলে হিমুকে কিন্তু হিমু তাকে ধরা দেয় না ঠিক তেমনিই চলেও যায় না সে। সে যে মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা করছে সে কেমন করে স্বাভাবিক হয়ে রূপার কাছে যাবে।
১
বেঁটে লোক খুব ইন্টেলিজেন্ট হয়। যত লম্বা হয় বুদ্ধি তত কমতে থাকে। আমি এখন পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিমান লম্বা মানুষ দেখিনি।
২
তোমার কি কোনো নীল রঙের শাড়ি আছে?
কেন বল তো।
যদি থাকে তাহলে নীল রঙের শাড়ি পরে গেটের কাছে থাকো। আমি এলেই গেট খুলে দেবে।
আচ্ছা।
আমি গেলাম না। আবারও মাসখানিকের জন্য ডুব দিলাম। কারণ ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে কখনো যেতে নেই।
৩
যা পাওয়া যায় না তার প্রতি আমাদের আগ্রহের সীমা থাকে না। মেঘ আমরা কখনো স্পর্শ করতে পারি না বলেই মেঘের প্রতি মমতার আমাদের সীমা নেই।
৪
পুরুষ হচ্ছে সোনার চামচ। সোনার চামচ বাঁকাও ভালো।
৫
হাসিতে খুব সহজেই মানুষকে চেনা যায় ।সব মানুষ একই ভঙ্গিতে কাঁদে কিন্তু হাসার সময় একেক জন একেক রকম করে হাসে।
৬
ময়ূরাক্ষী নদীকে একবারই আমি স্বপ্নে দেখি। নদীটা আমার মনের ভেতর পুরোপুরি গাঁথা হয়ে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ করি কোথাও বসে একটু চেষ্টা করলেই নদীটা আমি দেখতে পাই। তারজন্যে আমাকে কোনো কষ্ট করতে হয় না। চোখ বন্ধ করতে হয় না, কিছু না। একবার নদীটা বের করে আনতে পারলে সময় কাটানো কোনো সমস্যা নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা আমি নদীর তীরে হাঁটি। নদীর হিম শীতল জলে পা ডুবিয়ে বসি। শরীর জুড়িয়ে যায়। ঘূঘুর ডাকে চোখ ভিজে ওঠে।
৭
থেকে যেতে চাইলেই থেকে যাওয়া যায় না, যদি অপর পাশের মানুষটা আগলে না রাখে।
৮
ভীত হরিণীর চোখ যেমন সুন্দর হয়, ভীত তরুণীর চোখও বোধহয় সুন্দর হয়।
৯
এ যুগের মেয়েদের প্রতারিত করা খুব কঠিন।
১০
ভালোবাসার মানুষের খুব কাছে কখনো যেতে নেই।
১১
দূর থেকে যে জিনিস যত সুন্দর, কাছ থেকে সে জিনিস তত অসুন্দর।
১২
তুমি কি জানো, আমি তোমার কথা খুব ভাবি?
—হ্যাঁ আমি জানি।
কিভাবে জানো?
—ভালোবাসা টের পাওয়া যায়!
১৩
আজকাল অধিকাংশ মায়েরাই মেয়েদের ভয় পায়।
১৪
রূপা, তুমি কি এক্ষুনি নীল রঙের একটা শাড়ি পরে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশ ধরে নীচের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একটুখানি দাঁড়াও। আমি তোমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাব। আমি জানি রূপা আমার কথা বিশ্বাস করেনা তবু যত্ন করে শাড়ী পরে। চুল বাঁধে। চোখে কাজলের ছোঁয়া লাগিয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়ায়। সে অপেক্ষা করে। আমি কখনো যাই না।
—হুমায়ূন আহমেদ (ময়ূরাক্ষী)
১৫
পিশাচ শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে না এলে মানুষের সৎ গুণ সম্পর্কে ধারণা হবে না।
১৬
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপেক্ষা নামের ব্যাপারটি খুব প্রয়োজন।
১৭
কবি শুনে মেয়েরা খানিকটা দ্রবীভূত হয়। পুলিশ কখনো হয় না। পুলিশের সঙ্গে কবিতার নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোন বিরোধ আছে।
১৮
কেন জানি তোমার কথা সবসময় মনে হয়। এর নাম কি ভালোবাসা?
১৯
কিছু মানুষ ধরেই নিয়েছে তারা যা ভাবছে তাই ঠিক। তাদের জগতটাই একমাত্র সত্যি জগত। এরা রহস্য খুঁজবে না। এরা স্বপ্ন দেখবে না”
২০
সুন্দরী মেয়েরা খুব অহংকারী হয়। তারা সব সময় তাদের চারপাশে একদল মুগ্ধ পুরুষ দেখতে চায়।
২০
যখনই সময় পাবি ছাদে এসে আকাশের তারার দিকে তাকাবি, এতে মন বড় হবে।মনটাকে বড় করতে হবে। ক্ষুদ্র শরীরে আকাশের মতো বিশাল মন ধারণা করতে হবে।
