ক্ষুদিরাম বসু (৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯ — ১১ আগস্ট ১৯০৮) ছিলেন একজন ভারতীয়-বাঙালি বিপ্লবী যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্ৰাম করেছিলেন।
ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছেন ভেবে তাকে গুপ্তহত্যা করার জন্যে বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন, যে ঘটনার ফলে দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তাঁর বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। বাল গঙ্গাধর তিলক, তার সংবাদপত্র কেশরীতে দুজন নবীন যুবককে সমর্থন করে আওয়াজ তোলেন অবিলম্বে স্বরাজ চাই। যার ফল হয় অবিলম্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দেশদ্রোহিতার অপরাধে তিলককে গ্রেপ্তার করে।
১
আমি পাগল হয়ে যাই এই দেখে- যে দেশে রাস্তার দুপাশে ককলাসার কাঙালীর দল শীতের হাওয়ায় গরম কাপড়ের অভাবে থর্ থর্ করে কাঁপছে-সেই দুর্ভাগা দেশে তাদের সামনে দিয়ে বড়লোকের ছেলেরা বুক ফুলিয়া শাল গায়ে দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে পথে চলেছে।
২
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী।
৩
লড়ো, না লড়তে পারলে বলো। না বলতে পারলে লেখো, না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও। না সঙ্গ দিতে পারলে যারা সঙ্গ দিচ্ছে তাদের মনোবল বাড়াও। যদি তাও না পারো, যে পারছে তার মনোবল কমিয়ে দিওনা। কারণ সে তোমার ভাগের লড়াই করছে।
৪
উৎসাহ না পেয়েও যারা দেশের কাজ করে তারাই তো যথার্থ দেশপ্রেমিক।
৫
যে চাষী সমাজকে খাদ্য যোগায়, তাকেই আমরা চাষা বলে অবজ্ঞা করি।
৬
এই শাল যে ও বিক্রি করে ফেলবে তা আমি ভালোভাবেই জানি। কিন্তু বিক্রি করে যা পাবে তার দ্বারা কিছুদিনের জন্য তো ওর পেট চলবে। আর বাবার স্মৃতির জিনিস বাক্সে থেকে পচে ছিঁড়ে যাওয়ার চেয়ে তার বদলে যদি প্রাণ বাঁচানোর জন্য কারও একমুষ্টি অন্ন মেলে, তাহলে আমি মনে করি বাবার স্মৃতির জিনিস সার্থক হল। সত্যিই আমি পাগল হয়ে যাই এই দেখে – যে দেশে রাস্তার দুপাশে কঙ্কালসার কাঙালীর দল শীতের হাওয়ায় গরম কাপড়ের অভাবে থরথর করে কাঁপছে – সেই দুর্ভাগা দেশে তাদের সামনে দিয়ে বড়লোকের ছেলেরা বুক ফুলিয়ে শাল গায়ে দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে পথে চলেছে।
৭
“…ঠোঁটে ঠোঁটে কাঁপে প্রতিজ্ঞা দুর্বোধঃ কানে বাজে শুধু শিকলের ঝন্ধন; প্রশ্ন নয়কো পারা না পারার, অত্যাচারীর রুদ্ধ কারার দ্বার ভাঙা আজ পণ; এতদিন ধ’রে শুনেছি কেবল শিকলের ঝন্ধন। ওরা বীর, ওরা আকাশে জাগাত ঝড়, ওদের কাহিনী বিদেশীর খুনে গুলি, বন্দুক, বোমার আগুনে আজো রোমাঞ্চকর; ওদের স্মৃতিরা শিরায় শিরায় কে আছে আজকে ওদের ফিরায় কে ভাবে ওদের পর? ওরা বীর, আকাশে জাগাত ঝড়!…”
৮
আচ্ছা, তোমরা দড়িতে মোম দাও কেন?
৯
পড়া শেষে জজ-সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“যে রায় দেওয়া হলো, তা তুমি বুঝতে পেরেছো তো?”
হাসিমুখে মাথা নাড়লেন ক্ষুদিরাম। বললেন, “হ্যাঁ বুঝেছি।”
“তোমার আর কিছু বলার আছে?”
“আমাকে একটা কাগজ কলম দিলে বোমাটা এঁকে দেখিয়ে দিতে পারি। বোমার সম্পর্কে অনেকেরই কোন ধারণা নেই।”
বিচারক কঠোর মুখে জানালেন, “না, তা হতে পারে না।”
“দেশের তরুণদের জন্যে বোমা তৈরির সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই।”
সন্ত্রস্ত্র বিচারক তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, “ওহ, নো, নেভার। তোমাকে কিছু বলতে দেওয়া হবে না।”
মৃদু হাসলেন ক্ষুদিরাম। বললেন, “আমি আবার আসবো।”
১০
জীবন অত্যন্ত সুখদ, যখন তাকে শেষ করে দেওয়া হয়।