You are currently viewing হলুদ বসন্ত উপন্যাস উক্তি : ১৫ টি অসাধারণ সংলাপ ও উক্তি

হলুদ বসন্ত উপন্যাস উক্তি : ১৫ টি অসাধারণ সংলাপ ও উক্তি

“হলুদ বসন্ত” পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বুদ্ধদেব গুহের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস। হলুদ বসন্ত উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৮০ সালে। উপন্যাসটি বুদ্ধদেব গুহর একটি মর্মস্পর্শী ও মনোজ্ঞ রোমান্টিক ধাঁচের উপন্যাস, যা পাঠককে এক ভিন্ন ধরনের অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। উপন্যাসটির মূল উপাদান প্রেম, সম্পর্ক, এবং জীবনের অস্থিরতা।

১#

বসন্ত যখন আসে তখন এমনি করেই আসে, যতো ফুল সফল হয় তার বেশি হয় নিষ্ফল।

২#

এসবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই উত্তাপহীনতা, এই ব্যথা পাওয়া, এই নিজেকে ছোট করার সীমালঙ্ঘন – এই সবকিছুতেই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

৩#

তারপর একটি একটি করে বুড়ি বছরগুলি হাওয়ার সওয়ার হয়ে নিমগাছের পাতার মতো ঝরে গেছে। দুপুরের ক্লান্ত কাকের মতো কা-খবা–কা-খবা করে প্রথম যৌবনের দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। বেগুনি প্যাশন ফ্লাওয়ারের মতো সুগন্ধি স্বপ্ন দেখেছি এবং একদিন এক জিয়াভরলি ভোরে আবিষ্কার করেছি যে, নয়না আর আমার কাছে সুজয়ের বোন মাত্র নয়। সে আমার অজানিতে আমার নয়ন মণি হয়ে উঠেছে। ঠিক কোন সময় থেকে সে আমার মনে, অনবধানে, একটি কৃষ্ণসার হরিণীর মতো সুন্দরী, কাকাতুয়ার মতো কোমল এবং মৌটুসি পাখির মতো সোহাগী হয়ে উঠেছে তা বুঝতে পারিনি। সেই ভোরে, হঠাৎ দরজা খুলেই মনের উঠোনে পত্রপল্লব বিস্তার করা রঙিন কৃষ্ণচুড়ার মতো তার মঞ্জুরিত ব্যক্তিত্বকে অনুভব করে আমার সমস্ত সত্তায় শিরশিরানি জেগেছে।

৪#

সবাই স্বপ্ন দেখে কি না জানি না, তবে অনেকে দেখে। আমিও দেখি। আমার ধারণা সবাই স্বপ্ন দেখতে শেখেনি।

৫#

তারপর একটি একটি করে বুড়ি বছরগুলি হাওয়ার সওয়ার হয়ে নিমগাছের পাতার মতো ঝরে গেছে। দুপুরের ক্লান্ত কাকের মতো কা-খবা–কা-খবা করে প্রথম যৌবনের দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। বেগুনি প্যাশন ফ্লাওয়ারের মতো সুগন্ধি স্বপ্ন দেখেছি এবং একদিন এক জিয়াভরলি ভোরে আবিষ্কার করেছি যে, নয়না আর আমার কাছে সুজয়ের বোন মাত্র নয়। সে আমার অজানিতে আমার নয়ন মণি হয়ে উঠেছে। ঠিক কোন সময় থেকে সে আমার মনে, অনুধাবনে, একটি কৃষ্ণসার হরিণীর মতো সুন্দরী, কাকাতুয়ার মতো কোমল এবং মৌটুসি পাখির মতো সোহাগী হয়ে উঠেছে তা বুঝতে পারিনি। সেই ভোরে, হঠাৎ দরজা খুলেই মনের উঠোনে পত্রপল্লব বিস্তার করা রঙিন কৃষ্ণচুড়ার মতো তার মঞ্জুরিত ব্যক্তিত্বকে অনুভব করে আমার সমস্ত সত্তায় শিরশিরানি জেগেছে।

৬#

স্বপ্ন মানে–খুব যে একটা বিরাট কিছু তা নয়। অল্প একটু জমি, এই কাঠা দশেক হলেই চলে–তাতে একটি ছোট বাংলো প্যাটার্নের একতলা বাড়ি। ইটালিয়ান ধাঁচের পোর্টিকোওয়ালা। ঘর থাকবে মোটে তিনটি–চারপাশে কাঁচ থাকবে শুধু কাঁচ। প্রচুর জায়গা নিয়ে একটি স্টাডি। চতুর্দিকে বই। বই—বই–রাশীকৃত বই। এক কোনায় ছোট একটা কর্নার টেবল–তাতে একটি সাদা টেবল-ল্যাম্প থাকবে। সেখানে বসে আমি লিখব। ফার্নিচার বেশি থাকবে না। পাতলা একরঙা পার্শিয়ান কার্পেট থাকবে মেঝেতে। একেবারে সাদা ধবধবে টাইলের মেঝে হবে। প্রতি ঘরে ঘরে রোজ ফুল বদলানো হবে। চারিদিকে চওড়া ঘোরানো বারান্দা থাকবে। থোকা থোকা বুগেনভেলিয়া লতায় চারদিক ভরা থাকবে। গেটের দু’পাশে দুটি গাছ থাকবে–কৃষ্ণচূড়া নয়, রাধাচূড়া। কৃষ্ণচূড়া বিরাট বড়–ওই ছোট্ট বাড়িতে বিরাট কিছু মানাবে না। বারান্দায় রেলিং থাকবে। সাদা। রট আয়রনের। বাথরুমটা বেশ বড় হবে, যাতে নয়না গান গেয়ে গেয়ে ঘুরে ঘুরে শাওয়ারের নীচে চান করতে পারে।
বসন্তকালে লনের চেরি গাছের নীচে বেতের চেয়ারে বসে চা খাব আমরা।আমি আর নয়না।
― হলুদ বসন্ত / বুদ্ধদেব গুহ

৭#

নয়নাকে যে শাড়ি আমি দেবো সে তো নিছক শাড়ি মাত্র নয়। তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো – সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে।সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নাসোনার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো — ছড়িয়ে থাকবো।আমি যে জড়িয়ে থাকবো।

৮#

ওর সঙ্গে দেখা হলেই ভিতরের ভিখিরিটা রাজার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে হাঁটু গেড়ে বসে ভিক্ষা চাইবেই। এই ভালো। দেখা না হওয়াই ভাল। কথা না হওয়াই ভাল! তার চেয়ে লোভগুলি আমার বুকের ভিতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতো কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক।

৯#

টাকায় কি হয় ? কারই বা কি হয় ? একটা সীমা – ন্যূনতম ভদ্রলোকি সীমায় পৌঁছানোর পর টাকায় কারই বা কি হয় ? ভালোবাসার ধনকে উপহার দেবার মতো মহৎ উপায়ে নষ্ট করা ছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা থাকার কোনো মানে হয় না।…..নিজের প্রয়োজন কোনও দিন মিটবে না।প্রয়োজনের শেষ হবে না।বাড়ালেই বাড়বে।তার চেয়ে নিজের প্রয়োজন সীমিত রেখে, যাদের ভালোবাসি তাদের জন্য কিছু করতে পারলে আনন্দে বুক ভরে যায়।….. সব আনন্দের মাপ কি একই কাঁটায় হয় ? এই আনন্দ অন্য আনন্দ,উদার আনন্দ।মহৎ আনন্দ।

১০#

ভাল লাগা আর ভালবাসার পার্থক্যটা কোথায়? ভাল লাগলে মানুষ সেই ভাল-লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালবাসা তাকে যা বলে, পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।

১১#

যদিও তুমি আমাকে অনুক্ষণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছ,আমি তোমাকে অমৃত করে দিলাম।আমার মনের হিজলের শাখা থেকে মুক্ত করে আমার একান্ত পাখিকে আমি চিরকালের,আকাশের করে দিলাম।

১২#

জানো নয়না, ছোটবেলা থেকে জনারণ্যের মুখ চেয়ে বড় হইনি— আজও মাত্র একজন দুজনের দাক্ষিণ্যে বেঁচে আছি— যা কিছু করার করছি— তাই তাদের মধ্যে যখন কেউ ফাঁকি দেয়, তখন অন্ধের মত দিশাহারা হয়ে পড়ি— পথ দেখতে পাই না। কী করবো বুঝতে পারিনা। বুঝলে?

১৩#

এই ভালো। দেখা না হওয়াই ভালো। কথা না হওয়াই ভালো। তার চেয়ে আমার দূরন্ত লোভগুলি আমার বুকের ভেতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম-ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতো কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক; তবু সে সুখে থাকুক, খুশি থাকুক। আমার অশেষ আর্তি তার সুখকে কোনদিনও যেন বিঘ্নিত না করে।

১৪#

যে শাড়ি নয়নাকে আমি দেব,তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো – সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে।সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো — ছড়িয়ে থাকবো।আমি যে জড়িয়ে থাকবো।

১৫#

নয়নাকে যে শাড়ি আমি দেবো সে তো নিছক শাড়ি মাত্র নয়। তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে। সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নাসোনার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো ছড়িয়ে থাকবো। আমি যে জড়িয়ে থাকবো।

Leave a Reply