হিমুর মধ্যদুপুর উপন্যাসটি বাংলাদেশের নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে হিমু অন্যতম একটি উপন্যাস। এই উপন্যাসটি হিমু সিরিজের প্রথম বই হলো ময়ূরাক্ষী (১৯৯০)। হিমু সিরিজের বইগুলোর মধ্যে হিমুর মধ্যদুপুর বইটি ১৯তম। হিমুর মধ্যদুপুর বইটি ২০০৯ সালের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে বইটি বের হয়।
এই উপন্যাসের হিমু এক অদ্ভুত চরিত্র। কাকতালীয়ভাবে হিমু যা বলে তাই মিলে যায়। মাজেদা খালার মধ্যস্ততায় হিমু একজনকে কিডনি দেওয়ার জন্য তার বাড়ি যায় যার নাম পল্টু। সেখান থেকেই কাহিনির সূত্রপাত। হিমু কিডনি দিতে গেলেও গিয়ে তার বাড়ির চাকর হয়ে অনেকদিন থাকে। পল্টুর অনেক সম্পত্তি ছিলো কিন্তু তিনি শুধু বই পড়তো। কিছুটা পাগল স্বভাবের হওয়ায় সম্পত্তির প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা। মাঝখানে হিমুর সাথে দেখা হয় রানু নামের এক মেয়ের। তাকেও মাজেদা খালা কিডনি বিক্রি করতে পল্টুর কাছে পাঠিয়েছিলো। কিন্তু হিমু পল্টুকে নানাভাবে বোঝায় যে অন্যের কিডনি নিয়ে বেঁচে থেকে লাভ নেই। পরে সাত্তার নামক এক লোক পল্টুর সম্পত্তি নিয়ে নিতে চায় কিন্তু হিমুর বুদ্ধির বলে তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত জানা যায় হিমুর নামে তিনি একটি চিঠি দিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন এবং চিঠিতে লেখা ছিলো তার সব সম্পত্তি তিনি সমাজের কল্যাণের জন্য দিয়ে গিয়েছেন। মাঝখানে হিমু জেলখানায় যায় এবং সেখানে রুপা তাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। হিমুর জীবনে রুপা আসে খুব কম সময়ের জন্য কিন্তু তার মাঝেও রুপা এবং হিমুকে আলাদা করা যায়না। যদিও শেষ পর্যন্ত হিমু রুপার সাথে দেখায় করেনি। হতে পারে হিমু ভুলে গিয়েছে আবার হতে পারে হুমায়ুন আহমেদই ভুলে গিয়েছিলেন যে রুপা হিমুকে কল করে দেখা করতে বলেছে।
১
বুদ্ধিমানের কাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকবে। আর বোকাদের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবে।
২
একটা মানুষ জগতের আনন্দ যজ্ঞের নিমন্ত্রনে উপস্থিত হয়েছে,এটা অনেক বড় ব্যাপার।আনন্দ যজ্ঞে আমাদের সবার নিমন্ত্রণ। কিন্তু আমরা নিমন্ত্রনের কার্ড হারিয়ে ফেলি বলে যেতে পারি না।দূর থেকে অন্যের আনন্দ যজ্ঞ দেখি।
৩
‘রূপা কে?’
‘আছে একজন। সে আমার জন্য অদ্ভুত সারপ্রাইজ নিয়ে অপেক্ষা করে। আমি কখনো তা দেখি না।’
৪
মধ্যদুপুর বড়ই আশ্চর্য সময়। তখন ভুতে মারে ঢিল এবং অদ্ভুত কোনো কারনে কিছু সময়ের জন্য আকাশটা আয়না হয়ে যায়। হিমু হাঁটতে বের হয়েছে মধ্যদুপুরে। তার হাতে ছোট্ট একটা দুপুরমনি ফুলের চারা। সেখানে চার পাঁচটা ফুল। এখনো ফোটেনি। মধ্যদুপুরে ফুটবে। হিমু ফুল ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের দিকে তাকাবে। নিজেকে দেখার চেষ্টা করবে আকাশ আয়নায়!
~ হিমুর মধ্যদুপুর, হুমায়ূন আহমেদ
৫
মধ্যদুপুর খুব আশ্চর্য সময় তখন মানুষের ছায়া পড়ে না।
৬
প্রকৃতি মাঝে মাঝে মানুষকে এমন বিপদে ফেলে। চোখে পানি আসার সিস্টেম না থাকলে জীবন যাপন হয়তো সহজ হতো।”
-হিমুর মধ্যদুপুর, হুমায়ূন আহমেদ
৭
সৌভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথও তখন একটা সিমকার্ড কিনতে এসেছিলেন। তার ইচ্ছে বিভিন্ন তরুনীদের তিনি টেলিফোন করে জানতে চাইবেন সখী, ভালোবাসা কারে কয়?
৮
পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বাবুর্চি ছিলেন যেমন এরিস্টটল, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি।
রানু বলল, উনারা বাবুর্চি ছিলেন?
পল্টু স্যার বললেন, অবশ্যই। নিজেরা নিজের খাবার রান্না করে খেতেন।
-হিমুর মধ্যদুপুর
৯
“যে মহাপুরুষ হবার সাধনা করছে, তার জন্য নারীসঙ্গ নিষিদ্ধ।”
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর মধ্যদুপুর)
১০
ছুটন্ত ট্রেনের সঙ্গে মনের একটা অংশও ছুটে যায়, সেই অনুভূতি অন্য রকম।
১১
কই মানুষ তো কেবল ভালোবাসার কাঙাল হয়ে থাকে না এই যেমন আমি আছি।
১২
প্রতিটা মানুষই শুধুমাত্র নিজের প্রতি অনুগত। অন্যের প্রতি নয়। নিজের প্রতি আনুগত্য যে সর্বজনে ছড়িয়ে দিতে পারবে, সেইতো মহামানব।
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর মধ্যদুপুর)
১৩
আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে না। যে হারিয়ে যেতে চায় তাকে হারিয়ে যেতে দিতে হয়। ~হিমুর মধ্যদুপুর
১৪
সব মানুষের মধ্যেই একজন মহাপুরুষ বাস করেন। তারা কখনো প্রকাশিত হন। কখনো হন না।
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর মধ্যদুপুর)
১৫
যে হারিয়ে যেতে চায় তাকে হারিয়ে যেতে দিতে হয়।
-হুমায়ূন আহমেদ ( হিমুর মধ্যদুপুর )
১৬
চুরির অভ্যাস নেই, এমন মানুষ তুমি কোথাও খুঁজে পাবেনা। বড় মানুষরা আইডিয়া চুরি করে। বিজ্ঞানীরা একজন আরেকজনের আবিষ্কার চুরি করেন।
১৭
ভালো মেয়ে দের কপালে দুঃখ থাকে ।
১৮
“ঘুম যেমন ভয়াবহ কিছু না, তেমনি মৃত্যুও ভয়াবহ কিছু না। বরং ঘুমের চেয়ে ভালো। ঘুম একসময় ভাঙে, বাস্তবের পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। গরম, ঘাম, পেটে ব্যথা, ক্ষুধা, বাথরুম নামক অসুবিধায় বাস করতে হয়। মৃত্যুতে এই সমস্যা নেই। তবে একটাই সমস্যা— মৃত্যুর পরে বইগুলো সঙ্গে থাকবে না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (হিমুর মধ্যদুপুর)
১৯
সবচে সহজ পণ্য হল মানুষ। মানুষ কেনা কোনো সমস্যাই না। মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সহজে কেনা যায় বুদ্ধিজীবীদের। তাঁরা খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন কখন বিক্রি হবেন।
২০
একটি বিষাক্ত গাছ মিষ্টি ফল দিচ্ছে, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। মানুষের মধ্যেও কি এ রকম আছে? বিষাক্ত মা বাবার অসাধারণ সন্তান।