সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন শিশুদের ছন্দের জাদুকর। তিনি জন্মেছিলেন বাঙ্গালী রেঁনেসার স্বর্ণযুগে এক সাহিত্যনুরাগী পরিবারে। সুকুমার কলকাতা থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি. করার পর মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১-তে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।পিতা উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর শিশুদের মাসিক পত্রিকা “সন্দেশ ” সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার রায় নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পরবর্তীতে তার ছেলে বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় “সন্দেশ ” এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলিতে। তিনি ভারতীয় শিশু সাহিত্যে “ননসেন্স রাইমের” প্রবর্তন করেন। তাঁর প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই “আবোল-তাবোল” বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের সেরা ননসেন্স রাইমের বই “আল্যিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড” এর সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সুকুমার রায় মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
১
আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুণে,
কাঁচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে।
২
“কেউ বলেছে খাব খাব,
কেউ বলেছে খাই
সবাই মিলে গোল তুলেছে –
আমি তো আর নাই।”
৩
“অন্ধকারে চৌরাশিটা নরকের কুণ্ড
তাহাতে ডুবায়ে ধরে পাতকীর মুণ্ড—”
~ পাগলা দাশু, শুকুমার রায়
৪
“ট্যাঁশ গরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে;
যার খুশি দেখে এস হারুদের আফিসে।
রুচি নাই আমিষেতে, রুচি নাই পায়সে
সাবানের সুপ আর মোমবাতি খায় সে।”
৫
হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, “একজনের মাথার ব্যারাম ছিল, সে সব জিনিসের নামকরণ করত। তার জুতোর নাম ছিল অবিমৃষ্যকারিতা, তার ছাতার নাম ছিল প্রত্যুত্পন্নমতিত্ব, তার গাড়ুর নাম ছিল পরমকল্যাণবরেষু- কিন্তু যেই তার বাড়ির নাম দিয়েছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অমনি ভূমিকম্প হয়ে বাড়িটাড়ি সব পড়ে গিয়েছে। হোঃ হোঃ হোঃ হো—।
৬
শিবঠাকুরের আপন দেশে,
আইন কানুন সর্বনেশে।
কেউ যদি যায় পিছলে প’ড়ে,
প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে,
কাজির কাছে হয় বিচার-
একুশ টাকা দণ্ড তার……”
৭
সাগর যেথায় লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে,
আকাশ ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে।
মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে,
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।
৮
“সোনার আলো, রঙিন আলো,
স্বপ্নে আঁকা নবীন আলো-
আয়রে আলো আয়।
আয়রে নেমে আঁধার পরে,
পাষাণ কালো ধৌত করে
আলোর ঝরনায়।”
৯
“কেউ যদি যায় পিছলে প’ড়ে,
প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে,
কাজির কাছে হয় বিচার-
একুশ টাকা দন্ড তার”
― Sukumar Ray, Abol Tabol
১০
মাসি গো মাসি পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম্-
হাতীর মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম্ ।।
১১
হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ,
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল কল শব্দ করি সবে ক্রীড়া করে,
নদী বেঁকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
১২
পড়তে বসে মুখের পরে
কাগজ খানি থুয়ে
রমেশ ভায়া ঘুমোয় পড়ে
আরাম ক’রে শুয়ে।
১৩
অন্ধ মেয়ে দেখছে না তা— নাই-বা যদি দেখে—
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরষ কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আঁধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।