নবনী হুমায়ূন আহমেদের লেখা অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্রেমের উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৯৩ সালের সময় প্রকাশনে প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসে নবনী নামের এক তরুণীর জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনিটি যেকোনো পাঠককে অন্য এক জগতে হারিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম! বইটিতে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে গভীর প্রেমানুভূতি, তেমনি অপরদিকে বেদনার তিক্ততার পাশাপাশি আমাদের সমাজের বাস্তবতাও লেখক তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে। নবনী উপন্যাসের কিছু অসাধারণ লাইন থাকছে এই লেখায়। আশাকরি বাছাই করা অসাধারণ এই লাইনগুলো পাঠকদের মন ছুঁয়ে যাবে।
১
আমরা মানুষের জটিলতা দেখে অভ্যস্ত, সারল্যকে আমরা ভয় করি। কারো ভেতরে ঐ ব্যাপারটি দেখলে থমকে যাই, এবং আমাদের মনের একটি অংশ বলতে থাকে নিশ্চয়ই কোন একটা রহস্য আছে।
২
এই পৃথিবীতে দু’ধরণের মানুষ খুন হয়। প্রবল ঘৃণার মানুষ এবং প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষ।
৩
আদর্শ মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। আদর্শ মানুষ ডিসটিল্ড ওয়াটারের মত – স্বাদহীন। সমাজ পছন্দ করে অনাদর্শ মানুষকে। যারা ডিসটিল্ড ওয়াটার নয়-কোকা কোলা ও পেপসীর মত মিষ্টি কিন্তু ঝাঁঝালো।
৪
ভালোবাসার দাবি আছে। সেই দাবি খুব কঠিন দাবি।
৫
ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভাল।বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না।আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত বা ভালবাসাটা থাকে,শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়।
৬
নবনী তেজি গলায় বলেছিল, ঠিক না কেন? আল্লাহ রাগ করবেন?
তার উত্তরে ইমাম সাহেব বলেছেন, আল্লাহপাক এত সহজে রাগ করেন না। কিন্তু মানুষ রাগ করে। আমরা এমন যে মানুষের রাগটাকেই বেশি ভয় পাই।
৭
সবাই তোমাকে কষ্ট দিবে, কিন্ত তোমাকে এমন একজনকে খুজে নিতে হবে, যার দেয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে।
৮
চাঁদটা মনে হয় আকাশ থেকে নেমে আসছে। কি তীব্র তাঁর আলো? চাঁদের আলোয় কাকটার একটা দীর্ঘ ছায়া পড়েছে।
রক্তে আমার শাড়ি ভিজে যাচ্ছে। এত রক্ত মানুষের শরীরে থাকে?
পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের পায়ের শব্দ। নোমান কি আসছে? সে যদি আসে তাহলে তাকে একটা কথা বলে যেতে চাই। কথাগুলি বলার মত শক্তি আমার থাকবেতো? আমি বলব, এই দেখ আমি মরে যাচ্ছি। যে মানুষ মরে যাচ্ছে তাঁর উপর কোন রাগ কোন ঘেন্না থাকা উচিত না। আমি অনেককাল আগে একটা মানুষকে যে ভাবে ভালবেসেছিলাম তোমাকেও ঠিক সেই ভাবেই ভালবেসেছি। ভালবাসার দাবী আছে। সেই দাবী খুব কঠিন দাবী। ভালবাসার সে দাবী নিয়ে তোমার কাছে হাত জোড় করছি।
৯
হতাশা, গ্লানি, দুঃখ ও বঞ্চনার পৃথিবীকে এত সুন্দর করে বানানোর কি প্রয়োজন ছিল কে জানে?
১০
মানুষের চরিত্রের একটা অংশ উদ্ভিদের মতো। উদ্ভিদ যেমন মাটিতে শিকড় ছেড়ে দেয়, মানুষও তাই করে। কিছুদিন কোথাও থাকো মানে সেখানে শিকড় বসিয়ে দেয়া। মাটি যদি চেনা হয় আর নরম হয় তাহলেতো কথাই নেই।