হেলাল হাফিজ (৭ অক্টোবর ১৯৪৮ — ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪) একজন বাংলাদেশী আধুনিক কবি। প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবে সুপরিচিত হাফিজ বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবিতা একাত্তর। তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পঙ্ক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন।
১
এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়;
এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
২
নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না!
৩
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
৪
কি অসীম শূণ্যতা!
কি অবাস্তব নিস্তব্ধতা!
কি অসম্ভব নিঃসঙ্গতা!
৫
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে
৬
একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।
৭
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
৮
দুঃসময়ে এতটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।
কেউ বলেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালবাসি।
৯
কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট!
১০
কতো দিন তোমাকে দেখি না
তুমি ভালো আছো? সুখে আছো?
১১
অনেক কষ্টের দামে জীবন গিয়েছে জেনে
মূলতই ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল।
১২
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।
১৩
ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে আসো যদি,
লাল শাড়িটা তোমার পড়ে এসো।
১৪
দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।
১৫
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
১৬
এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো।
১৭
একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।
১৮
আমার হয়নি, তাতে কী হয়েছে?
তোমাদের হোক…
১৯
কিছু কথা অকথিত থেকে যায়
বেদনার সব কথা মানুষ বলে না।
২০
ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো
২১
পৃথিবীর তিন ভাগ সমান দু’চোখ যার
তাকে কেন একমাস শ্রাবণ দেখালে!
২২
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে দিলাম না – ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার।
২৩
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
২৪
এখনও তোমার শরীরের ঘ্রাণ
লেগে আছে আমার বুক পকেটে!
২৫
বেহিসেবি মনের খরচে
খরচ হয়ে যাব একদিন।
তোমার নামে বাকি থাকবে
ছোট্ট একটা হিসেবের ঋণ!
২৬
এখন আমি ভুলে গেছি সব কিছু,
যা কিছু সম্ভব ভুলে যাবার।
মরণ হয়েছে আমার! বহু অপঘাতে, বেদনা সয়ে, নিভৃতে! যে ছিল তোমার, মরণ হয়েছে তার!
২৭
ব্যর্থ হয়ে থাকে যদি প্রণয়ের এতো আয়োজন,
আগামী মিছিলে এসো
স্লোগানে স্লোগানে হবে কথোপকথন”।
২৮
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
২৯
ক্যালেন্ডেরের কোন পাতাটা আমার মত খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে পত্র দিও।
৩০
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।