You are currently viewing হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম উক্তি : ১০ টি উক্তি

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম উক্তি : ১০ টি উক্তি

নন্দিত বাঙালি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে হিমু অন্যতম। হিমু সিরিজের প্রথম বই হলো ময়ূরাক্ষী (১৯৯০) হিমু সিরিজের বইগুলোর মধ্যে হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম ৬ষ্ঠ। হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম বইটি ১৯৯৬ সালে দিব্যপ্রকাশ থেকে বইটি বের হয়।

উপন্যাসের শুরুতে মারিয়া নামের এক মেয়ের সাথে হিমুর দেখা হয়। মারিয়া কয়েক বছর আগে হিমুকে সাংকেতিক ভাষায় একটা চিঠি লিখেছিল। হিমু অনেক চেষ্টা করে সেই চিঠির অর্থোদ্ধার করতে না পারলেও তার শিষ্য ফুফাতো ভাই বাদল নিমেষেই অর্থোদ্ধার করে। পরে অবশ্য স্বভাবতই পুরো চিঠির অর্থ কি সেটা কখনো জানার মোটেও আগ্রহ হয়নি হিমুর।

মারিয়ার বাবা আসাদুল্লাহ সাহেবের সাথে হিমুর পরিচয় হয় ঢাকার নীলক্ষেতে পুরাতন বইয়ের দোকানে। শেষের দিকে আসাদুল্লাহ সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তিনি ‘নীলপদ্ম’ হাইপোথিসিস দাঁড় করান। এই হাইপোথিসিস অনুযায়ী- প্রতিটি ছেলে-মেয়ে ৫টি করে নীলপদ্ম নিয়ে জন্মায়। কেউ চাইলে তার ভালবাসার মানুষকে একটি একটি করে নীলপদ্ম দান করতে পারে।। তবে কেউ ৫টি নীলপদ্ম কাউকে একেবারে দিয়ে ফেললে- সে ঐ ছেলে/মেয়ে বাদে আর কাউকে কখনো ভালবাসতে পারে না।

আমার সঙ্গে কি আছে জানিস? পদ্ম। নীলপদ্ম। পাচটা নীলপদ্ম নিয়ে ঘুরছি। কি অপূর্ব পদ্ম। কাউকে দিতে পারছিনা। দেয়া সম্বব নয়। হিমুরা কাউকে নীলপদ্ম দিতে পারে না।

বাংলাদেশের আদর্শ নাগরিক কী করবে? ভারতীয় কাপড় পরবে। ভারতীয় বই পড়বে, ভারতীয় ছবি দেখবে, ভারতীয় গান শুনবে। ছেলেমেয়েদের পড়াতে পাঠাবে ভারতীয় স্কুল-কলেজে। চিকিৎসার জন্য যাবে বোম্বাই, ভ্যালোর- এবং ভারতীয় গরু খেতে খেতে চোখমুখ কুঁচকে বলবে- শালার ইন্ডিয়া! দেশটাকে শেষ করে দিল! দেশটাকে ভারতের খপ্পর থেকে বাঁচাতে হবে।

মানুষ ভান করিতে জানে, পশু জানে না – এই একটি বিষয় ছাড়া মানুষের সঙ্গে পশুর কোনো তফাত নেই।

মানুষ তার জীবনে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি বার শুনে তা হলো নিজের নাম আর পৃথিবীর দ্বিতীয় মধুরতম শব্দ ‘ভালোবাসি’।

মানুষ সহজে প্রতারিত হয় এরকম কথাগুলির একটি হচ্ছে – আপনি বড়ই অভিমানী, নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন না, লুকিয়ে রাখেন।

হিমু ভাই!’
‘বল’
‘যাবার আগে আপনি কি বলে যাবেন আপনি কে?’
আমি বললাম, ‘মারিয়া, আমি কেউ না. I am nobody.’
আমি আমার এক জীবনে অনেককে এই কথা বলেছি – কখনো আমার গলা ধরে যায়নি, বা চোখ ভিজে অঠেনি। দুটা ব্যাপারী এই প্রথম ঘটল।

কয়েক মুহুর্তের জন্যে আমার ভেতর এক ধরনের বেভ্রম তৈরী হল. মনে হল আমার আর হাটার প্রয়োজন নেই. মহাপুরুষ না, সাধারণ মানুষ হয়ে মমতাময়ী এই তরুনিতির পাশে এসে বসি. যে নীলপদ্ম হাতে নিয়ে জীবন শুরু করেছিলাম, সেই প্দ্ম্গুলি তার হাতে তুলে দেই. তারপরেই মনে হলো – এ আমি কি করতে যাচ্ছি! আমি হিমু – হিমালয়।
― হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম, হুমায়ূন আহমেদ

তুমি আমাকে যে চিটি লিখেছিলে আমি তার জবাব লিখে এনেছি। সাংকেতিক ভাষায় লিখে এনেছি।’
মারিয়া হাত বাড়াল। তার চোখে চাওয়া কৌতুক ঝকমক করছে। মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে হে খিলখিল করে হেসে ফেলবে. যেন সে অনেক কষ্টে হাসি থামাচ্ছে।
‘সাংকেতিক চিঠিটাই কি লেখা পড়তে পারছ?’
‘পারছি। এখানে লেখা I hate you.’
‘I Love you – ও তো হতে পারে।’
‘সংকেতের ব্যাখ্যা সবাই তার নিজের মত করে করে, আমিও তাই করলাম। আপনার আটটা তারার অনেক মানে করা যাই, যেমন I want you.
I miss you.
I lost you.
আমি আমার পছন্দ মত একটা বেছে নিলাম।

সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি প্রতিটি ছেলেমেয়েকে পাঁচটি অদৃশ্য নীলপদ্ম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। সে যদি কাউকে ভালোবাসে তবে তার নীলপদ্মগুলো তার ভালোবাসার মানুষকে দিয়ে দেয় এবং এরপর সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারে না।

১০

সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো, আসাদুল্লাহ সাহেবের নীলপদ্ম থিউরি ঠিক আছে. এই তরুণী তার সমস্ত নীলপদ্ম হিমু নামের এক ছেলের হাতে তুলে দিয়ে তীব্র কষ্ট ও যন্ত্রণার ভেতর বাস করছে। এই যন্ত্রণা, এই কষ্ট থেকে তার মুক্তি নেই।

Leave a Reply