You are currently viewing সৈয়দ শামসুল হক উক্তি : ২৫ টি বিখ্যাত উক্তি

সৈয়দ শামসুল হক উক্তি : ২৫ টি বিখ্যাত উক্তি

সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ – ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি সাহিত্যিক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

বাবা বলেছিলেন, ওপরে উঠতে যেমন মইয়ের দরকার, তেমমি জ্ঞানের ধাপে উঠবার জন্য বইয়ের দরকার। তাই মই মই, আর বই বই।

অনেক দিন বিদেশ থাকলে দেশ সম্পর্কে ধারণাটি গরিব থেকে আরো গরিব হয়ে পড়ে। কত দিন বাইরে আছেন কেউ, সেটা ধরে ফেলবার গোপন এক মাপকাঠি আছে আমার। যিনি দেশ নিয়ে যত বেশি মন্দ বলেছেন, তিনি তত অধিক দিন দেশের বাইরে আছেন। মহাশয় তাঁদের কথা শুনেই আমি তুখোড় গোয়েন্দার মত বলে দিতে পারি, বিদেশবাসী ওই বক্ত কত বড় দেশে ও কেমন শহরে বাস করেন। নিন্দাবাদের স্বর যার যত উঁচু, তিনি তত বড় জায়গায় বাস করছেন। আমেরিকার নিউইয়র্কের যিনি তার গলা দেশ নিন্দায় বিলেতের ব্রাইটনের তিনি-র চেয়ে বেশি উচ্চ এবং জোড়ালো।

তুমি নিলীন হয়ে শুয়ে আছো এখন আমার ছবির ভেতরে। এই ঘুম থেকে তোমাকে আমি জাগাবো না।

রান্নাবাড়িতেও আমরা সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে ফেলেছি।মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক ভদ্রলোককেও শুনেছি শুক্তো পাতে নিয়ে বলতে, হিন্দুদের এই পদটি খেতে ভারি ভালো!

গানের গলা দেননি বিধাতা, তাই বলে গান গাই না এমন তো নয়। মনে মনে গাই। ক’জনই বা ভাগ্যবান, গলায় আছে সুর? হাতে গোনা সামান্যই। যত সজ্জনই হই না কেন, সেই অসাধারণ সামান্যদের আমরা বড় হিংসা করি। বাইরে না পারি, নিজের ভেতরেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দেই। গোসলখানার চার দেয়াল তার সাক্ষী।

বাংলাদেশ সম্পর্কে যেটা প্রত্যাশা, কুড়িগ্রাম সম্পর্কেও সে রকম। কুড়িগ্রাম সম্পর্কে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই।

আমি একটুখানি দাঁড়াব এবং দাঁড়িয়ে চলে যাব;
শুধু একটু থেমেই আমি আবার এগিয়ে যাব;
না, আমি থেকে যেতে আসিনি;
এ আমার গন্তব্য নয়;
আমি এই একটুখানি দাঁড়িয়েই
এখান থেকে চলে যাব।

সত্যকে সবসময় গ্রহণ করো”, “ভুল থেকে শিক্ষা নাও”, “স্বপ্ন দেখতে ভয় পেও না”, ‘নিজেকে ভালোবাসো’, ‘অন্যকে সম্মান করো”।

নিশ্চয় আমি মাটি থেকে মানুষকে উৎপন্ন করেছি। মাটি ভিন্ন মানুষের মৌলিক কোনো অভিজ্ঞতা নয়। এবং প্রত্যাবর্তনের সুদূরতম সম্ভাবনা নেই জেনেও মানুষ মাটির সঙ্গেই তার শ্রেষ্ঠতম সংলাপগুলো উচ্চারণ করে যায়। বস্তৃত উচ্চারণও মাটির তীব্র আকর্ষণ থেকেই কাতর কিংবা সুখের, যোগ অথবা বিয়োগ ধ্বনির–নামান্তর। জননীর কাছে পুত্ৰশোকও কালক্রমে সহনীয় হয়ে যায়, ইউলেসিস অমরত্ব লাভের প্ৰস্তাব হেলায় উপেক্ষা করে ফিরে আসে অনুর্বর ইথাকার।
মৃতদেহ আমরা সেই মাটিতে ফিরিয়ে দেব, নতজানু হয়ে মুঠো মুঠো মাটিতে ঢেকে দেব তাদের দেহ, আমরা কেশ মার্জনা করব না, আমরা মুখ সংস্কার করব না, জীবিত এই দেহে মাটির প্রলেপ ধারণ করে আমরা বিপন্ন বাস্তবের ভেতর দিয়ে জনপদের দিকে ফিরে যাব।

১০

আবার ভালোবাসি, আবার সেই তাকে, ফিরিয়ে দিয়েছে যে একবার

১১

মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।

১২

বাক্যটি আজ পর্যন্ত ভুলতে পারে নি বাবর। যে লিখেছে জগৎ সে চিনে। যে লিখেছে সে নিজে প্রতারিত। পৃথিবী সম্পর্কে তার একটিমাত্র মন্তব্য বাথরুমের দেয়ালে সে উৎকীর্ণ করে রেখেছে- খেলারাম খেলে যা।
কতদিন বাবর কানে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে কথাটা।
~ সৈয়দ শামসুল হক , খেলারাম খেলে যা

১৩

স্মৃতির চেয়ে সম্পদ আর কী আছে? জনপদে এখন কণ্টিকারী ও গুল্মলতার বিস্তার, শস্য অকালমৃত, ফল কীটদষ্ট, ইদারা জলশূন্য। সড়কগুলো শ্বাপদেরা ব্যবহার করে এবং মানুষ অরণ্যে লুকোয়। দিন এখন ভীত করে, রাত আশ্বস্ত করে। বাতাস এখনো গন্ধবাহ, তবে কুসুমের নয়, মৃত মাংসের। তবু, স্মৃতি বিনষ্ট অথবা নিঃশেষে ধৌত নয়। রমণীর গর্ভ বন্ধ্যা নয়। পুরুষের বীর্য ব্যৰ্থ নয়। গ্রন্থগুলো দগ্ধ নয়। প্ৰতিভা অন্তর্হিত নয়। মানুষ সেই লুষ্ঠিত জনপদেই স্মৃতি বীজের বাগান আবার করে।

১৪

অবলম্বনহীন দ্বিতলের মতো, অসংলগ্ন মেঘ ও চিত্রকণার মতো, অসম আকার ও গতিবেগের মতো এই বর্তমান অন্তঃস্থলে স্থির কিন্তু ভবিষ্যতের দিকে স্থাপিত। মানুষ তার নিগঢ় শক্তির সংবাদ রাখে না। যে সারল্য সে লালন করে তা কাচের মতো ভংগুর এবং একমাত্র হীরক, কঠিনতম পদার্থই তাকে দ্বিখণ্ডিত করতে পারে। তখন সারল্যের অংশগুলো বিস্মৃতির ভেতরে দ্রবীভূত হয়ে যায়।

১৫

কিছু নেই বিস্ময়ের, গ্রন্থ যদি কাটে শুধু কীটে

১৬

মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।”।

১৭

ভরসা দিতে পারি, তুমি আমাকে পছন্দ করবে । কেন করবে না? আমার বীজ ভালো। আমার রক্ত শুদ্ধ। রমণী স্বয়ং উদ্যোগী হলে অবশ্যই আমাতে তৃপ্ত হতে পারবে। আমি কি তোমাকে আকৃষ্ট করি? আমি তোমোয় সন্তান দিতে পারব। উত্তম বীজ উত্তম ফসল। তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে, খোদার ওপর ঈমান রাখবে, আন্তরিক পাকিস্তানি হবে, চাও না সেই সন্তান? আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেব, তোমাকে দেব, তোমার বোনকে দেব, তোমার মাকে দেব, যারা হিন্দু নয়, বিশ্বাসঘাতক নয়, অবাধ্য নয়, আন্দোলন করে না, শ্লোগান দেয় না, কমিউনিস্ট হয় না। জাতির এই খেদমত আমরা করতে এসেছি। তোমাদের রক্ত শুদ্ধ করে দিয়ে যাব, তোমাদের গর্ভে খাঁটি পাকিস্তানি রেখে যাব, ইসলামের নিশান উড়িয়ে যাব। তোমরা কৃতজ্ঞ থাকবে, তোমরা আমাদের পথের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তোমরা আমাদের সুললিত গান শোনাবে।

১৮

বস্তুতপক্ষে আঘাত বিনা প্রতিরোধ একটি অসম্ভব প্ৰস্তাব। বীভৎস বাস্তবের বিপরীতে গীতময় স্বপ্ন অথবা বধির দুঃস্বপ্নের বিপরীতে রৌদ্র ঝলসিত বাস্তব; মানুষকে এই বিপরীত ধারণ করতেই হয় এবং তার ভূমিকা, অন্তত এতে আর সন্দেহ থাকার কথা নয়, এক ব্যায়াম প্রদর্শকের, যে আয়নায় আপনারই প্ৰতিবিম্বের সমুখে একটি ইস্পাত খণ্ডকে বাকিয়ে তার দুই বিপরীত প্ৰান্ত নিকটতর করে আনবার পর অবসর কিংবা করতালি পায় না, অচিরে দ্বিতীয় ইস্পাত খণ্ড তার হাতে পৌঁছে যায়।

১৯

কেউ কারো মতো হয় না। আমরা নিজের মতো
কাউকে অনবরত খুঁজি বলেই
অপ্রমেয় দুঃখের সমুদ্র
চতুর্দিকে ফোঁপায়
আর আমরা সারাদিন সারারাত নারকোল পাতায়
কান্নার বাতাস বাজিয়ে দ্বীপের মতো জেগে থাকি।

২০

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

২১

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।

২২

আমি তো দেখিনি চাঁদ কুয়াশায় অবিশ্বাস্য ফানুসের মতো,
ছিঁড়েও আনিনি কোনো লোকশ্রুত দর্শনের ফল,
অথবা যাইনি কারো ঘুমের সংসারে
অনন্তর ঘুম যাবো বলে—
অধিকন্তু পিতৃপুরুষের
অলৌকিক সমর্পণে রাখিনি বিশ্বাস,
আমি কি বিবিক্ত শব জীবিতের মন্দ্র কোলাহলে?

২৩

কবিতার জন্যে সত্যিই যদি কারো টান থাকে তো, কবিতা সে কেবল পড়তেই চাইবে না, কবিতার ভেতরে সে নিঃশ্বাস নিতে চাইবে। কবিতা যাকে স্পর্শ করে সে আসলে জীবনেরই স্পর্শ পায়। কবিতায় যে বাঁচে, জীবনেও সে বাঁচে। দুঃখময় কবিতাও আমাদের গভীর অর্থে সুখী করে।

২৪

একদা দালান ভাঙে,
দেহ ভাঙে, রাষ্ট্র ভাঙে,
বিষদাঁত— তাও ভেঙে যায়
—মানুষ, যে মানুষ এতটা আপনার কাছে বাসা নিয়েছিল সেই মানুষের কাছে আপনার মুখের ছবিটি একদিন নিঃশব্দে মিলায়।”

২৫

একদা দালান ভাঙে, দেহ ভাঙে, রাষ্ট্র ভাঙে,
বিষদাঁত— তাও ভেঙে যায়—
মানুষ, যে মানুষ এতটা আপনার কাছে বাসা নিয়েছিল
সেই মানুষের কাছে আপনার মুখের ছবিটি একদিন নিঃশব্দে মিলায়।

২৬

তবুও ভালোবেসে ভীষণ সুখ আছে, পতনে আছে তবু সিদ্ধি,
তবুও ক্ষত নেই পায়ের গোড়ালিতে তোমার কাঁটাবনে হাঁটলেও ;
তোমারই কীর্তি এ, তুমিই দিতে পারো দু’হাতে বিপরীত অর্জন—
বিষাদ ও পূর্ণিমা, তুষার ও পলিমাটি, নশ্বরতা আর নির্বাণ।

২৭

মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।
~ সৈয়দ শামসুল হক , পরানের গহীন ভিতর