আহমেদ সালমান রুশদি (জন্ম: ১৯ জুন, ১৯৪৭) একজন ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তার লেখার অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে ভারতীয় উপমহাদেশ।
সালমান রুশদির ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত চতুর্থ উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বিশ্বব্যাপী একটি বড় আকারের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। বইটি প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিমরা প্রতিবাদ জানায় যা অনেক সময় সহিংস রূপ ধারণ করে। তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়। ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এই বই রচনার জন্য ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন।
সালমান রুশদিকে ২০০৭ সালের জুন মাসে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নাইট ব্যাচেলর উপাধিতে ভূষিত করেন। ২০০৮ সালে দ্য টাইমস ১৯৪৫ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যের সেরা ৫০ জন সাহিত্যিকের তালিকায় তাকে ১৩তম স্থান প্রদান করে।
১
মানুষের জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য যুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।
২
আমরা আগে একে অপরের ভালো দিক দেখে প্রেমে পড়ি, কিন্তু ভালোবাসা টেকে তখনই, যখন আমরা একে অপরের খারাপ দিকটাকেও ভালোবেসে ফেলি।
৩
উষ্ণতায় সবচেয়ে দ্রুত অঙ্কুরিত হয় আমাদের কল্পনায়, অযৌক্তিকতায় ও কামনায়।
৪
যেকোনো স্বৈরতান্ত্রিক সমাজে, ক্ষমতার মালিকই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, আর আপনি যদি তার নিয়মের বাইরে যেতে চান, তাহলে সে আপনার পিছনে আসবে। এটি সোভিয়েত শাসন, চীন বা ইরান সকলের ক্ষেত্রেই সত্য, আর আমাদের সময়ে ইসলামেও এরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে। মূল কথা হলো, যখন স্বৈরতান্ত্রিকতার পেছনে কোনো অতিপ্রাকৃতিক বা ধর্মীয় সমর্থন থাকে, তখন তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।
৫
মুক্ত অভিব্যক্তি কী? অভদ্রতা ছাড়াই কোন অভিব্যক্তির মুক্তি কেবল অস্তিত্ব পায়।
বই: “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” (The Satanic Verses)
৬
আমি কোনো ভবিষ্যদ্বক্তা নই, কিন্তু আমি সবসময় মনে করতাম স্বৈরতান্ত্রিক শাসন শেষ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি মনে করি ১৯৮৯ সালে, বার্লিন প্রাচীর ভাঙার দুই মাস আগেও যদি কেউ বলত যে এটা ঘটবে, কেউ তখন বিশ্বাস তা করত না। সেই সময় সিস্টেমটি শক্তিশালী এবং অটুট মনে হচ্ছিল। হঠাৎ এক রাতের মধ্যে তা ধূলোর মতো উড়ে গেল।
৭
হিংস্র স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা নেগেটিভ পাবলিসিটি পছন্দ করে না।
৮
কোনো ধর্মের সঙ্গেই স্বভাবগতভাবে কোনো হিংসার সম্পর্ক নেই। ক্রুসেডগুলো দেখায় না যে খ্রিস্টধর্ম হিংস্র ছিল। ইনকুইজিশন দেখায় না যে খ্রিস্টধর্ম মানুষকে কিভাবে নির্যাতন করতো। তবে সত্য হলো, খ্রিস্টধর্মের নামে মানুষকে সত্যিই নির্যাতন করা হয়েছে।
৯
ইরানে মৌলবাদের অনেকাংশে তেল জুগিয়েছিল শাহর শাসন, যা পশ্চিমাদের তখন সমর্থন পেয়েছিল।
১০
আমরা দুনিয়ার এপার-ওপার ঘুরে আসা মানুষ, একরকম অনূদিত মানুষ। অনেকেই ভাবে, অনুবাদে সবসময় কিছু না কিছু হারিয়ে যায়; কিন্তু আমি মন থেকে বিশ্বাস করি অনুবাদে নতুন কিছু পাওয়া যায়।
১১
সম্পূর্ণ নিরাপত্তা কোনো জিনিসই নেই, শুধু অনিরাপত্তার বিভিন্ন রকম মাত্রা আছে।
১২
তখনও বোকাদের প্রয়োজন ছিল এবং এখনও আছে।
১৩
মানুষ আসলে কোনো জিনিসকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না। আমরা দেবতা নই, ভাঙাচোরা মানুষ, তাই আমাদের দৃষ্টি সবসময় খণ্ডিত। আমরা অপূর্ণ সত্তা। জীবনের মানে আমরা গড়ে তুলি টুকরো টুকরো জিনিস থেকে—শৈশবের কষ্ট, বিশ্বাস, খবরের কাগজ, সিনেমা, ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা, মানুষকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা। হয়তো এ কারণেই আমাদের এই ভঙ্গুর বোঝাপড়াকে আমরা এত জোর দিয়ে আঁকড়ে ধরি, এমনকি মৃত্যুর মুখেও।
১৪
আপনি ছেলেটিকে মুম্বাই থেকে বাইরে নিয়ে আসতে পারবেন, কিন্তু ছেলেটির মধ্যে থেকে মুম্বাইকে মুছে ফেলতে পারবেন না। আপনি তা জানেন।
১৫
একটি কল্পিত নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, বাস্তব নারীর চেয়েও ভালো হতে পারে।
১৬
বৃহত্তর মানসিকতা সহনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত; মুক্তমনা মন মানে শান্তির কাছাকাছি থাকা।
১৭
একটি বই হলো বিশ্বের একটি রূপ। যদি আপনি তা পছন্দ না করেন, তবে উপেক্ষা করুন; অথবা আপনার নিজের একটি রূপ তৈরি করুন।
১৮
আশাবাদ এক ধরনের রোগ।
১৯
এই পৃথিবীতে শান্ত কোন জায়গা নেই, যেখান ইতিহাস, হট্টগোল এবং বিশৃঙ্খলা থেকে সহজে পালানো যায় না।
২০
আমি কখনো সারা পৃথিবীতে কাশ্মীরের মতো সুন্দর জায়গা দেখিনি। এর কারণ হতে পারে যে এই উপত্যকা খুব ছোট আর পাহাড়গুলো খুব বড়, ফলে আপনি এই ছোট্ট গ্রাম্য এলাকা হিমালয়ের মাঝে ঘেরা দেখেন, এবং তা সত্যিই অসাধারণ। আর সত্যিই, মানুষরাও খুব সুন্দর।