শেষের কবিতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ বয়সের দিকে লেখা সর্বশেষ উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯২৭ সালে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র) থেকে ১৯২৮ সাল (১৩৩৪ বঙ্গাব্দের চৈত্র) পর্যন্ত প্রবাসীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগের শেষের কবিতা উপন্যাসের বাছাই করা কিছু অসাধারণ লাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছি।
১#
যা আমার ভালো লাগে ভাই আরেক জনের ভালো লাগে না, এই নিয়েই পৃথিবীতে যত রক্তপাত।
২#
যে ঘরওলা ঘরে বাস করে না,সে যত বড় ক্ষমতাশালীই হোক, তার শাসনের চেয়ে-যে দরিদ্র বা সাড়ে ঘরে থাকে, তার যেমন তেমন ব্যবস্থাও ভালো।
৩#
জীবনে ধারা চলতে চলতে তার যে সব চিহ্ন বিছিয়ে যায় সেগুলোর তুচ্ছতাই সবচেয়ে সকরুণ।
৪#
শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে শিকলওয়ালা বাঁধে বটে, কিন্তু ভোলায় না; আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে, ভোলায়ও।
৫#
যে পক্ষের দখলে শিকল আছে, সে শিকল -দিয়েই পাখিকে বাঁধে অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে। শিকলওয়ালা বাঁধে বটে, কিন্তু ভোলায় না; আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলায়ও। মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি শয়তানী তার যোগান দেয়।
৬#
মেয়েদের ভালো-লাগা তার আদরের জিনিসকে আপন- অন্দর মহলে একলা নিজেরই করে রাখে, ভিড়ের লোকের কোন খবরই রাখে না। সে যত দাম দিতে পারে সব দিয়ে ফেলে, অন্য পাঁচজনের সঙ্গে মিলিয়ে বাজার যাচাই করতে তার মন নেই।
৭#
পূজা জিনিসটাকে একঘেয়ে করে তুলবার মতো অপবিত্র, অধার্মিকতা আর কিছু হতে পারে না।
৮#
নাম যার বড় তার সংসারটা ঘরে অল্প, বাইরেই বেশি। ঘরের মন রক্ষার বাইরের মান রক্ষাতেই তার যত সময় যায়। মানুষটার অতি অল্প অংশই পরে স্ত্রীর ভাগে, পুরো বিবাহের পক্ষে সেটুকুও যথেষ্ট নয়। নামজাদা মানুষের বিবাহ স্বল্পবিবাহ, বহুবিবাহের মতোই গর্হিত।
৯#
যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেল তারও আসল মূল্য যে বোঝে সেই জানব জহুরি।
১০#
বিয়ের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে স্ত্রী-পুরুষ যে বড়ো বেশি কাছাকাছি এসে পড়ে, মাঝে ফাঁক থাকে না। তখন একেবারে গোটা মানুষকে নিয়েই কারবার করতে হয় নিত্যান্ত নিকটে থেকে। কোন একটা অংশ ঢাকা রাখবার জো থাকেনা।
১১#
যে ছুটি নিয়মিত, তাকে ভোগ করা আর বাধা পশুকে শিকার করা একই কথা। ওতে ছুটির রস ফিকে হয়ে যায়।
১২#
পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য বড় ভয়ংকর।
১৩#
যারা মূঢ় তারা কেবল যে নিজেদেরকে নিজেরাই ঠকায় তা নয়, পৃথিবী শুদ্ধ সমস্ত কিছুই তাদের ঠকাতে থাকে।
১৪#
পড়ার সময় যারা ছুটি নিতে জানে না তারা পড়ে, পড়া হজম করে না।
১৫#
চালাতেই নতুন রাখে, পায়ে পায়ে নতুন, পুরনো হবার সময় পাওয়া যায় না। বসে থাকাটাই বুড়োমি।
১৬#
যে নদীর জল মরেছে তার মন্থর স্রোতের ক্লান্তিতে জঞ্জাল জমে, যে অল্প সে নিজেকে বইতে গিয়ে ক্লিষ্ট হয়।
১৭#
দূরত্ব যদি সত্যিই ভালবাসার গভীরতা বাড়িয়ে দেয়, তবে আমি দূরেই থাকতে চাই। অনেক অনেক দূরে।
১৮#
রক্ষার প্রতি সৃষ্টি নিষ্ঠুর, সৃষ্টির প্রতি রক্ষা বিঘ্ন…এক জায়গায় এরা পরস্পরকে আঘাত করবেই। যেখানে খুব মিল সেখানেই বিরুদ্ধতা… আমাদের সকলের চেয়ে বড় যে পাওনা সে মিলন নয়, সে মুক্তি।
১৯#
রামচন্দ্র সীতার সত্য যাচাই করতে চেয়ে ছিলেন বাইরের আগুনে; তাতেই সীতাকে হারালেন। কবিতার সত্য যাচাই হয় অগ্নি পরীক্ষায়, সে আগুন অন্তরের; যার মনে নেই, সেই আগুন সে যাচাই করবে কি দিয়ে? তাকে পাঁচজনের মুখের কথা মেনে নিতে হয়, অনেক সময়ে যেটা দুর্মুখের কথা।
২০#
পাঁচ বছর পূর্বেকার ভালোলাগা, পাঁচ বছর পরেও যদি একই জায়গায় খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে; বেচারা জানতে পারেনি যে,সে মরে গেছে।
২১#
বিবাহের হাজারখানা মানে। মানুষের সঙ্গে মিশে তার মানে হয়, মানুষকে বাদ দিয়ে তার মানে বের করতে গেলেই ধাঁ ধাঁ লাগে।
২২#
দূরত্ব যদি সত্যিই ভালোবাসার গভীরতা বাড়িয়ে দেয়, তবে আমি দূরেই থাকতে চাই।
অনেক অনেক দূরে…….
আপন জনেরা যদি আমাকে আপন ভাবতে কুণ্ঠাবোধ করে।
তবে গোটা পৃথিবীটাকে আপন বানিয়ে ফেলবো।
কেউ না, কেউতো, কখনো না, কখনো স্মরণ করবে…….!!
২৩#
সহজকে সহজ রাখতে হলে শক্ত হতে হয়।
২৪#
ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেখানেই- –যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি, নিজের ইচ্ছাকে অন্যের ইচ্ছে করার জন্য যেখানে জুলুম, যেখানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলে অন্যকে সৃষ্টি করবো।।
২৫#
মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ আছে।
২৬#
পুরুষ তার সমস্ত শক্তিকে সার্থক করে সৃষ্টি করতে, সে সৃষ্টি আপনাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্যই আপনাকে পদে পদে ভোলে। মেয়ে তার সমস্ত শক্তিকে খাটায় রক্ষা করতে, পুরনোকে রক্ষা করবার জন্য নতুন সৃষ্টিকে সে বাধা দেয়।।
২৭#
চিত্রকলা সে ফলাতে পারে না, কিন্তু দুই হাতে সেটাকে চটকাতে পারে।
২৮#
বিধাতার রাজ্যে ভালো জিসিস অল্প বলেই তা ভালো, সইলে নিজেরই ভিড়ের ঠেলায় হয়ে যেতো মাঝারি।
২৯#
পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।
৩০#
মানুষের কোনো কথাটাই সোজা নয় আমরা ডিকশনারিতে যে কথার এক মানে বেঁধে দেই মানব জীবনের মধ্যে মানেটা সাতখানা হয়ে যায়; সমুদ্রের কাছে এসে গঙ্গার মতো।
৩১#
যেদিন তাজমহল তৈরি শেষ হলো সেদিন মমতাজের মৃত্যুর জন্য শাহজাহান খুশি হয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নকে অমর করবার জন্য এই মৃত্যুর দরকার ছিল। এই মৃত্যুই মমতাজের সবচেয়ে বড়ো প্রেমের দান। তাজমহলে শাহজাহানের শোক প্রকাশ পায়নি, তার আনন্দ রূপ ধরেছে।।
৩২#
তোয়ারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান- গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়। হে বন্ধু! বিদায়।

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.