লীলা মজুমদার (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ – ৫ এপ্রিল ২০০৭) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখিকা। তিনি কলকাতার রায় পরিবারের প্রমদারঞ্জন রায় ও সুরমাদেবীর সন্তান (বিবাহপূর্ব নাম লীলা রায়)। তার জন্ম রায় পরিবারের গড়পার রোডের বাড়িতে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (যাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়) ছিলেন প্রমদারঞ্জনের দাদা এবং লীলার জ্যাঠামশাই। সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুরতোবোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসিমা।
১#
বুকের মধ্যে খানিকটা জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়, ফোঁপরা হয়ে যায়, দুনিয়াতে হরেক রকমের ভালো জিনিস আছে, কিন্তু কিচ্ছু দিয়েই আর সে ফাঁকা ভরানো যায় না, বোগিদাদা; ঘর ছেড়ে, ঘরের মানুষ ছেড়ে তাই বেরিয়ে পরতে হয়।
২#
জন্তুজানোয়ার কে ভালবাসা চারটি খানি কথা নয় দিদি। একটা কুকুর কী একটা বেড়াল ঘরে বেঁধে রেখে তাকে আদর করলেই কি আর ভালবাসা হলো?
৩#
নারী-শিক্ষা যখন ভালো মতন চালু হয়নি, মেয়েরা ঘর ছেড়ে তখনও বাইরে আসে না— সেই যুগেও বাংলা সাহিত্যে যতজন উল্লেখযোগ্য লেখিকা ছিলেন, তার তুলনায় এখন বহু রকম সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও লেখিকার সংখ্যা এত কম কেন? …অন্য গল্প-কবিতার কথা বাদ দিলেও, শিশু-সাহিত্যে তো মেয়েরা অনেক কিছু দিতে পারতেন। বস্তুত, শিশুদের সম্পর্কে মেয়েদের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হাজারগুণ বেশি। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের গল্প বলেও ভোলাতে হয় তাঁদের। সেই হিসেবে, শিশু-সাহিত্যটাই মেয়েদের একচেটিয়া হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনা তা নয়। পৃথিবীর নাম-করা লেখিকাদের মধ্যে অনেকেই বাচ্চাদের জন্য এক লাইনও লেখেননি! এও এক অদ্ভুত ব্যাপার।
৪#
উত্তর মেরুতেও ঘুরে এসেছি। ভয় কোথায় নেই বলতে পারো?
৫#
যেদিন কাদা-চিংড়ির ছ্যাঁচড়া মুখে রুচবে না, আর বাংলা ভাষা কানে মিষ্টি ঠেকবে না, সেদিন কিন্তু ঘোর দুর্দিন। উন্নতি হইতে সাবধান। শেষটা না পা পিছলে আলুর দম হয়।
৬#
“ভয় পাওয়া মানে সব সময় পিছিয়ে পড়া নয়, কখনো কখনো সেটা সাহস সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ।
৭#
সুন্দর জিনিস চেনো না? সাদা চোখে কালো কুচ্ছিত, নকল আলোয় চমৎকার।
৮#
দিদিমা বলেছেন খারাপ লোকেরা নেশা করে।
তা বলতে পারো তোমাদের ইচ্ছা হলে, তবে কি জানো, খারাপ লোকেরা তো ভাতও খায়।
৯#
আমাদের বাড়িতেও যারা কাজকাম করত, তারা মাঝে মাঝে সরল মনে বেশ মজার কথা বলত। একবার দেখা গেল খৃশ্চান বেয়ারা খৃশ্চান রাঁধুনের হাতে খেতে রাজি নয়। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল, ‘সে কি করে খাব ? ওর যে ছােট জাত।’
আমার বাবা অবাক হলেন, “তােমরা না খৃশ্চান? বেয়ারা বলল, ‘খৃশ্চান হয়েছি বলেই কি বাপ-পিতেমাে’র ধম্ম ছাড়তে হবে?
১০#
যে আনন্দে লেখা, সেই আনন্দ যেন পাঠকের মনেও পৌঁছে যায়—তবেই লেখার সার্থকতা।
১১#
দুঃখ কি আর চিরকালের মত ঘোচে, বোগিদাদা? সমুদ্রের ঢেউয়ের মত বারবার ফিরে আসে।
১২#
রূপকথার জগৎ নিছক কল্পনা নয়, ওতে জীবনের গভীর সত্য লুকিয়ে থাকে।
১৩#
ভয় পাওয়া মানে সব সময় পিছিয়ে পড়া নয়, কখনো কখনো সেটা সাহস সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ।
১৪#
এই বলি শোন। চাটাই দিয়ে জানালা বন্ধ করে ঝাঁপিঝুঁপি হয়ে শুয়ে থাকি। শরীরটা গরমের মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে কিন্তু মনটা ওই বাইরে বাইরে শীতের মধ্যে পাতা খসার শুকনো গন্ধের মধ্যে, ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে হু হু করে বেড়ায়।
“কেন?”
আরে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলে শরীরের চোখ তো বন্ধ হবেই, আর শরীরের চোখ বন্ধ হলে মনের চোখ খুলবে না?
১৫#
দিদিমা বলেছেন খারাপ লোকেরা নেশা করে।
তা বলতে পারো তোমাদের ইচ্ছা হলে, তবে কি জানো, খারাপ লোকেরা তো ভাতও খায়।
মেঘ কেটে যায়, রোদ্দুর ওঠে; আঁধার রাতে জ্যোৎস্না ফোটে। সুখ রহে না পথে পড়ে, সুখ নিতে হয় হাতে গড়ে।
১৭#
বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায় কিন্তু মন থেকে বন তুলে ফেলা সম্ভব নয়। – লীলা মজুমদার।

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.