রুমালী হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম। উপন্যাসটির প্লট হুমায়ূন আহমেদ এর চলচ্চিত্র পরিচালনা ও জীবনের অনেক ঘটনার মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। উপন্যাসে দেখা যায় সুসং দুর্গাপুরের চন্ডিগড় গ্রামে ছবি বানাতে গেছেন একজন বিখ্যাত পরিচালক। ছবির নাম আমার আছে জল। বিরাট ইউনিট, বিরাট কর্মকান্ড। ছবিতে প্রথম কাজ করতে এসেছে রুমালী নামের এক কিশোরী। ছবি বানানোর এই বিপুল আয়োজন, এই বিশাল কর্মকান্ড সে দেখছে অবাক বিস্ময়ে। সে এক সময় ছবির গল্পের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করল। তার মনে হতে লাগলো সে রুমালী নয় সে আমার আছে জল-এর কিশোরী নায়িকা, দিলূ। শুরু হল বিচিত্র এক মেটামরফোসিস। রুমালীর গল্প এক অস্বাভাবিক রূপান্তরের গল্প। লাগাম-হীন তীব্র আবেগের গল্প, তীব্র হাহাকারের গল্প, অমোঘ নিয়তির গল্প। সে নিয়তির কাছেই আমাদের সকল সমর্পন।
১
একটা বড় ধরনের ভুলের জন্য মানুষের সারা জীবনের সঞ্চিত ‘শুদ্ধ’ কাজ গুলিও ভুল হয়ে যায়।
২
একটা মেয়ে যখন একটি ছেলের প্রেমে পড়ে তখন ছেলেটিকে দেখা মাত্র পিটুইটারি গ্লান্ড থেকে বিশেষ এক ধরনের এনজাইম বের হয়। সেই এনজাইমের কারণে ছেলেটি তখন যা করে তাই ভালো লাগে। তা দেখেই হৃদয়ে দোলা লাগে। ছেলেটি যদি ফোঁৎ শব্দ করে হাতের মধ্যে নাক ঝেড়ে সি’কনিতে হাত ভর্তি করে ফেলে তখনও মনে হয়– “আহারে কী সুন্দর করেই না নাক ঝাড়ছে। পৃথিবীতে তার মতো সুন্দর করে কেউ নাক ঝাড়তে পারে না।
৩
বেচারা মানে হচ্ছে নেই-চারা। বে হল নেই, কাজেই বে চারা—নেই চারা। চারা হল চারাগাছ। অর্থাৎ যার শিকর আছে। গাছ নেই মানে শিকড়ও নেই। কাজেই বেচারার অর্থ দাঁড়াচ্ছে–শিকড়হীন মানুষ।
৪
খুব বেশি পছন্দ যাকে করবে সে তোমাকে গ্রাস করে ফেলবে। কখন যে গ্রাস করবে তুমি বুঝতেও পারবে না।
৫
যাদের বিশেষ কোন গুণ থাকে না, তাদের বিশেষ কোন দোষও থাকে না।
৬
পৃথিবীর সব মেয়েদের ভেতর অলৌকিক একটা ক্ষমতা থাকে। কোন পুরুষ তার প্রেমে পড়লে মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা পুরুষদের নেই। পুরুষদের কানের কাছে মুখ নিয়ে কোনো মেয়ে যদি বলে— শোন আমার প্রচণ্ড ক’ষ্ট হচ্ছে। আমি ম’রে যাচ্ছি। তারপরেও পুরুষ মানুষ বোঝে না। সে ভাবে মেয়েটা বোধ হয় এ্যাপেনডিসাইটিসের ব্য’থায় ম’রে যাচ্ছে।
৭
গুণী মানুষের প্রেমে মেয়েরা যুগে যুগে পাগল হয়েছে। কারণ প্রকৃতির সেই পুরানো খেলা, প্রকৃতি চাচ্ছে পুরুষদের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে ‘ডি এন এ’ র মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি প্রাণপণে চাচ্ছে মানব সম্প্রদায়ের গুণগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায়। যেন প্রবাহিত হতে হতে এক সময় পূর্ণ বিকশিত হয়। তৈরি হয় অসাধারণ একটা মানব সম্প্রদায়।
৮
ইট-কাঠ-লোহার দুর্গে ফাটল ধরানো যায়—ভালোবাসার দুর্গে ফাটল ধরানো যায় না।
৯
মানুষ যখন বড় ধরনের কোন অন্যায় করে তখন সে বুঝতে পারেনা যে, সে অন্যায় করছে। বুঝতে পারলে অন্যায়টা সে করতে পারত না। তখন তার কাছে অন্যায়টা ন্যায় মনে হয়। যখন সে অন্যায়টাকে অন্যায় বলে মনে করে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
১০
যে চলে যায় সে ফিরে আসার জন্যে যায় না। তার জন্যে ভালবাসার স্বর্ন সিংহাসন সাজিয়ে রাখলেও লাভ হবে না। আর যে আসে সে সিংহাসনের জন্যে অপেক্ষা করে না।
১১
মানুষ হয়ে জন্ম নিলেই অভিনয় করতে হয়। কখনো খুশি হবার অভিনয় করতে হয়, কখনো দুঃখিত হবার অভিনয় করতে হয়। প্রেমে না পড়েও প্রেমে পড়ার অভিনয় করতে হয়। আবার প্রেম লুকিয়ে রাখার অভিনয় করতে হয়। আসলে প্রতিটি মানুষই জন্মসূত্রে পাকা অভিনেতা।
১২
কিছু সময় আছে যখন মানুষ একা থাকতে চায়, অতি প্রিয়জনের সঙ্গও তখন তার কাছে অসহ্য বোধ হয়।
১৩
ছোটবেলায় যাদের চেহারা সুইট থাকে–বড় হলে তারা ঘোড়ামুখী হয়ে যায়।
১৪
কিছুকিছু বোকামিতো সবার মধ্যেই থাকবে। হান্ড্রেড পার্সেন্ট বুদ্ধিমান বলে কিছু নেই। সব বুদ্ধিতেই খাদ মেশানো থাকে। কারো হচ্ছে আঠারো ক্যারেট বুদ্ধি, কারো বাইশ ক্যারেট।
১৫
ছেলেরা রূপবতী মেয়েদের প্রেমে পড়ে, কারন প্রকৃতি চায় পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুন্দর হয়।
১৬
মৃত্যু শোক ভোলা যায় না বলে একটা ভুল কথা প্রচলিত আছে। সবচেয়ে সহজে যে শোক ভোলা যায় তার নাম মৃত্যু শোক সবচেয়ে তীব্র শোক হচ্ছে- জীবিত মানুষ হারিয়ে যাবার শোক।
১৭
প্রাইভেট টিউশনিই ভাল।স্বাধীন ব্যবসা।চেষ্টা করবেন বড়লোক কোন মেয়ের প্রাইভেট টিউটার হতে।মেয়েটার বয়স চৌদ্দ পনের হলে ভাল হয়।এই বয়সের মেয়েরা দ্রুত প্রেমে পড়ে।কোন রকমে বরশি দিয়ে একটা প্রেম গেঁথে ফেলতে পারলে আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
১৮
ভালোবাসার দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা কোন পুরুষকে দেয়া হয় নি। সে তখনই যেতে পারে যখন তাকে যেতে দেয়া হয়। মেয়েরা তাদের চলে যেতে দেয় বলেই তারা যেতে পারে। অথচ পুরুষরা ভাবে নিজের ইচ্ছায় চলে এসেছি। এতে তারা এক ধরনের আত্মপ্রসাদ লাভ করে। মেয়েরা তাদের সেই আত্মপ্রসাদ লাভ করতে দেয়।
১৯
ভালবাসার দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা কোনো পুরুষকে দেয়া হয় নি।
১৯
দূর থেকে যে জিনিস যত সুন্দর কাছ থেকে সেই জিনিস তত অসুন্দর। দূর থেকে চাঁদ কত সুন্দর। কাছে গেলে পাথরের পাহাড়-এবড়ো-থেবড়ো, খানা খন্দ গর্ত।
২০
প্রেমে পড়া মানে নির্ভরশীল হয়ে পড়া। তুমি যার প্রেমে পড়বে সে তোমার জগতের একটা বিরাট অংশ দখল করে নিবে। যদি কোনো কারনে সে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে সে তোমার জগতের ঐ বিরাট অংশটাও নিয়ে যাবে। তুমি হয়ে পড়বে শূণ্য জগতের বাসিন্দা।