মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলাম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে ৩ অক্টোবর তিনি অবসরে যান। তিনি বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছন। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১
অভিযোগ কখনো ঘৃণা থেকে আসেনা, ভালোবাসা থেকে আসে! যার উপর যার ভালোবাসা বেশী,তার উপর তার অভিযোগ গুলোও বেশী!
২
বেঁচে থাকাটাই যদি জীবনের অর্থ হয়ে থাকে তাহলে কচ্ছপ হচ্ছে সবচেয়ে সাকসেসফুল।
৩
যাদের স্বপ্ন দেখার শক্তি, সাহস বা ক্ষমতা নেই তারা যদি অন্যদেরকেও স্বপ্ন দেখতে দিতে না চান কেন তাহলে আমি প্রতিবাদ করব না?
৪
প্রতিটা বাগানে লেখা থাকে, “ফুল ছেড়া নিষেধ” যদি ভালোবাসার মাঝেও লেখা থাকতো যে, “কারো মন ভাঙ্গা নিষেধ ” তাহলে পৃথিবীটা সত্যিই সুন্দর হতো।
৫
একটি দেশের ভবিষ্যতে ‘বিন্দুমাত্র আলো নেই’ এটি একটি অত্যন্ত কঠিন কথা। আমরা যারা বাংলাদেশে থাকি, বাংলাদেশের হৃদস্পন্দন শুনি, তারা জানি, এটি কিছুতেই সত্যি হতে পারে না! এই দেশের সমস্যার কোনো শেষ নেই- কিন্তু এ কথাটি পুরোপুরি সত্যি যে, কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক বাংলাদেশ আসলে মাথা তুলে দাঁড়াতে যাচ্ছে!
৬
শত্রুকে যদি একবার ভয় কর তবে বন্ধুকে অন্তত দশবার ভয় করিও, কারণ বন্ধু যদি কোনোসময় শত্রু হয় তখন তার কবল হইতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হইবে না।
৭
পৃথিবীতে একজন শিশুকে গড়ে তোলার যতগুলো উপায় আছে তার মাঝে সবচেয়ে সহজ আর সবচেয়ে চমকপ্রদ উপায় হচ্ছে বই পড়া। পৃথিবীতে বই পড়ে এখনও কেউ নষ্ট হয়নি, কিন্তু বই না পড়ে পুরোপুরি অপদার্থ হয়ে গেছে সে রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।
৮
ঘাতকের বুলেট তাজউদ্দীন আহমদের হৎস্পন্দনকে চিরদিনের জন্য থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাঁর হাতের ঘড়িতে ধরে রাখা বাংলাদেশের সময়টিকে কোনো দিন থামাতে পারবে না। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন তাজউদ্দীন আহমদের ঘড়ি আমাদের হৃদয়ে টিকটিক করে চলতে থাকবে। চলতেই থাকবে।
৯
একটি ছোট শিশু গভীর মনোযোগ দিয়ে আকারে তার থেকে বড় একটা বই পড়ছে এর চাইতে সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে নেই।
১০
কষ্টে সবাই থাকে কিন্তু সবাই স্ট্যাটাস দেয় নাহ।
১১
টেলিস্কোপ দিয়ে গভীর মহাকাশের দিকে তাকালে একটা বিচিত্র অনুভূতি হয়- হঠাৎ নূতন করে মনে পড়ে যায় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কত বড়, আমরা এই ছোট গ্রহটার মানুষরা কত ছোট। অথচ সেই ছোট ছোট মানুষরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে কী সাংঘাতিক মাথা- গরম করে ফেলি!
১২
ভালবাসার সময় গুলে ভাবিনী কখনো দুঃখের স্মৃতি হয়ে আমাকে এতটা দুঃখ দিবে।
১৩
সড়কে ঝুঁকি নেই সেটা আমি বলবো না, তবে কোনো সড়কই চলার অনুপযোগী অবস্থায় নেই।
১৪
একজন বিখ্যাত মানুষ দিয়ে কি হয়? কিছুই হয় না। কিন্তু একশ জন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।
১৫
বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো – মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।
১৬
অন্যের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে সময় নষ্ট না করে নিজেকে বরং উপযোগী করে তোল যাতে অন্যেরা তোমার অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে।
১৭
সুখ হচ্ছে প্রজাপতির মতো। ধরতে গেলে ধরা দেয় না কিন্তু চুপ করে থাকলে ঠিকই গায়ে এসে বসে। তাই সুখের পিছনে ছুটতে নেই।
১৮
যদি আমরা একজন মানুষকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য এই দেশে তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারি তাহলে এই দেশটি কাদের জন্য?
১৯
পাপ ছোট কি না তা না দেখে, দেখ যার অবাধ্যতা করছ তিনি কত বড়।
২০
একটা মানুষ কখনো তার প্রিয়জনের উপর রাগ করেনা। যা করে তা হচ্ছে অভিমান। আর অভিমান কখনো রাগ থেকে হয় না, হয় কষ্ট থেকে।
২১
ভালোবাসায় সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হলো সময়।
২২
মহাত্মা গান্ধি থেকে শুরু করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবাই মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছেন। তারা যদি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে থাকতেন তাহলে এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে মানুষকে বিশ্বাস করার কথা বলতে পারতেন কিনা আমি নিশ্চিত নই।
২৩
কোনো মেয়েকেই কোনো মেয়ের সাথে তুলনা করা যায় না।
২৪
ভালো থেকো – বলে চলে যাওয়ার সময় মানুষটি একটা বারও চিন্তা করে না অপর পাশের মানুষটির ভালো থাকার কারণই সে নিজে।
২৫
জীবন নামক অংকটা বড় অদ্ভুত, কখন যে সুখ গুলো বিয়োগ হয়ে দুঃখ গুলো যোগ হয়ে যায় বুঝাই যায় না!
২৬
আমেরিকার সাধারণ মানুষেরা গোমড়ামুখী নয়, তারা খুব হাসিখুশি। পথেঘাটে সুন্দরী মেয়েরা খামোখা মিষ্টি হাসি দিলেই তারা প্রেমে পড়ে গেছে ভাবার কোনো কারণ নেই।
২৭
সুন্দর মানুষ সব সময় ভালো হয়না। কিন্তু ভালো মানুষ সব সময়ই সুন্দর হয়।
২৮
একজন নারীকে কখন বেশি সুন্দর লাগে? যখন সে মা হয়ে সন্তান কে আদর করে আর প্রেমিকা হয়ে প্রেমিকের প্রতি বিরক্ত হয়। কারন এই দুইয়ে কোনো গলদ নেই।
২৯
সাদা পোশাক নয়, রঙ্গিন পোশাকে মোড়ানোও কিছু লাশ আছে, যারা জীবিত থেকেও মৃত লাশ হয়ে আছে.!
৩০
বাকস্বাধীনতা চমৎকার বিষয়। কিন্তু একটা মিথ্যা তথ্য যদি একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়, তখন সেই তথ্য প্রচার করার অধিকার বাকস্বাধীনতা নয়। তখন সেই অধিকার হচ্ছে মিথ্যা কথা বলার অধিকার।
৩১
যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।
৩২
বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
৩৩
আপনি জলাশয়ের সেই নুড়ি হতে চাইবেন, যা পরিবর্তনের জন্য তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে।
৩৪
শুধুমাত্র নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা আর সত্যিকারের বেঁচে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে!
৩৫
এলাকার অসম্ভব ডানপিটে এবং খারাপ ছেলেগুলোর ও একটা সুন্দর অতীত ছিলো।
৩৬
সরকার যদি লেখাপড়ার গুরুত্বটা বুঝে সেনাবাহিনীর বাজেট না বাড়িয়ে শিক্ষার বাজেট বাড়াত, তাহলে এই দেশে কী বিপ্লব ঘটে যেতে পারত কেউ কি কখনও কল্পনা করে দেখেছে?
৩৭
দুঃখটা এতো বেশী সস্তা যে, এটা খুব সহজে সবার কাছ থেকে পাওয়া যায়।
৩৮
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, সবাই মিলে দেশ খাই।
৩৯
চেহারা দেখে যদি মানুষ চেনা যেতো তাহলে ভুল মানুষের প্রেমে পরে কাওকে এত কাঁদতে হতো না।
৪০
যারা মদ খেতে চায় না আমেরিকানরা কখনওই তাদেরকে সেটা খেতে জোরাজুরি করবে না। তবে মদ-খাওয়া বাঙালিদের কথা আলাদা। তারা নিজেরা সেটা খায় বলে অন্যদের খাওয়ানোর জন্যে বাড়াবাড়িতে ব্যস্ত থাকে। বাঙালিদের আসরে তারা অন্য বাঙালিদের জোর করে, তাদের চাপ দেয় এবং না খেলে তাকে নিয়ে টিটকারি-ঠাট্টা-তামাশা করে।
৪১
তোমার স্ত্রীর রুচি বোধকে অবমূল্যায়ণ কর না। কারণ, সে তোমাকে প্রথম পছন্দ করেছে।
৪২
রঙিন স্বপ্ন গুলো, আজ সাদা কালো।
৪৩
কাওকে ভুল করেও জীবনের আলো মনে করা উচিৎ না। নিজের জীবনের আলোর ব্যাবস্থা নিজেকেই করতে হয়।
৪৪
আজকাল আমার নিজের ডিকশনারি থেকে ‘মেধাবী’ শব্দটা তুলে দিয়ে সেখানে ‘উৎসাহী’ শব্দটা ঢুকিয়েছি। আমি দেখেছি, উৎসাহ থাকলে সবই সম্ভব। সত্যি কথা বলতে কী, আমি আমার পরিচিত জগতের সব মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। এক ভাগ হচ্ছে যারা উৎসাহী; অন্য ভাগ হচ্ছে যাদের কিছুতেই উৎসাহ নেই, যাদেরকে ঠেলাঠেলি করে নিয়ে যেতে হয়। উৎসাহীরা পৃথিবীটাকে চালায়, বাকিরা তার সমালোচনা করে!
৪৫
মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিরাপদ মনে করা।
৪৬
অপ্রকাশিত ভালোবাসা গুলোই সুন্দর।
৪৭
কখনো কখনো দূর থেকে ভালোবাসার মধ্যে অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে। এই ভালোবাসা শুধু মাত্র তারাই বুঝবে, যারা সত্যিকারে কখনো কাউকে ভালোবেসেছে।
৪৮
পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখ কি জানো? মায়ের হাতের আদর। সবচেয়ে কষ্ট কি জানো? মায়ের চোখের পানি। সবচেয়ে অমূল্য রত্ন কি জানো? মায়ের ভালোবাসা।
৪৯
আলস্য ও অতিভোজের দরুন স্থূলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
৫০
কিছু ত্যাগ না করে কখনো কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না। অপেক্ষাকৃত ভাল কিছু পাওয়ার জন্য ভালো কিছুকে ত্যাগ করতে শিখুন।