বেগম রোকেয়ার উক্তি : ২০ টি নারীবাদী উক্তি

বেগম রোকেয়ার উক্তি : ২০ টি নারীবাদী উক্তি

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (সাহিত্যসেবী মহলে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত; ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রকৃত নাম “রোকেয়া খাতুন” এবং বৈবাহিকসূত্রে নাম “বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন”।

রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অর্ন্তগত পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়। তিনি একজন অসাধারণ নারী।১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি “বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন” নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনের মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।

১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যজগতে তার অবদান রাখা শুরু হয়। স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন।

১#

যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে। আমরা প্রথমতঃ যাহা মানি নাই, তাহা পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়া শিরোধার্য করিয়াছি। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ……ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষ রচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।

২#

না জাগিলে ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগিবে না।

৩#

আমরা যদি রাজকীয় কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে না পারি, তবে কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করিব। ভারতে বর দুর্লভ হয়েছে বলিয়া কন্যাদায়ে কাঁদিয়া মরি কেন? কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজের অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক।

৪#

ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন! মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই; বলো ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বলো কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।

৫#

কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশমাতৃকার মুক্তি অসম্ভব। (মুক্তিফল গল্প)

৬#

অশিক্ষিত স্ত্রীলোকের শত দোষ সমাজ অম্লানবদনে ক্ষমা করিয়া থাকে। কিন্তু সামান্য শিক্ষাপ্রাপ্ত মহিলা দোষ না করিলেও সমাজ কোনো কল্পিত দোষ শতগুন বাড়াইয়া সে বেচারীর দোষ ঐ শিক্ষার ঘাড়ে চাপাইয়া দেয় এবং শত কন্ঠে সমস্বরে বলিয়া থাকে স্ত্রীশিক্ষাকে নমস্কার!

৭#

আমাদের ধর্মমতে বিবাহ হয় পাত্রপাত্রীর দ্বারা। তাই খোদা না করুক বিচ্ছেদ যদি আসে, তবে সেটা আসবে উভয়ের সম্মতিক্রমে। কিন্তু এটা কেন হয় এক তরফা, অর্থাৎ শুধু স্বামীর দ্বারা?

৮#

আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।

৯#

মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হইতে পারে।

১০#

আমরা উপার্জন করিব না কেন? আমাদের কী হাত নাই, না পা নাই, না বুদ্ধি নাই? কি নাই? যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসা করিতে পারিব না?

১১#

আমরা পুরুষের ন্যায় সাম্যক সুবিধা না পাইয়া পশ্চাতে পড়িয়া আছি।

১২#

কার্যক্ষেত্রে পুরুষের পরিশ্রমের মূল্য বেশী, নারীর কাজ সস্তায় বিক্রয় হয়। নিন্মশ্রেণীর পুরুষ যে কাজ করিলে মাসে ২ টাকা বেতন পায় ঠিক সেই কাজ স্ত্রীলোকে করিলে ১ টাকা পায়। চাকরের খোরাকী মাসিক ৩ টাকা আর চাকরাণীর খোরাকী ২ টাকা।

১৩#

পর্দা অর্থে ত আমরা বুঝি গোপন হওয়া বা শরীর ঢাকা ইত্যাদি- কেবল অন্তঃপুরের চারি প্রাচীরের মধ্যে থাকা নহে। এবং ভালমতে শরীর আবৃত না করাকেই বেপর্দা বলি। যাঁহারা ঘরের ভিতর চাকরদের সম্মুখে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় থাকেন, তাঁহাদের অপেক্ষা যাঁহারা ভালমত পোষাক পরিয়া মাঠে বাজারে বাহির হন, তাঁহাদের পর্দা বেশী রক্ষা পায়।

১৪#

শিক্ষা লাভ করা সব নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু আমাদের সমাজ সর্বদা তাহা অমান্য করেছে।

১৫#

অন্তত পক্ষে বালিকাদিগকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতেই হইবে। শিক্ষা অর্থে আমি প্রকৃত সুশিক্ষার কথাই বলি। গোটা কতক পুস্তক পাঠ করিতে বা দু’ছত্র কবিতা লিখিতে পারা শিক্ষা নয়। আমি চাই সেই শিক্ষা যাহা তাহাদিগকে নাগরিক অধিকার লাভে সক্ষম করিবে, তাহাদিগকে আদর্শ ভগিনী, আদর্শ গৃহিনী এবং আদর্শ মাতা রুপে গঠিত করিবে।

১৬#

যে শকটের এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হইতে পারে না; সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণেই) ঘুরিতে থাকিবে। তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছে না। (মতিচূর প্রবন্ধগ্রন্থে নারী ও পুরুষকে এক গাড়ির দুই চাকার সাথে তুলনা প্রসঙ্গে।)

১৭#

ঐ যে চটকল আর পাটকল- এক একটা জুট মিলের কর্মচারিগণ মাসিক ৫০০-৭০০ টাকা বেতন পাইয়া নবাবী হালে থাকে, নবাবী হালে চলে, কিন্তু সেই পাট যাহারা উৎপাদন করে, তাহাদের অবস্থা এই যে, পাছায় জোটে না ত্যানা! ইহা ভাবিবার বিষয় নহে কী? আল্লাহতালা এতো অবিচার কিরুপে সহ্য করিতেছেন?

১৮#

দেহের দু’টি চক্ষুস্বরূপ, মানুষের সবরকমের কাজকর্মের প্রয়োজনে দু’টি চক্ষুর গুরুত্ব সমান।

১৯#

মুসলমান মতে আমরা পুরুষের অর্ধেক। অর্থাৎ দুইজন নারী একজন নরের সমতুল্য। অথবা দুইটি ভ্রাতা ও একটি ভগিনী একত্র হইলে আমরা আড়াই জন হই।

২০#

শিশুকে মাতা বলপূর্বক ঘুম পাড়াইতে বসিলে, ঘুম না পাওয়ায় শিশু যখন মাথা তুলিয়া ইতস্ততঃ দেখে তখনই মাতা বলেন, ঘুমা শিগগির ঘুমা! ঐ দেখ জুজু! ঘুম না পাইলেও শিশু অন্তত চোখ বুজিয়া পড়িয়া থাকে। সেই রুপ আমরা যখন উন্নত মস্তকে অতীত ও বর্তমানের প্রতি দৃষ্টিপাত করি, অমনই সমাজ বলে, ঘুমাও ঘুমাও ঐ দেখ নরক! মনে বিশ্বাস না হইলেও অন্তত আমরা মুখে কিছু না বলিয়া নীরব থাকি।

Leave a Reply