বৃষ্টি বিলাস হুমায়ূন আহমেদ এর অন্যতম জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি ২০০০ সালের একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছিলো। উপন্যাসের চরিত্র কলেজ পড়ুয়া সাধারণ এক মেয়ে শামা। একদিন কলেজ থেকে ফিরে শামা দেখলো তার বাবা অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। সাধারণত তিনি সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরেন না। আর তাকে বেশ হাসিখুশিও দেখাচ্ছিলো। ঘরের ভিতরে যাওয়ার পরে শামা তার মা সুলতানার কাছ থেকে জানতে পারলো তার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে এবং বিকালে পাত্র পক্ষের তাকে দেখতে আসার কথা। পাত্র আতাউর শামার বাবার অফিসের জুনিয়র অফিসার। বিকালে পাত্র পক্ষ শামাকে দেখতে আসে এবং শামাকে তাদের পছন্দ হয়ে যায়। সেজন্য পাত্রের চাচা শামাকে একটা আংটি এবং এক হাজার এক টাকা দিয়ে যায়। তবে এই পুরো সময়ে পাত্র আতাউর ছিলো চুপচাপ এবং সে মাথা নিচু করে বসেছিলো। তবে শামার তাকে কেমন যেনো মনে হতে লাগলো। ওদিকে শামার বোন এশা মাহফুজ নামের এক ছেলের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং অদ্ভুত কিন্তু বেশ যুক্তিযত কথা বলতে থাকে। আর এশার এসকল কথা শুনে আতাউরের জন্য ভালোলাগা জাগতে থাকে শামার মনে। ওদিকে শামার মাথায় একটু অন্যরকম চিন্তা আসে। সে তার ছোট বোন এশা সেজে আতাউরকে ফোন করে এবং আতাউরকে শামার সাথে দেখা করতে বলে। আতাউর প্রথমে দেখা করতে না চাইলেও পরে ঠিকই সময়মতো শামার কলেজের সামনে উপস্থিত হয়। দেখা হওয়ার পরে দুজনই কেমন যেন বিব্রত বোধ করতে থাকে। এই বিব্রত অবস্থাতেই তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। আতাউরকে নিয়ে বাসায় ফেরে শামা। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করার পরে বান্ধবী মীরার বিয়েতে যাওয়ার জন্য আতাউরকে নিয়ে উপহার কিনতে বের হয় শামা। উপহার কিনে শামাকে তার বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে দেয় আতাউর। অপরদিকে আতাউরের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নিতে গিয়ে শামার বাবা জানতে পারেন আতাউর মানসিক ভাবে অসুস্থ। আর এই অসুস্থতার পাত্র পক্ষ তাদের কাছে আড়াল করেছিলো। যার ফলে আবদুর রহমান সাহেব এই বিয়ে ভেঙে দেন। কিন্তু বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরেও আতাউরের জন্য শামার যে অনুভূতি জেগেছিলো সেটা কমলো না একটুও। মীরার বিয়েতে শামার সাথে পরিচয় হয় আশফাকুর রহমানের। আশফাকুররা বিশাল বড়লোক। তবে তাদের পরিচয়টা হয় এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। আর সেই আশফাকুরের সাথে শামার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায় তৃণা। তৃণা আশফাকুরের পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের রাজি করায় এবং আশফাকুরের পরিবারও শামার বাবার সাথে দেখা করতে আসতে রাজি হন। যেদিন আশফাকুরের পরিবারের শামাকে দেখতে আসার কথা সেদিন শামা তার মা কে একটা চিঠি দেখায়। চিঠিটা আতাউর পাঠিয়েছিলো শামাকে। সেখানে সে শামাকে জানিয়েছিলো তার মানসিক অসুস্থতার কারণ। সেই চিঠি পড়ে সুলতানা চুপ করে বসে রইলেন। আর শামা, মুত্তলিব সাহেবের গাড়ি নিয়ে বের হলো আতাউরের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, আতাউরের মনের বাসনা বৃষ্টি বিলাস করতে। কি হয়েছিলো শেষ পর্যন্ত? শামা কি গিয়েছিলো আতাউরের কাছে? তারা কী করেছিলো বৃষ্টি বিলাস? কি কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো আতাউর। নাকি আশফাকুরের সাথেই বিয়ে হয়েছিলো শামার? সবকিছুর উত্তর রয়েছে ‘বৃষ্টি বিলাস’ বইটিতে।
১# পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ সম্ভবত কষ্ট পাবার জন্যই জন্মায়। টাকা পয়সার কষ্ট নয়, মানসিক কষ্ট।
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
২# যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ, অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক । কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়। আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেকবেশী খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারো ভালবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারো অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায় না।
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৩# পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে। কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৪# অধিকাংশ মানুষ কল্পনায় সুন্দর, অথবা সুন্দর দুর থেকে। কাছে এলেই আকর্ষণ কমে যায়। মানুষই একই। কারো সম্পর্কে যত কম জানা যায়, সে তত ভাল মানুষ।
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৫# মিথ্যা দু’রকমের আছে। হঠাৎ মুখে এসে যাওয়া মিথ্যা, আর ভেবে চিন্তে বলা মিথ্যা। হঠাৎ মিথ্যা আপনা আপনি মুখে এসে যায়। কোনাে পরিশ্রম করতে হয় না। ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলাটাই কঠিন। এই মিথ্যা সহজে গলায় আসে না।”
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৬# আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে কিছু স্থান রয়েছে জন্য এমন যায়গা যেখানে শুধু একজন আসতে পারে।
৭# আমাদের পাশের প্রতিটি মানুষ একটা ছোট উড়ন্ত গাছ মতো, তার ওপর নতুন শাখা ছড়িয়ে আসে একের পর এক মুহূর্তে।
৮# বয়সকালেই মানুষ ছোট খাট ভুল করতে থাকে। ছোটখাটো ভুল করা যখন অভ্যাস হয়ে যায় তখন করে বড় ভুল!
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
৯# সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ মিথ্যা বলতে পারে না। মিথ্যা বলতে হয় অন্যদিকে তাকিয়ে!
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)
১০# কিছু কিছু মানুষ ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়ে, আবার কারো কারো কাছে ভাগ্য আপনি এসে ধরা দেয়।
— হুমায়ূন আহমেদ (বৃষ্টি বিলাস)