বুদ্ধদেব গুহ একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি মূলত বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখার জন্য পরিচিত। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তার জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা। পূর্বভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরংগ পরিচয়।
১#
বেশি যারা ভাবে তারা জীবনকে উপভোগ করতে পারে না।
২#
নারীদের আসলে বোধয় কোনো শ্রেণীভেদ নেই। এক নারীই বিভিন্ন পুরুষের অঙ্কশায়িনী হয়ে বিভিন্ন রাতে পদ্মিনী, হস্তিনী বা শঙ্খিনী হয়ে ওঠে।বহুরূপীর মতো।
৩#
জীবনে প্রত্যেক মানুষকে কোনো না কোনো পরিক্ষাতে হারতেই হয় অন্য প্রতিযোগিতার জন্য।
৪#
বাথরুমের আয়না আর জন্মদাত্রী মা ছাড়া আপন বলতে সংসারে মানুষের বোধয় আর কেউই থাকে না থাকার মতো।
৫#
সব পরীক্ষা শুধু যোগ্যতা দিয়ে পাশ করা যায় না।
৬#
প্রত্যেক পুরুষই শুধুমাত্র তার নিজের সমাজের নিজের রুচির, নিজের পছন্দের নারীর কাছে এসেই নিজের শরীরের বিদ্যুৎবাহী তারে হঠাত চৌম্বকত্বের সাড়া পায় । যেকোনো নারী যে-কোনো পুরুষকে জ্বালাতে পারে না, যে-কোনো পুরুষও পারে না যে-কোনো নারীকে । এইখানেই মানুষের এত দুঃখ ।
৭#
মানুষ যখন একেবারে একা থাকে তখন সে যে মানসিক স্তরে থাকে, সে আসলে ঠিক সেই স্তরেরই মানুষ । অর্থাৎ, যে মানুষ একা হলেই ইশ্বর চিন্তা করে সে ধার্মিক । যে প্রেমিকার কথা ভাবে, সে প্রেমিক। যে ছেলেমেয়ে, স্ত্রীর কথা ভাবে সে সংসারী। যে খাওয়ার কথা ভাবে সে পেটুক।
৮#
টাকার চিন্তা যে করে সে বৈষয়িক।
৯#
সৌন্দর্যের বুকের মধ্যেই অসৌন্দর্য থাকে । আর যা অসুন্দর বলে মনে হয়, তার মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে।
১০#
প্রেমের মানুষকে জীবনে কখনও পেতে নেই, প্রাপ্তিতে প্রেমকে প্রায়শই পরাস্ত করে । প্রেমের দীপ্তি চিরদিনই অম্লান থাকে তার অপ্রাপ্তিতেই।
১১#
ভালোবেসে তা অস্বীকার করাতেই পাপ। ভালোবেসে ভালোবাসার লোককে খুশি না করাই পাপ। নিজে খুশি না হওয়াও পাপ।
১২#
ঘৃণীত জনকে লাথি মারতে ইচ্ছে করলে পায়ের যন্ত্রণাই বাড়বে এবং নিরাময়ও ‘দূর- অন্ত’ হবে।লাভ আর কিছু হবে না।
১৩#
অনেকে ভাবে প্রেম গড়িয়ে গিয়ে বিয়েতে পৌঁছায়। একেবারেই না।প্ৰেম লাফাতে লাফাতে অতর্কিতে গিয়ে বিয়ের গর্তে পড়ে।
১৪#
অনেকেই বর্ষায় এফোঁড় -ওফোঁড় হয়। আমিও বর্ষাতেই হয়েছি।
১৫#
এ জায়গাটায় সকাল হয় না, সকাল আসে। অনেক শিশিরঝড়ানো ঘাসে, ভেজা পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে অনেক শখিনী নদী পেরিয়ে সোনা গলানো পোশাক পড়ে সকাল আসে এখানে।
১৬#
চোখ তো কতই দেখে,দেখল এই জীবনে। কিন্তু চোখে যা পড়ে তার সবই কি মনে ধরে?মনে যে বড়ই কম আটে।লক্ষে হয়তো একজনেরই মনে ধরে, কি ধরে না।
১৭#
হৃদয়ঘটিত দৌর্বল্য থাকে
তাদেরই যাদের হৃদয়ের উপরে
অনেকের দাবী থাকে।
১৮#
নেওয়াটা কিন্তু দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
১৯#
সুখকে ঘরবন্দি,নজরবন্দি করে রাখতে হলে কিছুমাত্রায় স্বার্থপর ওভাবাবেগ বর্জিত তোমাকে হতেই হবে।
২০#
নিজে দুঃখ না দিলে অন্য কেউই তোমাকে দুঃখী করে এমন সাধ্য আছে কার?
২১#
কাউকে সম্পূর্ণতায় চাওয়ার ভাবনাটাই হয়তো ভুল। একান্ত করে আজকের মানুষ কেউই কাউকে নিতে বা দিতে পারে না।নিজেদের টুকরো করে টুকরো-টাকরাই ভেঙে ভেঙে বার চকলেটের মতো দেয় বোধয়।
২২#
বোকা পুরুষের প্রাণের চেয়ে বুদ্ধিমতী নারীদের সতীত্বর সার্টিফিকেটের নাম অনেক বেশি।চিরদিনই।
২৩#
নারী মাত্রই নির্দয় খুনী। যখন তাদের সতীত্বের গায়ে ধুলো লাগার প্রশ্ন ওঠে।
২৪#
কী হয়, কী হলো, কী ঘটেছে তা দেখবার জন্য যে মূর্খরা দাঁড়িয়ে থাকে, জীবনে যে কোনো ক্ষেত্রে তারাই তলপেটে ছুরি খায়।তাদেরই গুলি লাগে বুকে।
২৫#
তোমার চিঠি হঠাৎ এই শীতের সকালে এক রাশ উষ্ণতা বয়ে আনলো।
২৬#
‘সব মেয়েরাই বোধহয় তার পুতুল খেলার দিন থেকে একজন আদর্শ পুরুষের স্বপ্ন দেখে। মনে মনে তখনও তার মনে প্রেম বা স্বামীর কোনো আদল গড়ে ওঠে না। সে পুরুষ শুধুই আদর্শ পুরুষ। স্বপ্নের রাজপুরুষের মতো। সে পুরুষ সেই ছোট মেয়ের বেনিয়ানের সঙ্গে মিশে থাকে, তার ফ্রকের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠে।’
(সবিনয় নিবেদন → বুদ্ধদেব গুহ)
২৭#
‘দেখাশোনা তো দিনভরই চলে, জীবনভর চলে ; জন্ম থেকে মৃত্যু, কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্যে মনের মানুষ থাকে কজন? চোখ তো কতই দেখে সকলকেই কি মনে ধরে? সারাজীবন হয়তো একজন কি দুজনকেই তেমন করে চায় মানুষ! আর যাকে বা যাদের সে চোখের চাওয়া নয়, মনের চাওয়া চায়; তারাই তো হচ্ছে মনের মানুষ!”
(মাধুকরী~ বুদ্ধদেব গুহ)
২৮#
“প্রেমে পড়লে সব লোকই বোকা হয়ে যায় এবং সবচেয়ে মজার কথা এই যে, সে-যে বোকাবোকা ভাব করে তা সে নিজেও তখন বুঝতে পারে এবং বুঝতে পেরে যতই নিজেকে চালাক প্রতিপন্ন করতে যায়, ততই সেই চেষ্টার বোকামিটা বেশি করে চোখে পড়ে।”
(একটু উষ্ণতার জন্য ~ বুদ্ধদেব গুহ)
২৯#
“ভালবাসা বড় দায়, বড় ঝুঁকি, বড় ব্যথা।
ভালবাসার সমুদ্রে ভীষণ ঝড় ওঠে।
সে ঝড়ে হারিয়ে যায় কত লোক।
কূল খুঁজে পায় না।
নৌকা ডুবে যায়।
কিন্তু তবু, সোজা, সমস্ত জোড়ের সঙ্গে দাঁড় বেয়ে তাকে চলতে হয়।”
(হলুদ বসন্ত ~ বুদ্ধদেব গুহ)
৩০#
লেখক হতে গেলে অনেক কিছুকে আত্মস্থ করতে হয়, ফাঁকিবাজি করে কিছু হয় না। ফলে এই ভরপুর জীবন আমি উপভোগ করেছি, আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি যাকে গুরু মানি প্রিয় লেখক হেমিংওয়ে বলেছেন, “ নেভার রিগ্রেট আ থিং হোয়াট ইউ হ্যাভ অলরেডি ডান”। সেটাই আমার সূত্র।”

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.