দিবারাত্রির কাব্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম লেখা উপন্যাস, প্রকাশক্রমের দিক থেকে দ্বিতীয়। উপন্যাসটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। এ উপন্যাসে অনেক নাটকীয় ও ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে : আনন্দের আত্মহত্যা, সুপ্রিয়াকে ছাদ থেকে অশোকের ফেলে দেবার চেষ্টা, অনাথ ও পরে মালতীর নিরুদ্দেশ যাত্রা। কিন্তু সবার পিছনে আছে মনস্তত্ত্বের গভীর সমর্থন। এবং যৌনতাও, যে-যৌনতা মনস্তত্ত্বেরই অংশ।
১
সুখ? নাই-বা রইল সুখ! সুখ দিয়ে কি হবে? সুখ তো শুঁটকি মাছ! জিভকে ছোটলোক না করলে স্বাদ মেলে না।
২
শরীর ভালো রাখার চেয়ে বড়ো কাজ মানুষের নেই। শরীর ভালো না থাকলে মানুষ ভাবুক হয়, দুঃখ বেদনা কল্পনা করে, ভাবে জীবনটা শুধু ফাঁকি। বদহজম আর ভালোবাসার লক্ষণগুলি যে একরকম তা বোধ হয় তুই জানিস নে?
৩
প্রেম কত দিন বাঁচে? ক দিন, এক সপ্তাহ, বড়জোর এক মাস।
৪
কোথায় কাজ? কি কাজ আছে মানুষের? অংক কষা, ইন্জিন বানানো, কবিতা লেখা? ওসব তো ভান, কাজের ছল। পৃথিবীতে কেউ ওসব চায় না। একদিন মানুষের জ্ঞান ছিলনা, বিজ্ঞান ছিলনা, সভ্যতা ছিলনা, মানুষের কিছু এসে যায়নি। আজ মানুষের ওসব আছে কিন্তু তাতেও কারো কিছু এসে যায় না। কিন্তু মানুষ নিরুপায়। তার মধ্যে যে বিপুল শূন্যতা আছে সেটা তাকে ভরতেই হবে। মানুষ তাই জটিল অংক দিয়ে, কায়দাদুরস্ত ভালো ভালো ভাব দিয়ে, ইস্পাতের টুকরো দিয়ে, আরো সব হাজার রকম জজ্ঞাল দিয়ে সেই ফাঁকটা ভরতে চেষ্টা করে। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখ, জীবন নিয়ে মানুষ কি হৈচৈ করছে, কি প্রবল প্রতিযোগিতা মানুষের, কি ব্যস্ততা!কাজ!কাজ!মানুষ কাজ করছে! বৌকে কাঁদিয়ে বৈজ্ঞানিক খুঁজছে নূতন ফরমূলা, আজো খুজছে, কালও খুজছে। দোকান খুলে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে চারিদিক ছেয়ে ফেলে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ব্যবসায়ী করছে টাকা। ঘরের কোনে প্রদীপ জ্বেলে বসে বিদ্রোহী কবি লিখছে কবিতা। কেউ অলস নয় আনন্দ, কুলি মজুর গাড়োয়ান, তারাও প্রান পণে কাজ করছে।কিন্তু কেন করছে আনন্দ?পাগলের মতো মানুষ খালি কাজ করছে কেন?মানুষের কাজ নেই বলে। আসল কাজ নেই বলে। ছটফট করা ছাড়া আর কিছু করার নেই বলে।
৫
বেশি ভক্তি করলে দেবতা চটে যান। দেবতা কী বলেন, শুনবেন? বলেন, ওরে হতভাগার দল। আমাকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তোরা একটু আত্মচিন্তা কর তো বাপু। আমাকে নিয়ে পাগল হয়ে থাকবার জন্য তোদের আমি পৃথিবীতে পাঠাইনি। সবাই মিলে তোরা আমাকে এমন লজ্জা দিস!