জোছনা ও জননীর গল্প বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে হুমায়ুন আহমেদ রচিত একটি উপন্যাস। ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে (ফাল্গুন, ১৪০০ বঙ্গাব্দ) একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশের অন্যপ্রকাশ, ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত তাঁর নিজ জীবনের এবং নিকট সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তিনি উপন্যাসিক আঙ্গিকে এতে ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তৎকালীন কিছু উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ঘটনা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে উঠে এসেছে এই উপন্যাসটিতে। প্রকাশের পর থেকে বহুবার বইটি একুশে বইমেলার সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল।
১
বয়সকালেই মানুষ ছোট খাট ভুল করতে থাকে। ছোটখাটো ভুল করা যখন অভ্যাস হয়ে যায় তখন করে বড় ভুল!
২
মেয়েরা হচ্ছে জন্মদাত্রী জননী। হাজার ভুল করলেও এদের উপর রাগ করতে নেই। এদের উপর রাগ করাটাই কাপুরুষতা।
৩
বস জাতীয় মানুষদের কাছে থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়া যায় না। যখন পাওয়া যায় তখন মনে হয় কোথাও বোধহয় সমস্যা আছে
৪
বাঙালি অদ্ভুত এক জাতি। যাদের বিশ্বাস করে, তাদের সব কথা বিশ্বাস করে। তারা যদি বলে- চিলে কান নিয়ে গেছে- কান নিয়েছে কী নেয় নি যাচায় করে না। গালের পাশে হাত দিলেই বুঝবে কান এখনো আছে। জুলপির পাশেই ঝুলছে। তারপরেও দলবেঁধে লাঠিসোটা নিয়ে ছুটতে থাকে চিলের পেছনে।
৫
পুলিশের চাকরির আসল মজা ইউনিফর্মে। দেখা মাত্র সবাই সমীহ করে তাকাবে।
৬
হাতে মশাল থাকলেই আগুন জ্বালাতে ইচ্ছা করে। হাতে তলোয়ার থাকলে কোপ বসাতে ইচ্ছা করে। বন্দুক থাকলে ইচ্ছা করে গুলি করতে। মানব চরিত্র বড়ই অদ্ভুত! আচ্ছা, কারোর হাত ভর্তি ফুল দিয়ে দিলে সে কী করবে? ফুল বিলাতে শুরু করবে?
৭
শিশুরা লজিক বুঝতে পারে। সমস্যা বড়দের নিয়ে। বড়রা লজিক বুঝতে চায় না।
৮
যারা গদ্য লেখে শিকড় গজানো তাদের জন্য সমস্যা হয় না। কবিদের জন্য হয় সমস্যা। কবিদের শিকড় থাকতে হয় না। চলমান ছন্দের মত কবিদেরও হতে হয় চলমান।
৯
যে পাখি যত সুন্দর তার কণ্ঠস্বর তত কুৎসিত। যেমন ময়ূর। সে দেখতে সুন্দর কিন্তু তার কণ্ঠস্বর কর্কশ। একমাত্র ব্যতিক্রম কাক। সে নিজে অসুন্দর, তার কণ্ঠস্বরও অসুন্দর।
১০
মানুষমাত্রই ভুল করে। তবে তার সুবিধা হচ্ছে সে ভুল শোধরাবার সুযোগ পায়।
১১
স্ত্রীরা স্বামীর যে-কোনো বিষয়ের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহকে সন্দেহের চোখে দেখে।
১২
ভয় এবং কৌতূহল বোধ হয় পাশাপাশি চলে। প্রচন্ড ভীত মানুষের কৌতূহলও হয় প্রচন্ড। এরা জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়েছে। দেখতে চেষ্টা করছে কী হচ্ছে বাইরে। কেউ কেউ চলে এসেছে বারান্দায়। চোখের সামনে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখার আলাদা মাদকতা আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে একধরনের ঘোর তৈরি হয়। মাথার ভেতরে জগাখিচুড়ির মত কিছু হয়। তখন মানুষ যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন কান্ড করে” (২৫ শে মার্চ ১৯৭১ রাত)
১৩
শিশুরা অতি সহজে অন্যের অপরাধ ক্ষমা করতে পারে।
১৪
মেয়ে ছেলের প্রাণ, কই মাছের প্রাণের চেয়েও শক্ত। যাই যাই করবে কিন্তু যাবে না!
১৫
বাঙালি গরমের ভক্ত নরমের যম। একটু নরম দেখলেই উপায় নেই- ঝাঁপ দিয়ে পড়বে। তারা যত ঝাঁপ দেবে পুলিশ তত বিপদে পড়বে। বাঙালি জাতির যত রাগ খাকি পোশাকের দিকে। পুলিশের দিকে ঢিল মারতে পারলে তারা আর কিছু চায় না।