You are currently viewing ক্ষণার বচন : খনার বচন বাছাই করা সেরা ৮০ টি বচন

ক্ষণার বচন : খনার বচন বাছাই করা সেরা ৮০ টি বচন

খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। অনেকের মতে, খনা নাম্নী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারীর রচনা এই ছড়াগুলো। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ-যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন-জীবনের সাথে মিশে আছে।

জনশ্রুতি আছে যে, খনার নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসত সদর মহকুমার দেউলিয়া গ্রামে (বর্তমানে চন্দ্রকেতুগড় প্রত্নস্থল, যেটি খনামিহিরের ঢিবি নামে পরিচিত)। তিনি ছিলেন বৈদ্য বংশজাত । এমনকি, তিনি রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের দশম সদস্য ছিলেন বলে কথিত। বরাহমিহির বা বররুচি-এর পুত্র মিহির তার স্বামী ছিল বলেও কিংবদন্তি কথিত আছে। এই রচনাগুলো পাঁচ ভাগে বিভক্ত।

সকাল শোয় সকাল ওঠে
তার কড়ি না বৈদ্য লুটে।

সবলা গরু সুজন পুত
রাখতে পারে খেতের জুত।

যদি বর্ষে মাঘের শেষ,
ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ।।
যদি বর্ষে ফাগুনে,
রাজা যায় মাগুনে।।

গরু-জরু-ক্ষেত-পুতা
চাষীর বেটার মূল সুতা।

আলো হাওয়া বেঁধো না
রোগে ভোগে মরো না।

ভাদরে করে কলা রোপন
স্ববংশে মরিল রাবণ।

গো নারিকেল নেড়ে রো
আমা টুকরা কাঁঠাল ভো।

সুপারীতে গোবর, বাশে মাটি
অফলা নারিকেল শিকর কাটি

খনা বলে শুনে যাও
নারিকেল মুলে চিটা দাও
গাছ হয় তাজা মোটা
তাড়াতাড়ি ধরে গোটা।

১০

ডাক ছেড়ে বলে রাবণ
কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।

১১

পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়
সেই বৎসর বন্যা হয়।

১২

মংগলে উষা বুধে পা
যথা ইচ্ছা তথা যা।

১৩

পুত্র ভাগ্যে যশ
কন্যা ভাগ্যে লক্ষী

১৪

বামুন বাদল বান
দক্ষিণা পেলেই যান।

১৫

সবল গরু, গভীর চাষ
তাতে পুরে চাষার আশ

১৬

নিজের বেলায় আটিঁগাটি,
পরের বেলায় চিমটি কাটি।

১৭

বেঙ ডাকে ঘন ঘন
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান।

১৮

আউশ ধানের চাষ
লাগে তিন মাস।

১৯

যদি বর্ষে গাল্গুনে
চিনা কাউন দ্বিগুনে।

২০

যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি

২১

আখ আদা রুই
এই তিন চৈতে রুই।

২২

দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
কমে না বাড়ে বারো মাস।

২৩

চৈত্রে দিয়া মাটি
বৈশাখে কর পরিপাটি।

২৪

থাক দুখ পিতে,(পিত্তে)
ঢালমু দুখ মাঘ মাসের শীতে।

২৫

কি কর শ্বশুর মিছে খেটে
ফাল্গুনে এঁটে পোত কেটে
বেড়ে যাবে ঝাড়কি ঝাড়
কলা বইতে ভাংগে ঘাড়। ”

২৬

খনা ডেকে বলে যান
রোদে ধান ছায়ায় পান

২৬

শোন শোন চাষি ভাই
সার না দিলে ফসল নাই।

২৭

যে চাষা খায় পেট ভরে
গরুর পানে চায় না ফিরে
গরু না পায় ঘাস পানি
ফলন নাই তার হয়রানি

২৮

নদীর জল ঘোলাও ভালো,
জাতের মেয়ে কালোও ভালো

২৯

পুকুরে তে পানি নাই, পাতা কেনো ভাসে
যার কথা মনে করি সেই কেনো হাসে ?

৩০

হালে নড়বড়, দুধে পানি
লক্ষ্মী বলে চললাম আমি।

৩১

গাছগাছালি ঘন রোবে না
গাছ হবে তার ফল হবে না ”

৩২

ভাত দেবার মুরোদ নাই,
কিল দেবার গোসাঁই। ”

৩৩

আগে বাঁধবে আইল
তবে রুবে শাইল।

৩৪

হাত বিশ করি ফাঁক
আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ ”

৩৫

বিশ হাত করি ফাঁক,
আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ।
গাছ গাছি ঘন রোবে না,
ফল তাতে ফলবে না।

৩৬

গাছ-গাছালি ঘন রোবে না
গাছ হবে তাতে ফল হবে না

৩৭

যদি না হয় আগনে বৃষ্টি
তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি ”

৩৮

ষোল চাষে মূলা, তার অর্ধেক তুলা
তার অর্ধেক ধান, তার অর্ধেক পান,
খনার বচন, মিথ্যা হয় না কদাচন।

৩৯

যদি না হয় আগনে পানি,
কাঁঠাল হয় টানাটানি।

৪০

খরা ভুয়ে ঢালবি জল
সারাবছর পাবি ফল।

৪১

ডাঙ্গা নিড়ান বান্ধন আলি
তাতে দিও নানা শালি

৪২

যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট
তত জ্বালে ভাত নষ্ট ”

৪৩

কাঁচা রোপা শুকায়
ভুঁইয়ে ধান ভুঁইয়ে লুটায়

৪৪

যে না শোনে খনার বচন
সংসারে তার চির পচন ”

৪৫

বার পুত, তের নাতি
তবে কর কুশার ক্ষেতি।

৪৬

শোনরে বাপু চাষার পো
সুপারী বাগে মান্দার রো৷
মান্দার পাতা পচলে গোড়ায়
ফড়ফড়াইয়া ফল বাড়ায়৷ ”

৪৭

তাল বাড়ে ঝোঁপে
খেজুর বাড়ে কোপে।

৪৮

মঙ্গলে ঊষা বুধে পা
যথা ইচ্ছা তথা যা। ”

৪৯

গাজর, গন্ধি, সুরী
তিন বোধে দূরী।

৫০

চাষী আর চষা মাটি
এ দু’য়ে হয় দেশ খাঁটি।

৫১

খনা বলে শোনভাই
তুলায় তুলা অধিক পাই

৫২

গাছে গাছে আগুন জ্বলে
বৃষ্টি হবে খনায় বলে।

৫৩

ঘন সরিষা পাতলা রাই
নেংগে নেংগে কার্পাস পাই।

৫৪

জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ভরা
শস্যের ভার সহে না ধরা।

৫৫

বারো মাসে বারো ফল
না খেলে যায় রসাতল।

৫৬

আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল
তবে খায় বহু শাইল।

৫৭

ফল খেয়ে জল খায়
জম বলে আয় আয়

৫৮

আষাঢ়ে পনের শ্রাবণে পুরো
ধান লাগাও যত পারো।

৫৯

চাষে মুলা তার
অর্ধেক তুলা তার
অর্ধেক ধান
বিনা চাষে পান

৬০

তিন শাওনে পান
এক আশ্বিনে ধান।

৬১

উত্তর দুয়ারি ঘরের রাজা
দক্ষিণ দুয়ারি তাহার প্রজা।
পূর্ব দুয়ারির খাজনা নাই
পশ্চিম দুয়ারির মুখে ছাই।।

৬২

পটল বুনলে ফাগুনে
ফলন বাড়ে দ্বিগুণে

৬৩

বিপদে পড় নহে ভয়;
অভিজ্ঞতায় হবে জয়

৬৪

ফাগুনে আগুন, চৈতে মাট
বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।

৬৫

ভাদ্রের চারি, আশ্বিনের চারি
কলাই করি যত পারি।

৬৬

লাঙ্গলে না খুঁড়লে মাটি,
মই না দিলে পরিপাটি
ফসল হয় না কান্নাকাটি।

৬৭

হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা

৬৮

সমানে সমানে দোস্তি
সমানে সমানে কুস্তি।

৬৯

যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ

৭০

সূর্যের চেয়ে বালি গরম!!
নদীর চেয়ে প্যাক ঠান্ডা!!

৭১

হইবো পুতে ডাকবো বাপ
তয় পুরবো মনর থাপ

৭২

পারেনা ল ফালাইতে
উইঠা থাকে বিয়ান রাইতে।

৭৩

আমে ধান
তেঁতুলে বান।

৭৪

চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়
তাল তেঁতুলের কিবা হয়।

৭৫

মাঘ মাসে বর্ষে দেবা
রাজ্য ছেড়ে প্রজার সেবা

৭৬

শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশার সফল।

৭৭

গাই পালে মেয়ে
দুধ পড়ে বেয়ে।

৭৮

বাঁশের ধারে হলুদ দিলে
খনা বলে দ্বিগুণ বাড়ে।

৭৯

জৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।

৮০

সোমে ও বুধে না দিও হাত
ধার করিয়া খাইও ভাত।

Leave a Reply