You are currently viewing কবি উপন্যাসের উক্তি : কবি উপন্যাসের ৪০ টি বিখ্যাত উক্তি

কবি উপন্যাসের উক্তি : কবি উপন্যাসের ৪০ টি বিখ্যাত উক্তি

একটা সময় ছিলো যখন গরীব হতদরিদ্র কিংবা নিচু বংশের কেউ ভালো কাজ কিংবা মহৎ কর্ম করে ফেললে তাকে সম্মান বাহবা কিংবা শ্রদ্ধা করার বিপরীতে হাসিতামাশা করা হতো,  অবশ্য এই অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে আমরা হারিয়ে ফেলেছি তা একেবারে বলা যায় না। এখনো সেরকম সুযোগ হলে তা আমরা প্রদর্শন করি।

গল্পের প্রধান চরিত্র নিতাইচরণ। ডোমবংশে জন্ম হয়েছে, হিন্দু সমাজে তা পতিত ও নিচু সামাজিক স্তরে। তার পূর্বপুরুষ সকলেই চুরি,ডাকাতি ও খুন পেশার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি তার পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখেন নি কারণ তিনি যে স্বভাব কবি। পারিবারিক পেশাকে ঘৃণা করে তিরস্কার করায় তার পরিবার তাকে ছেড়ে দিয়েছে। 

কবি উপন্যাসে নিতাইচরণ সারাজীবন যতেটা না পেয়েছে তার চেয়ে হারিয়েছে অনেক বেশি। এই উপন্যাসে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় হতভাগা এক কবিয়াদের জীবন তুলে ধরেছেন।

এই ব্লগে কবি উপন্যাসের সেরা কিছু উক্তি ও লাইন তুলে ধরেছি।

১#

মরণ তোমার হার হল যে মনের কাছে! ভাবলে যারে-কেড়ে নিলে সে যে আমার মনেই আছে, মনেই আছে! 

২#

শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল। 

৩#

কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?

৪#

বাংলার সমগ্র অশিক্ষিত সম্প্রদায়ই কবিগানের ভক্ত। 

৫#

কালো টিকেয় আগুন লেগেছে-তোরা দেখে যা গো সাধের কালাচাঁদ।

৬#

চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখে না চাঁদ?’ 

৭#

চাঁদ তুমি আকাশে থাক-আমি তোমায় দেখব খালি। ছুঁতে তোমায় চাইনাকো হে-সোনার অঙ্গে লাগবে কালি।

৮#

জলের বুক ক্ষুর দিয়া চিরিয়া দিলেও দাগ পড়ে না, চকিতের মতন শুধু একটা রেখা দেখা দিয়াই মিলাইয়া যায় আর ক্ষুরটাও জলের মধ্যে অদৃশ্য হইয়া যায়। তেমনি একটি মৃদু হাসি নিতাইয়ের মুখে দেখা দিয়া ওই তরঙ্গময়ী কৃশতনু মেয়েটার কলরোল-তোলা হাস্যস্রোতের মধ্যে হারাইয়া গেল।

৯#

রাজরা সময় অত্যন্ত কম এবং সংসারে গোপনও কিছু নাই। 

১০#

জীবনের অভিজ্ঞতা তাহার যত জটিল, তত কুটিল। পথচারিণী নিম্নশ্রেণীর দেহব্যবসায়িনীর রাত্রির অভিজ্ঞতা! সে অভিজ্ঞতায় নিশাচর হিংস্র জানোয়ারের মত মানুষই সংসারে ষোল আনার মধ্যে পনের আনা তিন পয়সা; সেই অভিজ্ঞতার শঙ্কায় শঙ্কিত হইয়া বসন্ত উঠিয়া বসিল। 

১১#

সংসারের তুচ্ছতম সংবাদটি পর্যন্ত ঠাকুরঝি তাহাকে বলিয়াছে। দেওয়ালে কোথায় একটি সুচ গাঁথা আছে, নিতাই সেটি গিয়া স্বচ্ছন্দে-চোখ বন্ধ করিয়া লইয়া আসিতে পারে। 

১২#

নিতাই স্তব্ধ হইয়া রহিল। সে ভাবিতেছিল ঠাকুরঝির কথা। চোখের সম্মুখে হেমন্তের মাঠে। প্রান্তরে ফসলে ঘাসে পীতাভ রঙ ধরিয়াছে, তাহার প্রতিচ্ছটায় রৌদ্রেও পীতবর্ণের আমেজ। আকাশ হইতে মাটি পর্যন্ত পীতাভ রৌদ্র ঝলমল করিতেছে। চারিপাশে দূরান্তরের শূন্যলোক যেন মৃদু কম্পনে কাঁপিতেছে বলিয়া মনে হইল। তাহারই মধ্যে চারিদিকেই নিতাই দেখিতে পাইল স্বর্ণবিন্দুশীর্ষ কাশফুল। এদিকে, ওদিকে, সেদিকে-সব দিকেই। কোনোদিকে কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিলেই মনে হইল কম্পমান দূর দিগন্তের মধ্যে একটা স্বর্ণবিন্দুশীর্ষ কাশফুল দুলতেছে কাঁপিতেছে। 

১৩#

হেমন্তের ধূসর সন্ধ্যা; সন্ধ্যার স্নান রক্তাভ আলোর সঙ্গে পল্লীর ধোঁয়া ও ধুলার ধূসরতায় চারিদিক যেন একটা আচ্ছন্নতায় ঢাকা পড়িয়াছে। ওদিকে সন্ধ্যার ট্রেনখানা আসতেছে। পশ্চিমদিক হইতে পূর্বমুখে। যাইবে কাটোয়া। সিগন্যাল ডাউন করিয়া রাজা লাইনের পয়েন্টে নীল বাতি হাতে দঁড়াইয়া আছে। অন্ধকারের মধ্যে নিঃশব্দে আসিয়া দাঁড়াইল নিতাই। 

১৪#

প্রভুর সংসারে নীচ কেউ নেই বাবা, নিজে, পরে নয়-নিজে নীচ হলে সেই ছোঁয়াচে পরে নীচ হয়। 

১৫#

অদ্ভুত দৃষ্টি বসন্তর। চোখে মদের নেশায় আমেজ ধরিলে তাহার দৃষ্টি যেন রক্তমাখা ছুরির মত রাঙা এবং ধারালো হইয়া ওঠে। আবার সুস্থ বসন্তর চোখ দেখিয়া মনে হইতেছে-এ চোখ যেন রূপার কাজললতা। 

১৬#

নিম্নশ্রেণীর দেহব্যবসায়িনী রূপ- পসারিনী তাহারা, দেহ ও রূপ লইয়া তাহাদের অহঙ্কার আছে, কিন্তু সে শুধু অহঙ্কারই-জীবনের মর্যাদা নয়। কারণ তাহাদের দেহ ও রূপের অহঙ্কারকে পুরুষেরা আসিয়া অর্থের বিনিময়ে পায়ে দলিয়া চলিয়া যায়। পুরুষের পর পুরুষ আসে। দেহ ও রূপকে এতটুকু সম্ভ্রম করে না, রাক্ষসের মত ভোগই করে, চলিয়া যাইবার সময় উচ্ছিষ্ট পাতার মত ফেলিয়া দিয়া যায়। 

১৭#

কুকুরী আর ময়ূরী, সিংহিনী আর শূকরী, শিমুলে আর বকুলে, কাকে আর কোকিলে, ওড়না আর নামাবলী, রাধা আর চন্দ্রাবলী-তফাৎ নাইক, একই। 

১৮#

নিরুত্তর লোকটা এদিক-ওদিক হাতড়াইয়া এক একটা বোতল বাহির করিয়া আগাইয়া দিল। বোতলটা হাতে করিয়াও নিতাই একবার ভাবিল-তারপর এক নিশ্বাসে খানিকটা গিলিয়া ফেলিল। বুকের ভিতরটা যেন জ্বলিয়া গেল। সমস্ত অন্তরাত্মা যেন চিৎকার করিয়া উঠিল; দুর্দমনীয় বমির আবেগে-সমস্ত দেহটা মোচড় দিয়া উঠিল, কিন্তু প্রাণপণে সে আবেগ সে রোধ করিল। ধীরে ধীরে আবেগটা যখন নিঃশেষিত হইল তখন একটা দুর্দান্ত অধীরতাময় চঞ্চল অনুভূতি তাহার ভিতরে সদ্য জাগিয়া উঠিতেছে। সে তখন আর এক মানুষ হইয়া যাইতেছে। সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীও আর এক পৃথিবী হইয়া যাইতেছে আশ্চর্য! 

১৯#

মদ সে সহজ বস্তু লয়,

চোখেতে লাগায় ধাঁধা-কারোকে দেখায় সাদা- রাজা সে খানায় পড়ে রয়।

২০#

নিম্নশ্রেণীর দেহব্যবসায়িনী; পথে পথে ব্যবসায়ের বিপণি পাতিয়া যাহাদের ব্যবসায় করিয়া ঘুরিতে হয়-লজ্জা তাহাদের থাকে না, থাকিলে চলে না। পথে নামিয়া লজ্জাকে প্রথম পথের ধুলায় হারাইয়া দিয়া যাত্রা শুরু করে। 

২১#

“পরান-বঁধুয়া তুমি,

তোমার আগেতে মরণ হউক এই বর মাগি আমি।”

২২#

(তোমায়) ভালবাসি বলেই তোমার সইতে নারি অসৈরণ, নইলে তোমায় কটু বলার চেয়ে ভাল আমার মরণ।  

২৩#

নিতাইয়ের রক্তের মধ্যে, মস্তিষ্কের মধ্যে সেদিন মদের বিশেষ স্পর্শ পাইয়া জাগিয়া ওঠে-তাহার জন্মলব্ধ বংশধারার বিষ; সমাজের আবর্জনা-স্তূপের মধ্য হইতে যে বিষ শৈশবে তাহার মধ্যে সঞ্চারিত হইয়াছিল, সে বিষ তাহার মধ্যে জাগিয়া ওঠে রক্তবীজের মত। ভাষায়-ভাবে-ভঙ্গিতে অশ্লীল কদর্য কোন কিছুই তাহার মুখে বাধে না। শুধু তাই নয়-সেদিন সে এমন উগ্র হইয়া ওঠে যে, সামান্য কারণেই যে কোন লোকের সহিত ঝগড়া বাধাইয়া তাহাকে মারিতে উদ্যত হয়। 

২৪#

তারে ভুলিব কেমনে। প্রাণ সঁপিয়াছি যারে আপন জেনে।

২৫#

ভালবাসিবে বলে ভালবাসি নে। আমার স্বভাব এই, তোমা বৈ আর জানি নে।

২৬#

রূপোপজীবিনী নারীর আজীবনের বহু ভোগের নেশা। 

২৭#

রুগ্‌ণ মেয়েগুলির দুর্দশার সীমা থাকে না। ভালবাসার পাত্র পুরুষেরা তাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করে, কেহ কেহ হয়ত দল ছাড়িয়া পলাইয়া যায়। রোগগ্রস্তা একা পড়িয়া থাকে। যেটুকু সেবা-যেটুকু যত্ন জোটে, সেটুকু করে ওই দলের মেয়েরাই। 

২৮#

ইহাদের জীবনের এই একটা অধ্যায়। এ অধ্যায় অনিবার্য, আসিবেই। মানুষের জীবনে কোন্ কালে কেমন করিয়া এ ব্যাধি অনিবার্য। শুধু অনিবার্যই নয়, এই ব্যাধিতে জর্জরিত হইয়াই সমস্ত জীবনটা কাটাইতে হয় ইহাদের। এই জর্জরতার বিষই মানুষের মধ্যে ছড়াইতে ছড়াইতে তাহারা পথ চলে। ডাক্তারও দেখায় না, কবিরাজও না। নিজেরাই চিকিৎসা করে। ধরা-বাঁধা হাতুড়ে চিকিৎসা। চিকিৎসা অর্থে-ব্যাধিটা বাহ্যিক অন্তর্হিত হয়; কিন্তু রক্তস্রোতের মধ্যে প্রবাহিত হইয়া ফেরে। ফলে ভাবী জীবনে বাহ্যিক অন্তর্হিত হয়; কিন্তু রক্তস্রোতের মধ্যে প্রবাহিত হইয়া ফেরে। ফলে ভাবী জীবনে অকস্মাৎ কোনো একটা ব্যাধি আসিয়া হতভাগিনীদের জীবনটাকে পথের ধুলার উপর আছাড় মারিয়া অর্ধমৃত করিয়া দিয়া চলিয়া যায়। সে-সব কথা ইহারা ভাবে না। এইটাই যে সে-সব ব্যাধির হেতু তাহাও তাহারা বোঝে না। শুধু ব্যাধি হইলে তাহারা সাময়িকভাবে আকুল হইয়া ওঠে। 

২৯#

বাবা মানুষের একটাই গো বাবা! সে আমার তুমি। 

৩০#

এই খেদ মোর মনে, ভালবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে। হায়! জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে? 

৩১#

পরকালে কি জবাব দেবে বল। নিতাই হাসিয়া বলিল-কোন জবাব দেব না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকব ভাই। 

৩২#

বিভিন্ন কর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার, বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থাও সে পড়িয়াছে। নিতাইকেও একদিন সেখানে যাইতে হইবে। বসন্তর সঙ্গে তাহার কর্মের পার্থক্যই বা কোথায়? তাহা সে খুজিয়া পাইল না। এবং তাহাতে সে একটা আশ্চর্য্য সান্ত্বনা পাইল। কারণ বসন্ত যেখানে গিয়াছে, সেখানেই সে যাইবে। সে হয়ত অনন্ত নরক। 

৩৩#

জীবনে যা মিটল না কো মিটবে কি হায় তাই মরণে? 

৩৪#

বোন নইলে ভায়ের দুঃখ কেউ বোঝেনা।

৩৫#

সুখ সংসারে মেলে না বাবা। যদি বিশ্বনাথ দেন তো তোমার আপন কাজের মধ্যেই পাবে। 

৩৬#

ভিখারি হয়েছে রাজা মন রে আমার দেখ রে নয়ন মেলে সাতমহলা সোনার দেউল গড়েছে সে শ্মশান ফেলে।

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.

Leave a Reply